আসপাডা শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে অসহায় ও হতদরিদ্র ১১৮ শিক্ষার্থী এখন আলোর পথে by সাইফুল মাহমুদ

আমি হয়তো ঝরে যেতাম না; কিন্তু দিনে একবেলা না খেয়ে থাকতে হতো। অথচ সেই আমি এখন মেডিক্যালে পড়ি। এটা আমার কাছেই স্বপ্ন মনে হয়।
আসপাডার শিক্ষাবৃত্তি না পেলে এত দূর আসতে পারতাম না।’ কথাগুলো ময়মনসিংহ মেডিক্যালে সদ্য ভর্তি হওয়া হতদরিদ্র শিক্ষার্থী তারেকের (ছদ্মনাম)। বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের আসপাডা ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে এভাবেই তুলে ধরেন শৈশবের কথা। পিনপতন নীরবতার মধ্যে তারেক বলেন, ‘আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন বাবা ছিলেন শয্যাশায়ী। আর মা অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করতেন। মা স্বপ্ন দেখতেন, ‘আমি অনেক বড় হবো। আমাকে ভালুকার পাড়াগাঁও এতিমখানা মাদরাসায় ভর্তি করে দেন। ২০০৫ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পাই। খাতা-কলম কেনা বা বিনা বেতনে অধ্যয়নের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে এক রকম হাত-পা ধরে ‘হাফ’ বেতন দেয়া হয়েছে।

অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র বৃত্তি পাই। পড়ালেখার খরচ মেটাতে অনেকের সহায়তা চেয়েছি; কিন্তু কেউ করেননি। বাধ্য হয়ে সিডস্টোর বাজারে দৈনিক ১০০ টাকা হাজিরায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেছি। কাস করার কারণে মজুরি দেয়া হতো অর্ধেক। এমনি অবস্থায় পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে প্রতিবেশীর পরামর্শে ছুটে যাই আবদুর রশিদ স্যারের কাছে। তিনি সব কথা শুনে আমার পড়ালেখার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর আমি এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাই। এবার মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছি।’ ময়মনসিংহ শহরের একটি আবাসিক হোটেলের স্বল্প বেতনভুগি এক কর্মচারীর মেধাবী মেয়ে জান্নাত (ছদ্মনাম) এসএসসিতে গোন্ডেন জিপিএ ৫ পায়। কিন্তু কলেজে পড়ানোর আর্থিক সামর্থ্য নেই তার বাবার। সহপাঠীর পরামর্শে বাবা-মাকে নিয়ে ছুটে যান আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেনের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদের কাছে। মেয়ের পড়ালেখার জন্য সহায়তা চাইলে তিনি মাসিক দ্ইু হাজার টাকা বৃত্তি দেন। মেয়ে এইচএসসিতে গোন্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে এবার খুলনা মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে। মেডিক্যালের খরচ মেটাতে বৃত্তির অর্থ বৃদ্ধির আবেদন করলে যাবতীয় খরচ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন দানবীর আবদুর রশিদ। প্রবাসী স্বামীর সাথে তিন বছর আগে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর অন্ধ শামীমার অভাব অনটনের সাথে শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। দিন কাটে অর্ধাহারে অনাহারে। সংসার চালাতে অন্ধ শামীমা একটি বীমা কোম্পানির মাঠকর্মী হিসেবে যোগ দেন। এখান থেকে যা আয় করেন তাতে সংসারই ভালোভাবে চলে না। অর্থাভাবে একমাত্র ছেলের পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম হলে প্রতিবেশীর পরামর্শে শিক্ষানুরাগী আবদুর রশিদের কাছে যান। তিনি ওই ছেলের পড়ালেখার দায়িত্ব নেয়ায় ‘হাঁফ’ ছেড়েছেন অন্ধ শামীমা। এখন স্বপ্ন দেখছেন ছেলেকে ডাক্তার বানানোর।

ওই কর্মশালায় বন ও পরিবেশ উপসচিব ড. এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফউদ্দিন খান, আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো: আবদুর রশিদ, ময়মনসিংহ প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম মোস্তফা, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আতাউল করিম খোকন, ময়মনসিংহ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামসহ বৃত্তিপ্রাপ্ত ১১৮ ছাত্রছাত্রী, তাদের অভিভাবক, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এমনই আরো অনেকেই তাদের জীবনকথা ও অতীত কাহিনী বলছিল ওই কর্মশালায়। পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে উপস্থিত সবাই আলোর পথের যাত্রীদের এগিয়ে যাওয়ার কথা শুনছিলেন। এ সময় অনেকেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

সভাপতির বক্তব্যে আসপাডার প্রধান নির্বাহী পরিচালক মো: আবদুর রশিদ বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ের মেধাকে লালন করতে হবে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে দরিদ্র পরিবারের মেধাবীরা অকালেই ঝরে পড়ছে। ফলে জাতি হারাচ্ছে মেধাসম্পন্ন সুনাগরিক। এ জন্য ‘মেধা ঝরতে দেবো না, অর্থের অভাব হবে না’ এ নীতি ধারণ করে আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন অসহায় ও হতদরিদ্র মেধাবীদের জন্য ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের কর্মসূচি গ্রহণ করে। বর্তমানে হতদরিদ্র ১১৮ মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে প্রতি মাসে তিন লাখ ১৮ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১ জন মেডিক্যালে, ১৮ জন ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়ে, ৬ জন বুয়েটে, দুইজন ক্যাডেট কলেজে ও ২৫ জন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তাদের শিক্ষাজীবনের শেষ ধাপ পর্যন্ত বৃত্তি প্রদান করা হবে, যাতে অর্থের অভাবে কারো লেখাপড়া বন্ধ করতে না হয়। তিনি আরো জানান, আমার কোনো দাবি নেই। তবে শর্ত রয়েছে, বৃত্তিপ্রাপ্তরা চাকরি পাওয়ার পর প্রত্যেকেই একজন করে অসহায় ও হতদরিদ্র মেধাবীকে পড়ালেখার খরচ বহন করবেন। যাতে সে মনে করে তার বৃত্তির ঋণ শোধ হয়ে গেছে। মেধা লালন ও বিকাশে আসপাডার সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। !8″i�� �� oman”;mso-ansi-language:EN-US;mso-fareast-language: EN-US;mso-bidi-language:AR-SA’> পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে হামহাম জলপ্রপাত। এই শীত মওসুমে হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটকেরা ভিড় করছেন হামহামের সৌন্দর্যকে দেখার জন্য। সরকার একটু নজর দিলে হামহাম জলপ্রপাতটি হয়ে উঠবে পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থানে।

No comments

Powered by Blogger.