ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি সন্ধিক্ষণে by জিই চাও

গুরুত্বপূর্ণ শক্তির সম্পর্কের বহুমাত্রিক সূত্র ব্যবহার করতে সক্ষম উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে ভারত এখন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। দেশটি বিশ্বাস করে যে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এসে পড়েছে। এখন চীন তার শিল্প খাতকে গড়ে তুলছে, বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার গোলযোগপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক অন্যান্য দেশের জন্য সম্ভাবনাময় বাজার খুলে দিচ্ছে।
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি ভারতের আশায় পানি ঢেলে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত উদ্বিগ্ন যে সংরক্ষণবাদ ও একতরফাবাদ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আচ্ছন্নতায় তাদের অর্থনৈতিক উত্থানের ভরাডুবি ঘটতে পারে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের তীব্র বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে দেশের উদীয়মান শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করতে এবং তার মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের বাণিজ্য সঙ্ঘাত ও ভারতের বাজারে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য দরজা খুলে দেয়া ও কর হ্রাস করার জন্য চাপ প্রদানে সতর্ক হয়ে গেছে ভারত।
জাপানে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও নয়া দিল্লি সফর করেন। পম্পেও বলেন যে ওয়াশিংটন নয়া দিল্লির তেলের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সম্ভব সবকিছু করবে। এর আগে নয়া দিল্লি জানিয়েছিল যে ইরান ও ভেনেজুয়েলা থেকে তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে ভারত জ্বালানি সঙ্কটে পড়েছে। পম্পেও মৌখিক আশ্বাস দিলেও ভারতের জন্য ছাড় না দিলে বাস্তবে তাতে কোনো লাভ নেই।
ভারত স্বাভাবিকভাবেই নানা উৎস থেকে তেল আমদানি করতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র উদীয়মান জ্বালানি সরবরাহকারী এবং বাজারে অনাকাঙ্ক্ষিত পুলিশ। এটি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক সম্পর্কে আরো বেশি জটিল করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বা এর মিত্রদের কাছ থেকে আরো বেশি গ্যাস ও তেল কেনার জন্য ভারতকে চাপ প্রদান করার যেকোনো চেষ্টা ভারত সরকারকে ক্ষুব্ধ করবে। কারণ তেল সরবরাহ বৈচিত্র্য হ্রাস পেয়েছে এবং পারস্পরিক আস্থা কম থাকার সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভারতের কৌশলগত নির্ভরশীলতা বাড়তে পারে।
মোদি সরকারের প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সহযোগিতা আরো গভীর করা। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন কৌশলগত সহযোগিতা থেকে অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো আলাদা করে ফেলে ভারতকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করছে।
ভারত হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতায় সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য কৌশলগত সম্পদে বড় ধরনের বিনিয়োগ চায়। কিন্তু তা করতে হলে তাকে বাণিজ্য প্রশ্নে বড় ধরনের ছাড় দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে ভারত উপকৃত হয়েছে সামান্যই এবং পম্পেওর সফরকালে উদ্বেগ প্রশমনে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
অন্যদিকে ভারত-চীন বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের অর্থনৈতিক শক্তিতে উদ্বিগ্ন ভারত। আবার অবাধ ও উন্মক্ত বাণিজ্য নিশ্চিত করার ব্যাপারে চীন এখন শীর্ষ দেশ। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য সঙ্ঘাত দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও চীনের বিরুদ্ধেই ভারত সবচেয়ে বেশি এন্টি-ডাম্পিং মামলা করেছে।
চীনের সাথে ভারতের কোনো ধরনের দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অবাধ বাণিজ্য চুক্তি নেই। এটা নয়া দিল্লির অনেক আঞ্চলিক নীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে। উদাহরণ হিসেবে আরসিইপির (রিজিওন্যাল কমপ্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ) কথা বলা যায়। এটি সই হলে তা হবে বিশ্বের বৃহত্তম অবাধ বাণিজ্য চুক্তি এবং তা বর্তমানের অস্থিতিশীলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবস্থায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করবে। প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো, চীনের প্রতিযোগিতা থেকে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে রক্ষা করা।
চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে অব্যাহতভাবে অভিযোগ করছে ভারত। তারা চীনকে আরো বেশি করে ভারতীয় পণ্য আমদানি করতে বলছে। সংক্ষেপে বলা যায়, ভারত একদিকে অবাধ ও উন্মুক্ত বাণিজ্যের দৃঢ় সমর্থক নয়, অন্য দিকে অবাধ বাণিজ্য পুনঃব্যবস্থাপনা নিয়ে ট্রাম্পের একতরফা প্রয়াস থেকেও সে নিট বিজয়ী নয়। বহুমেরুবাদ নিশ্চিত করার জন্য চীনের সাথে দাঁড়াতে পারে ভারত। তাছাড়া চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করার অনেক সুযোগ আছে ভারতের।
সুখবর হলো এই যে ভারত ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য ইস্যুগুলো এখনো মোটামুটিভাবে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মূলনীতির মধ্যে। সমস্যাগুলো সামাল দেয়া হচ্ছে এবং উভয সরকারই বাণিজ্যব্যবস্থা উন্নত করার উপায় নিয়ে আলোচন করছে। তাদের বাণিজ্যের আকার শিগগিরই ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.