রায়ে মানুষের আকাঙ্খা বিবেচনায় নেয়ার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

যুদ্ধাপরাধীদের মামলার রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে মানুষের আকাঙ্খা বিবেচনায় নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিচারের রায় দেবে ট্রাইব্যুনাল।
আইন দেখে তারা চলবেন। তবে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা যেন বিবেচনায় নেয়া হয় সেটা আমাদের অনুরোধ থাকবে। একইসঙ্গে শাহবাগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংসদের পক্ষ থেকে একাত্মতা ঘোষণা করেন তিনি। বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলা বিচারের ক্ষেত্রে আইনগত কোন দুর্বলতা থাকলে প্রয়োজনে তা সংশোধন করা হবে। এজন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সবার সহযোগিতা চাই। রায় যেন কার্যকর হয় সেজন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। আজ সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ২৩ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন,আন্দোলনকারীরা যেসব শপথ পাঠ করেছে তার প্রতিটি বাক্য অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। তাদের শপথ বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার আমরা তা করবো। এর আগে সংসদে মহাজোটের ৩২ এমপি শাহবাগ স্কয়ারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের  সময় নির্দিষ্ট করে আন্দোলন করার পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে তিনি শাহবাগ স্কয়ারের পরিবর্তে তরুন প্রজন্ম স্কয়ার নাম দেয়ার পরামর্শ দেন। আন্দেলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, লেখাপড়াসহ প্রয়োজনীয় কাজ করার পাশাপাশি আন্দোলনও চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, তরুণ প্রজন্ম আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেভাবে জেগে উঠেছে তাদেরকে সংসদের মাধ্যমে সবার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। তাদের দোয়া করি। তিনি বলেন, শাহবাগে অদ্ভুত, অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। এ জাগরণ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দল, মত নির্বিশেষে সব শ্রেণী পেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন দিয়ে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শেষ করে যাবো। যুদ্ধাপরাধ, রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের ঠাঁই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। তাদের বিচার এদেশের মাটিই হবেই। তিনি বলেন, এখন আমি স্বস্তি ও শান্তিতে মরতে পারব। নতুন প্রজন্মের সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে- তা দেখে আমার স্বস্তি যে এতোদিনের আমার আন্দোলন-সংগ্রাম ও পথচলা সার্থক হয়েছে। এখন আমার মৃত্যু হলেও শান্তি পাব। বাংলাদেশ সঠিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। আন্দোলনরতদের পক্ষ থেকে দেয়া স্মারকলিপির দাবির সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্ম স্পীকারের কাছে যে স্মারকলিপি দিয়েছে সেখানে থাকা সকল দাবির সঙ্গেও জাতীয় সংসদের প্রতিটি সংসদ সদস্য একমত। নতুন প্রজন্মের সন্তানরা গণজাগরণ সৃষ্টি করে সারা বাংলাদেশের ঘুমন্ত মানুষকে যেভাবে জেগে তুলেছে, তাদেরকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই- বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। এই নতুন প্রজন্মরাই আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দেবে। এই নতুন প্রজন্মরাই বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচনের আগে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবো। ক্ষমতায় এসেই আমরা সংসদে আইন পাস করি। মার্শাল অর্ডিন্যান্স জারি করে জেনারেল জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই অর্ডিন্যান্স সংশোধন করে ২০১০ সালে আমরা সংসদে আইন পাস করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করি। আজ বিচারের রায় প্রদান শুরু হয়েছে। শাহবাগের গণবিষ্ফোরণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার দৃশ্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সারাবিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির না ঘটলে নতুন প্রজন্মরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারতো না। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আজ অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি করেছে। তা সারাদেশে বাংলাদেশে আজ ছড়িয়ে পড়েছে। কোন দল বা গোষ্ঠী নয়, দলমত নির্বিশেষে সবাই আজ স্বাধীনতার চেতনায় জেগে উঠেছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনর্প্রতিষ্ঠা করতে গত ৩০/৩৫ বছর ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও বার বার আমাকের হত্যার প্রচেষ্টার পরও পিছপা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস যেন দেশের প্রতিটি মানুষ জানতে পারে, স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে আমার দীর্ঘ সংগ্রাম আজ সার্থক হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.