হার মানে কাঁটাতারের বেড়া, বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো মানুষ- পঞ্চগড় সীমান্তে দুই দেশের নাগরিকদের মিলনমেলা by এ রহমান মুকুল

সীমান্তবর্থী প্রত্যন্ত্ এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ভারত-বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যতিক্রমধর্মী এক মিলনমেলা। দু'দেশের সীমান্তবরী বাহিনী, কাঁটাতারের বেড়া এবং সীমান্ত আইন তাদের এই মিলনমেলায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

রবিবার দুপুর একটায় ভারতীয় বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুলে দিলে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো ভারতীয় নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধরা বাংলাদেশী এলাকায় প্রবেশ করে। এপারেও আগে থেকেই অপোয় ছিল হাজারো বাংলাদেশী। এক সময় তাঁরা মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। এর থেকে বাদ যায়নি দু'দেশের সাংবাদিকরাও। তাঁরাও পরিচিত হয়েছেন একে অপরের সঙ্গে। করেছেন কুশল বিনিময়। ভারতীয় দৈনিক জাগরণের অভিজিৎ বোস, ডিডি বাংলার সুদীপ মজুমদার, জলপাইগুড়ি প্রেসকাবের সেক্রেটারি শানত্মনু কর, সংবাদ প্রতিদিনের প্রদীপ সাহা বাংলাদেশের পঞ্চগড় প্রেসকাবের সভাপতি এ রহমান মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবুর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এছাড়াও জলপাইগুড়ির কংগ্রেস দলীয় বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় এবং বাংলাদেশের পঞ্চগড়-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মজহারম্নল হক প্রধানের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় দুই সংসদ সদস্যই বলেন, কাঁটাতারের বেড়া মানুষের মনের কাছে হার মেনেছে। ভালবাসার যে সুদৃঢ় বন্ধন সেটা আবারও প্রমাণ হয়েছে।
আর ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে আসা নমিতা রানী (৫০) বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়ায় বসবাসকারী মেয়ে ছবি রানীকে (২৮) পেয়ে আবেগে আপস্নুত হয়ে ওঠেন। ৪ বছর পর মা-মেয়ের সাাত হওয়ায় তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এছাড়া ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন তাদের ভারতীয় আত্নীয়স্বজনদের সঙ্গে সাাত করতে আসেন। জঙ্গী বোমাতঙ্ক ও বিডিআর বিএসএফের কঠোরতার কারণে গত ৩ বছর ধরে এ মিলনে বাঁধ সাধলেও এ বছর সেটা হয়নি। এজন্য উভয় দেশের রেকর্ডসংখ্যক মানুষ সীমানত্মে এক হয়ে মিশে যায়। উভয় দেশের ৭৫৭ নং মেইন পিলার থেকে ২০ গজ দূরে ভারতীয় এলাকায় অবস্থিত সৈয়দ বুড়াপীর হুজুরের মাজারকে ঘিরে প্রতিবছর ফেব্রম্নয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহের যে কোন দুইদিনে উরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২৭ ও ২৮ ফেব্রম্নয়ারি উরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সৈয়দ বুড়াপীর ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক সাধক। ভারত বিভক্তির অনেক আগে তিনি ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার কারণে সেই সময়ে তিনি মুসলমান-হিন্দু সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। কথিত আছে, তাঁর কাছে গেলে নাকি অসুখ-বিসুখসহ বিপদাপন্ন মানুষ উপকৃত হতেন। আজ থেকে ৬৬ বছর আগে তিনি পঞ্চগড়ের একেবারে সীমানত্ম ঘেঁষা বড়দরগা এলাকায় মৃতু্যবরণ করলে তাঁকে জিরো লাইনের ভারতীয় এলাকায় দাফন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.