বিএনপির মিছিলে মির্জা ফখরুল- আবার বাকশালী প্রেতাত্মার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে

দেশে গণতন্ত্র থাকবে কী থাকবে নাÑ বর্তমানে এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,
দলীয় নির্বাচন করে সরকার ভিন্ন লেবাসে আবার একদলীয় শাসনব্যবস্থার পাঁয়তারা করছে। আবার বাকশালী প্রেত্মাতার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

গতকাল বিকেলে এক বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ মিছিল হয়। পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় শুক্রবার রাতে ১৮ দলীয় জোটের গতকালের সমাবেশ স্থগিত করে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, এক দিকে সরকার বিরোধী দলকে সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। অন্য দিকে তারা নিজেরা কর্মসূচি করছে। সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করছে।

এই অবস্থার উত্তরণে আগামীতে গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ফখরুল।

মহানগরসহ যুবদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর একটি মিছিল মৌচাকে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে মহানগর আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা, সদস্যসচিব আবদুস সালামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নির্দলীয় সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন কর্মীরা। ফকিরেরপুল মোড় থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত নয়াপল্টন সড়কে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিত দেখা গেছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, দেশে আজ আইনের শাসন নেই বললে চলে। খুন হয়, বিচার নেই। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুন হয়েছেন। এখনো বিচার হয়নি। অনেকে গুম হচ্ছেন, সরকারের সে দিকে কোনো নজর নেই। তারা সারা দেশে বিরোধী দলের ওপর স্টিমরোলার চালাচ্ছে। কেবল তাই নয়, বিচার বিভাগ ও প্রশাসন দলীয়করণ করা হয়েছে। কোথাও সুবিচার পাওয়া যায় না।

সরকারের অপশাসন ও দুর্নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এক আবুলকে (সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন) বাঁচাতে সরকার পদ্মা সেতুর দুর্নীতি সঠিক তদন্ত না করে বিশ্বব্যাংকের সাথে সম্পর্ক খারাপ করেছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করেছে।

শহীদ রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের দল অভিহিত করে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আজ এই দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে ওই ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অভিযোগ করেন, সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়ারও পাঁয়তারা চলছে।

নির্দলীয় সরকারের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখনই এই দাবিতে মানুষ সোচ্চার হয়, তখনই সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে আসতে চায়। আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন আন্দোলন তৈরি করতে হবে, যাতে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে সরকার বাধ্য হয়।

মহানগর আহ্বায়ক ও দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক ছাত্র নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুবদলের সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের হাবিব- উন-নবী খান সোহেল, মীর সরফত আলী সপু, মহিলা হলের শিরিন সুলতানা, ওলামা দলের হাফেজ আবদুল মালেক, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রফিক শিকদার, ছাত্রদলের আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

মিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির সাথে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিকেও সম্পৃক্ত করার জন্য শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের আন্দোলকারীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা।

তিনি বলেন, শাহবাগে তরুণদের আহবানে সমাবেশ চলছে। সেখানে তারা বিভিন্ন দাবি তুলেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল হিসেবে আমরা তাদের আবেগের প্রতি সম্মান করি। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের বিচারের সাথে নির্দলীয় সরকারের দাবিটিও সম্পৃক্ত করার জন্য আমি তাদের প্রতি বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।

শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের প্রতি প্রশ্ন রেখে খোকা বলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতি বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হচ্ছে। হলমার্ক, র্পুজিবাজার ও পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি করে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করেছে। এসবের বিরুদ্ধেও কথা বলতে হবে। একজন তরুণ বিশ্বজিৎ দাস কিভাবে হত্যা হয়েছে তার বিরুদ্ধে ওই সমাবেশে কথা বলতে হবে। শেখ হাসিনা একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে চান। এর বিরুদ্ধে দেশবাসীর সাথে তরুণদেরও সোচ্চার হতে হবে। সমাবেশে এসব বিষয়ে কথা বলা চাই।

No comments

Powered by Blogger.