বাংলাদেশে গণতন্ত্র রায় আমেরিকার জোরাল ভূমিকা চান খালেদা

বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় আমেরিকার জোরাল ভূমিকা আশা করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
গতকাল ওয়াশিংটন টাইমসের মতামত পাতায় তিনি এই অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের একটি পরিবারের হাতে আটকে পড়ার বিপদ সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বাংলাদেশের গতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল তা-ও নস্যাৎ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। তিনি প্রয়োজনীয় চাপ প্রয়োগ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।

খালেদার পুরো অভিমত এখানে তুলে ধরা হলো

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে ২০১৩ সাল কি সন্ধিণ হতে যাচ্ছে? ১৫ কোটি মানুষের আমার এই দেশ ভারত আর মিয়ানমারের মাঝামাঝি অবস্থিত। সেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম দেশ হিসেবে আমাদের আত্মনির্ধারণের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তবে গত কয়েক বছরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। এ েেত্র যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অবশ্য আঙুল তোলা যায়। কারণ ক্রমেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ছে এবং এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উদীয়মান বিশ্ব শক্তিগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

তার অর্থ এই নয় যে, মার্কিন সরকার, কংগ্রেস এবং তাদের সংস্থাগুলো কিছুই করেনি। ছয় মাস আগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য প্রায় ২০০ কোটি ডলার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। চার মাইল দীর্ঘ এই সেতু ৪০ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বিশ্বব্যাংক এই অর্থ প্রত্যাহারের সময় মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির তদন্তের দাবি করেছে।

একই সময় নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তার গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেয়ার কারণে মার্কিন কংগ্রেশনাল ককাস বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশের এই ুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেয়ার কারণ কী? অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘এই নোবেল পুরস্কার ভুল লোকের হাতে পড়েছে। যদি বাংলাদেশে কেউ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হন তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

বেশির ভাগ বাংলাদেশী অবশ্য শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দাবির ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করবে। শুধু জিজ্ঞেস করুন ওই প্রায় ৩০০ নিখোঁজ মানুষের পরিবারকে, যারা ২০০৯ সালের পর থেকে শেখ হাসিনার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে নিখোঁজ হয়েছে। কিংবা চিন্তা করে দেখুন, খুন হয়ে যাওয়া শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের পরিবারের কথা। ওই আমিনুলের প হয়ে এএফএল-সিআইও এখন প্রচারণা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য খাতে বাংলাদেশকে তার অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৃশংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে যেসব রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে তাদের সমর্থকেরাও হাসিনার নোবেল পুরস্কারের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মার্কিন দূতও কেবল সরকারবিরোধী রাজনীতিবিদদের অভিযুক্ত করার চেষ্টার সমালোচনা করেছেন। গত ডিসেম্বর মাসে ইকোনমিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত ই-মেইল এবং ফোনালাপও প্রমাণ করে, এই বিচারকাজ নিয়ে হাসিনা প্রশাসন কী ধরনের কুকর্ম করছে এবং তারা কিভাবে হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পাঁয়তারা করছে।

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম গতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার পথ থেকে সরে এসে এখন কেবল একটি পরিবারের মতার বেড়াজালে আবদ্ধ হতে চলেছে। এই অবস্থায় সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ফেলার পদপে নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। অথচ এই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান আনার জন্য তিনি নিজেই একসময় সহায়তা করেছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান একটি অবাধ এবং মুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়ে আসছে। যদি ভোটাররা নতুন কোনো সরকারের জন্য ভোট দেয় তাহলে মতার হাতবদল অবশ্যই হতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানালেও হাসিনা তার অবস্থানে অটল রয়েছেন। তার ধারণা মানুষের সমর্থন না থাকলেও এভাবে তিনি মতায় আবারো আসতে পারবেন।

পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার সফর করেছেন, যা দেশটিকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে এনেছে। ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র হিসেবে তার উত্থান অব্যাহত রেখেছে। যদি বাংলাদেশ একটি পরিবারের শাসনের অধীনে আটকা পড়ে যায়, তাহলে তা হবে গোটা অঞ্চলের জন্য এক পা পেছনে চলে যাওয়া। দণি-পূর্ব এশিয়া নিয়ে এখন আশা বাড়ছে। কারণ আমেরিকা এই অঞ্চলে স্বাধীনতাকে সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে মানুষের সুযোগ হবে ব্যালটের মাধ্যমে তাদের মতকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আসলে ভোটারদের সম্মানিত করা হবে, এই কথা বলে চাপ প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ব্রিটেনের জন্য। এটি নিশ্চিত করার জন্য তাদের কথা এবং কাজকে আরো জোরাল করতে হবে যাতে করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে না যায়। দারিদ্র্য দূরীকরণে মুহাম্মদ ইউনূস যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য মার্কিন কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সংসদকে তার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। যদিও শেখ হাসিনাও এই ধরনের মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি পেতে আগ্রহী।

শেখ হাসিনার কাছে তাদের পরিষ্কার করতে হবে যে শ্রমিক সংগঠনগুলো এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের মতপ্রকাশের সুযোগ না দিলে বাণিজ্য খাতে অগ্রাধিকার প্রত্যাহার করা হবে। সরকারের যেসব লোক গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারকে তোয়াক্কা করছে না তাদের চলাফেরার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। তাদের এসব প্রকাশ্যেই বলা উচিত যাতে করে সবাই তা দেখতে এবং শুনতে পায়। এখন যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বকে গণতন্ত্রায়ন করার তার মিশন নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করতে পারে।

বলা হয়ে থাকে, আইনের আদালতের চেয়েও বড় হচ্ছে বিবেকের আদালত। বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই এখন বলা অসম্ভব, শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ নিরাপদ। বরং সেগুলো এখন ভীষণ বিপদের মধ্যে রয়েছে। এখন সময় আমেরিকার নেতৃত্বে বিশ্ববাসীর এগিয়ে আসার, যাতে করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিরাপদ থাকে।

No comments

Powered by Blogger.