বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পছন্দ করি না

বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন জানার পর হাইকোর্ট বিচারবহির্ভূত হত্যা কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন। একইসঙ্গে আদালত বলেন, নয়ন বন্ডরা একদিনে তৈরি হয়নি, কেউ তাকে লালন করেছে। গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন। এ সময় আদালত বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সতর্ক হতে বলেন।
আদালতে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে আদালতকে জানান, এ মামলায় ১২ জন এজাহারনামীয় আসামি আছেন। তার মধ্যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আত্মরক্ষার স্বার্থে গুলি ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। ঘটনাস্থলে একজন আসামি নয়ন বন্ড বলে চিহ্নিত করেন।
আরো জানানো হয়, এজাহারভুক্ত ৫ এবং সন্দেহভাজন ৪ জনসহ মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রিফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মামলার ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী (২৩), ৪ নম্বর আসামি চন্দন (২১), ৯ নম্বর আসামি মো. হাসান (১৯), ১১ নম্বর আসামি মো. অলিউল্লাহ অলি (২২) ও ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় (২১)। সন্দেহভাজন গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. নাজমুল হাসান (১৯), তানভীর (২২), মো. সাগর (১৯), কামরুল হাসান সাইমুন (২১) ও রাফিউল ইসলাম রাব্বি। এজাহারভুক্ত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তখন আদালত বলেন, আমরা কখনই নির্বাহী বিভাগের যেসব দায়িত্ব পালন করার কথা সেসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। এটা তাদের দায়িত্ব, তাদের রুটিন ওয়ার্ক। যদি সেখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটে তখনই শুধুমাত্র বিচার বিভাগ নির্দেশনা বা হস্তক্ষেপ করে থাকে। তবে আমরা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং পছন্দ করি না। হয়তো প্রয়োজনের খাতিরে অনেক সময় জীবন বাঁচানোর তাগিদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করে থাকে। তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে আরো সতর্ক হতে হবে। আইন যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে সেটা যেন নিশ্চিত হয়। আদালত আরো বলেন, একদিনে এই নয়ন বন্ডরা তৈরি হয় না। কেউ না কেউ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। কেউ না কেউ তাদের লালন-পালন করে ক্রিমিনাল বানায়।
পরে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। উনারা একটি প্রতিবেদন মহামান্য হাইকোর্টে দাখিল করেছেন। আমরা মহামান্য আদালতের কাছে সে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছি। এ বিষয়ে সার্বিক অগ্রগতি অবহিত করেছি। এ মামলায় ১২ জন এজাহারনামীয় আসামি আছেন। তার মধ্যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। নয়ন বন্ড নামে একজন আসামি ঘটনাস্থলে গুলিতে মারা যান। এ পর্যায়ে আদালত নয়ন বন্ড কিভাবে মারা গেল তা জানতে চায় বলে জানান তিনি। আমরা জানিয়েছি পুলিশের কাছে গোপন সংবাদ ছিল আসামিরা সেখানে অবস্থান করছেন। পুলিশ সেখানে গিয়েছে এবং পুলিশের উপরে প্রথমে অতর্কিতভাবে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। তখন পুলিশ নিজেদের জীবন বাঁচনোর জন্য পাল্টা গুলি চালালে সেখানে একজন মারা যান। ইতিমধ্যে এলাকাবাসী সেখানে ছুটে আসে। এলাকাবাসীই প্রথম নয়ন বন্ডকে শনাক্ত করে। তারপর তারা জানতে পারেন নিহত ব্যক্তিই নয়ন বন্ড ছিল। সেখানে তার গ্রুপ ০০৭ এর অন্যান্য সদস্যরা ছিল। এ সময় আদালত বিচার বহির্ভূত হত্যা কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে আদালত এমন মন্তব্যও করেন, নয়ন বন্ডরা একদিনে তৈরি হয়নি। কেউ তাকে লালন করেছে। বিচার বহিভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সতর্ক হতে বলেছেন।
গত ২৬ মার্চ বরগুনা শহরে প্রকাশ্যে সড়কে স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবক রিফাতকে। ওই ঘটনার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজল বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন। এরপর আদালত মামলার অগ্রগতি শুনতে বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.