স্মরণঃ অ্যাডভোকেট বদিউল আলম by মীযানুল করীম

আজ দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী, লেখক, রাজনীতিক ও সমাজসেবী অ্যাডভোকেট বদিউল আলমের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি ৭৭ বছর বয়সে চট্টগ্রামে ইন্তেকাল করেন।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, মওলানা মনিরুজ্জমান ইসলামাবাদী, প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম প্রমুখের জন্মস্থান, চট্টগ্রামের তৎকালীন পটিয়া থানার ফতেনগর গ্রামে বদিউল আলমের জন্ম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৪৬ সালে গ্র্যাজুয়েশন অর্জনের পর ডিগ্রি লাভ করেন আইন বিষয়ে। তিনি আইনজীবী হিসেবে বিপুল খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন। আজকের এই দিনে আমরা তার মাগফিরাত কামনা করি। বাল্যজীবনে বামপন্থী সংগঠনে জড়িত থাকলেও পরে ঐতিহাসিক পাকিস্তান আন্দোলন এবং ’৪৭-এর স্বাধীনতার পর তমদ্দুন মজলিসের চিন্তাধারায় প্রভাবিত হন মরহুম বদিউল আলম। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে একপর্যায়ে দলের বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা সভাপতি ছিলেন। ষাটের দশকে গোটা চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাত্র ছয়জন ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের। তিনি তাদের একজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হলে তারা অর্থ সংগ্রহ করেন খরচ চালানোর জন্য। চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার বিবাহোত্তর একমাত্র সংবর্ধনার আংশিক ব্যয়ভারও তিনি বহন করেন। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানকালে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ আজিজ স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে গ্রেফতার হন। তার জামিনের এক লাখ টাকার জন্য বদিউল নিজের জমির দলিল পেশ করেন আদালতে। ফলে আজিজ মুক্তি পান। ’৭০-এর সংসদ নির্বাচনে পটিয়া থেকে তাকে দলের প্রার্থী করা হলেও তিনি পেশাগত কারণে অক্ষমতা প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে অর্থ সংগ্রহসহ নানাভাবে তৎপর থাকায় তখন দুইবার গ্রেফতার হন। এর আগে ২৫ মার্চের কালরাতে মেজর জিয়ার (পরে রাষ্ট্রপতি) ফোন পেয়ে বদিউল আলম দুই সন্তানসহ বেগম খালেদা জিয়াকে চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে শহরে নিরাপদ স্থানে পৌঁছিয়ে দেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অযোগ্যতা দেখে আরো অনেকের মতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় বিরোধী দল জাসদ প্রতিষ্ঠায় অংশ নিয়ে জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তবে পরে তিনি রাজনীতি থেকে সরে আসেন এবং উদ্বুদ্ধ হন ইসলামি মূল্যবোধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে। দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্ব, মরহুম বদিউল আলম বর্ণাঢ্য ও কর্মমুখর জীবনে অনেক সংগঠনের সাথে ছিলেন সম্পৃক্ত। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি ও সম্মিলিত পেশাজীবী সংসদের সভাপতি ছিলেন। আমৃত্যু নেতৃত্ব দিয়েছেন ন্যাশনাল সলিডারিটি কাউন্সিলের। বহুলালোচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘু প্রসঙ্গসহ ১২টি বই লিখেছেন তিনি। সফর করেছেন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ।
       


No comments

Powered by Blogger.