পদ্মা সেতু প্রকল্প- নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু! by আনোয়ার হোসেন

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করতে কোন অর্থবছরে কত টাকা দরকার হবে, তা জানাতে সেতু বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী গত সোমবার সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর আগে অর্থমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশীয় অর্থায়নের ওপর জোর দিয়ে বিশ্বব্যাংকের বাইরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংককে (আইডিবি) অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, সেটি বিবেচনার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত বছরের জুলাই মাসেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করে। সে সময় মূল সেতুর দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় সেবার দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।
সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এখনো সরকারের পক্ষ থেকে দরপত্র আহ্বান কিংবা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের সরাসরি নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, নিজস্ব অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে এগোনোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতাদের রাজি করানোর প্রক্রিয়াও অব্যাহত রাখবে সরকার। এই লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী ও গওহর রিজভী দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক প্যানেলের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট।
জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পুরো বিষয় প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখভাল করছেন। তিনি দেশীয় অর্থায়নকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অন্য দাতা কিংবা দেশ এগিয়ে এলে বাংলাদেশের নেতৃত্বে একটি কনসোর্টিয়ামও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতেই সব খোলাসা হয়ে যাবে যে কারা অর্থায়ন করবে। তবে কাজ শুরু হচ্ছে।’
যোগাযোগমন্ত্রী এ কথা বললেও নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় প্রকল্প করা যাবে না বলেই অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো মনে করছে। গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী নিজেই সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন। বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু করলে সেটি সম্পদ না হয়ে দায়ে পরিণত হতে পারে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, তারা কেবল সরকারি নির্দেশ মেনে কাজ করছে। ফলে কিছু কাজ কাগজে কলমে এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। যেমন: চলতি অর্থবছরের বাকি পাঁচ মাসের মধ্যে জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও তদারকি পরামর্শক নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক কাজে ৪০০ থেকে ৪৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছে সেতু বিভাগ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ করতে হবে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ বৃদ্ধি পাবে।
পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়ন এবং দরপত্র দলিল প্রস্তুত করেছিল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মনসেল এইকম। চুক্তির মেয়াদ শেষে প্রতিষ্ঠানটি চলে গেছে। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, এখন মনসেলকেই ছয় মাসের জন্য নিয়োগ করা হবে। তাদের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগও হয়েছে। মূল সেতুর জন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। নদী শাসন ও জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কের ঠিকাদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা আছে।
এদিকে, সরকারের চিন্তা হচ্ছে, কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য তদারক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কানাডাভিত্তিক এসএনসি-লাভালিনের পরিবর্তে দ্বিতীয় দরদাতা যুক্তরাজ্যভিত্তিক হালক্রোকে নিয়োগ করা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের জন্য আলাদা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে সেখানে অর্থ রাখা হবে। কারণ সরকার মনে করছে, বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা অর্থ না দিলে মানসম্মত ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঠিকাদাররা এগিয়ে না-ও আসতে পারে। একটি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা থাকলে বড় ঠিকাদাররা ভরসা পাবে।
বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে এডিবি ও জাইকা ঋণ দেবে—এ বিষয়ে সরকার নিজেও আশাবাদী হতে পারছে না। তবে আইডিবি অর্থ দিতে রাজি থাকার কথা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে বলে সূত্র জানায়। এর বাইরে সরকার ভারতীয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ-সহায়তার একটা অংশও পদ্মায় ব্যবহার করতে চায়। মালয়েশিয়া থেকে পুরো প্রস্তাব না নিয়ে তাদের থেকেও কিছু কাজের জন্য অর্থায়নের চিন্তা করছে সরকার।

No comments

Powered by Blogger.