অবসরের বয়স বাড়াতে চায় কেন্দ্র, বাজেটের আগে ইঙ্গিত অর্থমন্ত্রী নির্মলার

আজ, শুক্রবার দেশের ভাঁড়ার দেখাবেন নির্মলা সীতারমন। ইন্দিরা গান্ধীর পর এই প্রথম কোনও মহিলা সংসদে বাজেট পেশ করতে চলেছেন। তবে বাজেটের আগেই চাঞ্চল্যকর আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করেলেন তিনি। জানালেন, দেশে গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমছে জন্মহার। তাই ভবিষ্যতের কর্মীবাহিনী তৈরি রাখতে কেন্দ্র অবসরের বয়স বাড়ানোর কথা ভাবছে। ফলে আগামিদিনে বাস্তব হতে পারে সরকারি চাকরিতে সত্তর বছরে অবসর।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০৩১-’৪১ সালের মধ্যে, অর্থাৎ আগামী দু’দশকের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৫ শতাংশের নিচে ঘোরাফেরা করতে পারে। যেমন জন্মের হার কমবে, তেমনই বাড়বে গড় আয়ু। সে কারণে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো জরুরি। কর্মক্ষম লোকের অভাব যাতে তৈরি না হয়, মূলত সেই কারণেই অবসরের বয়স বাড়ানোর ভাবনা। এদিন সংসদে আর্থিক সমীক্ষার সঙ্গে জনসংখ্যার বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র পেশ করা হয়। সেখানেই বলা হয়েছে, অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য মোটামুটি এক দশক আগে থেকেই তৈরি হতে হবে, যাতে আগামী দিনের কর্মীবাহিনী প্রস্তুত থাকে। রিপোর্টে আরও দাবি, আগামী ২০ বছরে ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জার্মানি ও ফ্রান্সের কাছাকাছি হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার কারণ হিসেবে দেশের সামগ্রিক গর্ভধারণের হার অস্বাভাবিক কমছে তা বিভিন্ন সমীক্ষায় ধরা পড়েছে বলে জানান হয়েছে। জন্মহার কমার কারণে সমস্যায় পড়বে সেই সব সংস্থা যারা ভারতের নবীন প্রজন্মকে নিযুক্ত করবে বলে পরিকল্পনা করেছে।
এমনকী, বর্তমানে যে রাজ্যগুলিতে (উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড) গর্ভধারণের হার বেশি, সেখানেও জন্মহার উল্লেখ্যযোগ্যভাবে কমবে বলে রিপোর্টে দেখা গিয়েছে। সমীক্ষার দাবি, জন্মের হার কমার ফলে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার হার ৫০% বা তার নিচে নেমে গিয়েছে। এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে ছত্তিশগড়, অসম ও ওড়িশার মতো রাজ্যেও। জন্মহার কমায় এইসব রাজ্যে স্কুল সংযুক্তিকরণের কথা ভাবা হচ্ছে। অর্থাৎ, তিনটি স্কুল একত্রিত করে একটি স্কুল হয়ে যেতে পারে। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় চলতি আর্থিক বছরে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ স্থির করা হয়েছে। ছ’বছরের মধ্যে ভারতে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারিত হয়েছে। তার জন্য অবশ্য ফি বছর জিডিপি বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ হওয়ায় বাঞ্ছনীয় বলে উল্লেখ রয়েছে সমীক্ষা রিপোর্টে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটারে লেখেন, “ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির দেশ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৯-এর অর্থনৈতিক সমীক্ষা আমাদের কাছে একটি দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি, প্রযুক্তিকে গ্রহণ এবং শক্তির ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ায় আমরা যে সুবিধাগুলো পাচ্ছি সেটাও তুলে ধরেছে।”
ভারতীয় সংসদের ইতিহাসে এই প্রথমবার পূর্ণসময়ের কোনও মহিলা অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করবেন। শুক্রবার বেলা এগারোটায় লোকসভায় নির্মলার ব্রিফকেস দেশের মানুষের জন্য কী কী বার্তা নিয়ে আসতে চলেছে, তার দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে সারা দেশই। কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের নজর রয়েছে প্রতিশ্রুতি মতো তাদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে কী পদক্ষেপ হয় সেদিকেই। কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে অর্থব্যবস্থাকে চাঙ্গা করার মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নির্মলা তার কতটা মোকাবিলা করতে সমর্থ হবেন সে জবাব কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিলবে। বাজেটে সামাজিক বিষয়গুলির উপর নজর দেওয়া হবে। গতবারের মোদি সরকারের ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর মতো এবার সবার জন্য পানীয় জল সংক্রান্ত প্রকল্প ঘোষণা হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। অর্থনীতিতে গতি আনতে মানুষের হাতে নগদ রাখার চেষ্টা হতে পারে। মানুষের হাতে টাকা বেশি থাকলেই তারা বেশি কেনাকাটা করবে বলেই মনে করা হয়। সেক্ষেত্রে আয়করের ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়ারর সম্ভাবনা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.