জঙ্গী উত্থানের বিরুদ্ধে আনসার-ভিডিপিকে সজাগ থাকতে হবে- ৩০তম জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার-ভিডিপি সদস্যদের প্রতি দেশে জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদ ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী রবিবার আনসার একাডেমীতে আনসার ও ভিডিপির ৩০তম জাতীয় সমাবেশ উপলৰে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণদানকালে একথা বলেন।
অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার লৰ্যে জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদ ও সমাজবিরোধীরা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, 'আপনাদের ৫০ লাখ সদস্যের মাধ্যমে মোটিভেশন কাজ চালাতে হবে।' শেখ হাসিনা তাদেরকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জনগণের জানমালের হেফাজত করতে সততা, সাহস ও আনত্মরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। খবর বাসসর।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরৰা বাহিনীর সব উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক কাজ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার নির্বাচনের আগে জনগণকে দেয়া ওয়াদা পূরণে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। এ লৰ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর বিগত ও বর্তমান সরকারের আমলে আনসার-ভিডিপি বাহিনীর জন্য গৃহীত কর্মকাণ্ডের উলেস্নখ করে বলেন, ১৯৯৮ সালে প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এই বাহিনীকে জাতীয় পতাকা প্রদান এবং চাকরি স্থায়ীকরণের ৰেত্রে প্রয়োজনীয় পদৰেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর বিগত মেয়াদের (১৯৯৬-২০০১) সরকারের সময় আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক গঠন করা হয়েছিল এবং এ ব্যাংক ইতোমধ্যে এর কার্যক্রম শুরম্ন করেছে।
আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর কল্যাণে তিনি তাঁর বর্তমান সরকারের বিগত এক বছরে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, গত বছর অঙ্গীভূত আনসারদের নূ্যনতম দৈনিক ভাতা ১১১ দশমিক ৫৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করার ঘোষণা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাটেলিয়ন আনসারদের চাকরি স্থায়ীকরণের সময়সীমা ১২ বছর থেকে কমিয়ে ৯ বছর করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার এই প্রথমবারের মতো কর্মকর্তাদের রেশন প্রদান এবং সকল শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার ও মহিলা আনসারদের জন্য পারিবারিক রেশনের ব্যবস্থা করেছে এবং বর্ধিত রেশন ইতোমধ্যে তারা পেতে শুরম্ন করেছেন।
এছাড়া আনসার ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদবীসমূহ অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ থাকায় সমপ্রতি তা পরিবর্তন করে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আনসার-ভিডিপি একাডেমীতে একটি হাসপাতাল চালু করা হয়েছে এবং পাশাপাশি এই হাসপাতালকে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দৰতা প্রমাণের জন্য এ বাহিনীকে আরও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান করা হবে। এ বাহিনীর প্রসত্মাবিত টিওএন্ডই যথাসম্ভব শীঘ্র কার্যকর করা হবে উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'স্বল্পতম সময়ে এ বাহিনীর নতুন সদর দফতর স্থাপনের জন্য স্থান বরাদ্দ ও স্থাপনা নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল দ্রব্যমূল্য কমানো এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই অঙ্গীকার পূরণে আমরা অনেকটাই সফলতা অর্জন করেছি। কৃষকদের জন্য আমাদের সরকার ৩ হাজার ৬শ' কোটি টাকা ভতর্ুকি বরাদ্দ করেছে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে। এবারের ইরি-বোরো এবং আমন মৌসুমে কৃষকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যত সরবরাহ করা হয়েছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা, গাজীপুর থেকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেখানে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ প্রয়োজন, সেসব েেত্র আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের এই সুশৃঙ্খল সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে যেকোন দুরূহ কাজ সহজে সফল করা সম্ভব। গ্রামই পারে মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের উন্নয়ন ঘটাতে। আর সে ল্য নিয়েই গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধনে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আনসার ও ভিডিপির বাহিনীর সদস্যরা গ্রামীণ জনজীবনে শানত্মিশৃঙ্খলা রা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে।
রবিবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমীতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরা বাহিনীর ৩০তম জাতীয় সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টা ১০ মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে আনসার একাডেমীতে পেঁৗছলে আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ রফিকুল ইসলাম, এনডিসি পিএসসি তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম টুকু মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এরপর আনসার ভিডিপি একাডেমীর শহীদ ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডের সুসজ্জিত মঞ্চে আরোহণ করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সবুজ খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন করেন। প্যারেড কমান্ডার মোঃ ফখরম্নল ইসলাম এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন। পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার চরকেওয়ার গ্রামের মৃত আব্দুল মোলস্না'র ছেলে অঙ্গীভূত আনসার মোজাম্মেল মোলস্নাকে (মরণোত্তর) অসম সাহসিকতাপূর্ণ আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ আনসার পদক এবং অসম সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পাড়াইল গ্রামের মৃত হরমুজ আলীর ছেলে মোঃ নজরম্নল ইসলাম খানকে (লেবু) বাংলাদেশ ভিডিপি পদক প্রদান করেন। মৃত মোজাম্মেল মোলস্নার প েতাঁর মা হাছিয়া বেগম প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। এছাড়া শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার নকলা গ্রামের মৃত সাহের উদ্দিনের ছেলে অঙ্গীভূত আনসার মোঃ শরিফ উদ্দিন, রংপুর সদর উপজেলার তপোধন গ্রামের মোঃ শামছুল হকের ছেলে ১ আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোঃ নওসাদ আলী ও ঢাকার মতিঝিল থানার উত্তর শাহজাহানপুর এলাকার গোলাপ ব্যাপারির ছেলে ১ আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোঃ ইকলাছুর রহমানকে সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রপতি আনসার পদক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশী কূটনৈতিক মিশনের প্রধানগণ এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সচিবগণ ছাড়াও আনসার ভিডিপির উর্ধতন কর্মকতর্াগণ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.