কাশ্মীর কি আগামীতে আরও সহিংসতার পথে চলেছে?

এটা কি জঙ্গিবাদের শেষ ধাপ যাদের নেতৃত্বকে গত দুই বছরে ধ্বংস করেছে নিরাপত্তা বাহিনী? না কি এটা সহিংসতার নতুন ধাপের সূচনা যেটা আরও বিপজ্জনক এবং আরও ভয়াবহ? কোন মতটা টিকে থাকবে, সেটা বলাটা কঠিন, কিন্তু এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, কাশ্মীরে সহিংসতার মাত্রা আগের সব সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে গত কয়েক মাসে হতাহতের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে।
গত এক সপ্তাহে নয়জন সেনা হারিয়েছি আমরা। এর মধ্যে পুলিশ পোস্টে হামলা হয়েছে, সামরিক সেনাবাহী যানবাহনে বিস্ফোরক নিয়ে হামলা করা হয়েছে এবং জঙ্গি ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে সেনাবাহিনীর একজন মেজর নিহত হয়েছেন। ১১৫ জন জঙ্গিকে নির্মূল করার পরেও এটা ঘটেছে। একটি মত এমন যে, জঙ্গিবাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে এবং অস্তিত্ব রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে মরিয়া হয়ে হামলা করছে তারা।
অন্যদিকে, যে মতটি বেশি জনপ্রিয়, সেটা হলো জঙ্গিদের সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয়রা আরও বেশি সংখ্যায় তাদের সাথে যোগ দিচ্ছে, সীমান্ত দিয়ে বিদেশীরাও এসে যোগ দিচ্ছে তাদের সাথে। কৌশলেও পরিবর্তন এসেছে তাদের। জঙ্গিরা এখন এমনকি ইনফর্মারদের উপরেও হামলা করে তাদেরকে হত্যা করছে। তারা শুধু বেসামরিক সন্দেহভাজন ইনফর্মারদের উপরেই হামলা করছে না, বরং যে সব সেনা সদস্য, পুলিশ সদস্য, নিরাপত্তা রক্ষী এবং আঞ্চলিক সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত জওয়ানরা ছুটিতে আছেন, তাদের উপরেও তারা হামলা করছে।
সেনা বিশেষজ্ঞদের মতে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইটা আগের চেয়ে ভয়াবহ হয়ে গেছে, কারণ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা যে আইইডি ব্যবহার করে, সেটার ব্যবহার শুরু করেছে তারা, যার মধ্যে গ্রেনেড ও রোড মাইনের মতো অস্ত্র রয়েছে। এ জন্য যে সব বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, তাদের কৌশলেও পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন, মাইন চিহ্নিত করার মতো সরঞ্জাম আরও বেশি লাগবে, যানবাহনগুলোকে আপগ্রেড করতে হবে যাতে সেগুলো নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে এবং বাহিনীর সদস্যদেরকেও বাড়তি প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
এ জন্য অনেক বিনিয়োগ ও সময় লাগবে। এটা বিতর্কের বিষয় যে শুধু শক্তি প্রয়োগেই সমস্যার সমাধান হবে কি না। যে সব সংগঠন সহিংসতায় জড়িত নয়, তাদের সাথে আলোচনার কোন প্রক্রিয়া শুরু করলে, সেটা সহিংসতা কমাতে কোন সহায়তা করবে কি না? পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা কমানোর জন্য আমাদের কি আলোচনা শুরু করা উচিত নয়?
এটা কি একটা বাস্তবতা নয় যে, যে বছরগুলোতে ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য ও ভ্রমণকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল, সে সময় কাশ্মীর যথেষ্ট শান্ত ছিল?
আজকের কঠিন বাস্তবতা হলো যখনই নিরাপত্তা বাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে কোন সংঘর্ষ হচ্ছে, বিপুল সংখ্যক সাধারণ নাগরিক সেখানে জড়ো হয়েছ পাথর ছুড়ছে, ফলে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য এখনই যে পদক্ষেপটা নেয়া দরকার, সেটা হলো জম্মু ও কাশ্মীরে রাজ্য নির্বাচনের আয়োজন করা, যাতে সেখানে জনগণের ভোটে একটা সরকার গঠিত হয়। হুররিয়াত নেতারা একটা বার্তা দিয়েছেন যে, আগামী মাসে অমরনাথ যাত্রায় যে সব তীর্থযাত্রীরা আসবেন, তারা স্থানীয়দের কোন হুমকির মুখে পড়বে না। এই তীর্থযাত্রাকে সফল করার জন্য আমরা সবসময় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছি। কাশ্মীরের সংখ্যালঘুদের আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই যে উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন।
লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। দেশে কি এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার সময় আসেনি? বিতর্কিত ইস্যুগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে ভারতের বড় চ্যালেঞ্জগুলোকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় কি আসেনি?

No comments

Powered by Blogger.