ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি শুধু ছাত্রলীগের?- সবার সমান অধিকার নিশ্চিত হোক

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশে যুগপৎভাবে বাধা দিয়েছে ছাত্রলীগ ও পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ছাত্রলীগ-পুলিশের সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে।
ছাত্রলীগের সদস্যরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে পুলিশের সাথে মহড়া দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ক্যাম্পাসে সব বৈধ ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব সে পরিবেশ তৈরিতে সহযোগী ভূমিকা পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থাকলে কর্তৃপক্ষ পুলিশ মোতায়েন করবে। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সন্ত্রাস ঠেকানো ও শান্তি বজায় রাখা। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রশাসন এবং পুলিশ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ভূমিকায় সহযোগী হিসেবে অবতীর্ণ হলো, যা স¤পূর্ণ অন্যায়।

মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি স্টাইলে তল্লাশি চৌকি বসায় ক্ষমতাসীন দলের সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসে কোনো সাধারণ ছাত্রছাত্রী কিংবা পথচারী যেতে চাইলে তাদের তল্লাশি করেছে ওরা। এ কাজটি তো পুলিশের। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের পরিচয়পত্র নিশ্চিত করা দরকার হয়, যাতে বাইরে থেকে কোনো সন্ত্রাসী প্রবেশ করতে না পরে। কিন্তু ছাত্রলীগের সদস্যরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অধিকার ও দায়িত্বের ক্ষেত্রে একজন সাধারণ ছাত্রের মতোই তাদের অবস্থান। কিন্তু তাদের আচরণ দেখে মনে হতে পারে, এ ছাত্রসংগঠনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় ইজারা দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ছাত্রলীগের এ ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড রোধ করার পরিবর্তে সহযোগী ভূমিকায় নেমেছে।  ক্যাম্পাসের সব প্রবেশপথ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বেশ ক’টি সাঁজোয়া যানসহ বিপুল পুলিশ মোতায়েন ছিল ভোর থেকেই। সক্রিয় ছিলেন গোয়েন্দা সদস্যরাও। তাদের ভাবসাব দেখে মনে হয়েছে তারা সরকারি বাহিনী নন, ছাত্রলীগের সহযোগী ফোর্স।

সকাল ১০টার দিকে নীলতে এলাকা থেকে ছাত্রদলের একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। তারা স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে এলে তাদের ধাওয়া করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। সাড়ে ১০টার দিকে আবারো মিছিল করে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের যৌথ বাধার মুখে তারা ব্যর্থ হয়। এবার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে মহড়া দেয়া শুরু করে। এ সময় পলাশী ও আজিমপুর মোড়ে বেশ কয়েকজন সাধারণ পথচারী তাদের হামলার শিকার হন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন কয়েকজন। তাদের হাতে প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখা যায়। পুলিশ এসব দেখেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সে দিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশপাশের এলাকায় ১৯টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এজন্য ছাত্রলীগ এবং পুলিশ ছাত্রদলকে দায়ী করেছে। এখানেও পুলিশ ছাত্রলীগের সহযোগী। পুলিশ এ ধরনের দোষারোপ না করে যারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তাদের ধরায় উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল। সন্ত্রাসীদের কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন ছাত্রলীগ ও তাদের অনুকূল প্রশাসন মিলে চালাচ্ছে। বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম চালানো যেন নিষিদ্ধ। কেউ যদি চালাতে চায় তাহলে পুলিশ-প্রশাসন মিলে ছাত্রলীগের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ধরনের আঁতাত অন্যায় এবং অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা মনে করি, এ ধরনের অগণতান্ত্রিক মনোভাবে পরিবর্তন প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে অবশ্যই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ছাত্র বা ছাত্র সংগঠনের প্রতি আইন অনুযায়ী কোনো বৈষম্য করতে পারে না। আমরা মনে করি, এখন থেকে প্রশাসন তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হবে। এর মাধ্যমে সন্ত্রাসমুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সবার জন্য উন্মক্ত হতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.