ইউরোপিয়ান কমিশন প্রধান হিসেবে মনোনীত প্রথম নারী

টানা ৩ দিন ম্যারাথন আলোচনার পর জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ভন ডার লিয়েনকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সর্বোচ্চ পদ ইউরোপিয়ান কমিশন প্রধান মনোনয়ন দিয়েছেন সংস্থাটির নেতারা। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত লিয়েন হলেন এই পদে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রথম নারী। এই পদে মূলত ৩ জন ছিলেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু তাদের কাউকে নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছতে না পারায় অনেকটা আকস্মিকভাবেই উঠে আসে লিয়েনের নাম। অবশেষে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারেই একমত হয়েছেন ইইউ নেতারা, যদিও খোদ জার্মান জোটের মধ্যেই তার মনোনয়ন নিয়ে বিরোধিতা ছিল অনেকের। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট তার মনোনয়ন নিশ্চিত করলে তিনিই হবেন প্রথম নারী ইউরোপিয়ান কমিশন প্রধান। তিনি বর্তমান প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কারের স্থলাভিষিক্ত হবেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
লিয়েনের পাশাপাশি আরেক বড় পদেও মনোনয়ন পেয়েছেন একজন নারী।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ’র প্রধান ক্রিস্টিনা লগার্ডেকে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। বর্তমানে এই পদে আছেন মারিও দ্রাঘি, যাকে ইউরোজোন ঋণ সংকট চলাকালে মুদ্রা হিসেবে ইউরোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়। মোটাদাগে ৫টি বড় পদে মনোনয়নের জন্য সমবেত হয়েছিলেন ইউরোপিয়ান নেতারা। বেলজিয়ামের উদারপন্থি প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেলকে দেওয়া হয়েছে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন। তার মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে তিনি ডনাল্ড টাস্কের স্থলাভিষিক্ত হবেন। অপরদিকে ¯প্যানিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ বোরেলকে ইইউ পররাষ্ট্র প্রধানের পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। 
বর্তমান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট টাস্ক বলেছেন, ‘আমরা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনের পূর্বেই সকল পদ নিয়ে একমত হয়েছি।’ তিনি ৫ পদে লিঙ্গ ভারসাম্যের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, ভন দার লিয়েনের মনোনয়নের সময় জার্মানি ভোটদানে বিরত ছিল, কেননা জার্মান জোটের মধ্যেই তাকে নিয়ে বিভেদ ছিল। তবে জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেল তাকে সমর্থন দিয়েছেন। অপরদিকে জার্মান নেতা সাংবাদিকদের জানান, বার্লিনে শাসক জোটের মধ্যে হওয়া ঐক্যমতের ভিত্তিতেই লিয়েনের মনোনয়নে জার্মানি ভোটদানে বিরত থাকে। তিনি বলেন, ‘আমরা শাসক জোটের মধ্যে একমত হয়েছি যে, যদি কাউকে নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে আমরা একমত না হতে পারি, তাহলে আমরা ভোটদানে বিরত থাকবো। তবে আমরা বলতে পারি যে, এই মনোনয়ন কোনো বিরোধিতা ছাড়াই পাস হয়েছে।’
আইরিশ প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে দুই নারীর মনোনয়নের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে ইইউ নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে এ নিয়েও উদ্বেগ ছিল যে, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রতিযোগিতাকে অগ্রাহ্য করেছেন ইইউ নেতারা। ওই নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থী জার্মানির ম্যানফ্রেড ওয়েবার বা অন্যান্য নেতৃত্বস্থানীয় কাউকেই ইইউ নেতারা বেছে নেননি। ভারাদকার এক্ষেত্রে বলেন, রাজনীতিতে আপনাকে আপোষ করতেই হবে। তিনি বলেন, ওয়েবারকে হয়তো ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট বানানো হতে পারে। বুধবার পার্লামেন্টের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.