তিন দিনে যা দেখলাম by মো: জিয়াউর রহমান পারভেজ

ভূমিকম্প, অগ্নিনির্বাপণসহ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়তা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের কমপ্রিহেন্সিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি।
তিন দিনের এই প্রোগ্রাম থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। ভূমিকম্পের আগে পরে এবং ভূমিকম্পের সময় কী করণীয়। কিভাবে বিধ্বস্ত ভবন থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করতে হবে। স্যাররা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমাদেরকে এসব শিক্ষা দিয়েছেন। এই তিন দিনে আমার কাছে যে বিষয়গুলো ভালো লেগেছে তা এখন বলছি। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে প্রতিদিন কাস শুরু হতো। এটি একটি ভালো দিক ছিল। আমাদেরকে যখন ফায়ার সার্ভিসের পোশাক, হেলমেট, বুটসহ অন্যান্য ফায়ার প্রটেকশন দেয়া হলো তখন সবার মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। সবাই সেগুলো পরে সেই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যে যার মতো করে ছবি তুলতে লাগল। আমাদের প্রথম প্র্যাকটিক্যাল কাসটি ছিল খুবই উপভোগ্য। ভূমিকম্পের পর বিধ্বস্ত ভবন থেকে ভিকটিমকে কিভাবে উদ্ধার করতে হবে তা শিখানো হলো। কাসে ফিরে ঘোষণা করা হলো স্বেচ্ছায় গান বা কৌতুক বলার জন্য। কয়েকজন এসে গান গাইলেন। শুভ ভাই (বি.স) এসে দু’টি কৌতুক বলে সবাইকে হাসালেন। সব শেষে জামিল স্যার খুবই আবেগ দিয়ে একটি বিরহের গান গাইলেন। ‘যারে আমি ভালোবাসি সে আমায় ভালোবাসে নাÑ এই গানটি গাওয়ার পর মনে হলো স্যার ছ্যাঁকা খেয়েছেন। কিন্তু না, স্যার জানালেন ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতির মতো এই গানটিও পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শিখে রেখেছেন। তৃতীয় দিনের ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক চিকিৎসার প্র্যাকটিক্যাল কাসটিও ভালো ছিল। সেখানে কিভাবে রোগীকে পরীক্ষা করে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করতে হবে তা শিখলাম। দু’জন বাদে বাকি সবাই কিছুক্ষণের জন্য ডাক্তার হয়ে গেলাম। একজন সেজেছে পা-ভাঙা রোগী। আর শুভ ভাই সেজেছেন হাত-ভাঙা ও মাথা ফাটা রোগী। তার রোগী সাজার অভিনয়টি ভালো লেগেছে। কাস চলা অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের এক সৈনিক হঠাৎ ‘ও মাগো’ বলে চিৎকার করে পড়ে বেহুঁশ হয়ে যান। সবাই চমকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম দেখার জন্য। স্যাররাও দৌড়ে এলেন। কী হয়েছে সবাই জানার চেষ্টা করে। অ্যালার্ট টিমও তাদের সরঞ্জাম নিয়ে তাকে পরীক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর জানা গেল এটি আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা ছিল। এ রকম বিপদের সময় আমরা কী করি স্যাররা তা দেখতে চেয়েছেন। সবচেয়ে ভালো লেগেছে চূড়ান্ত মহড়া অনুশীলন। সবাইকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা হলো। একটি কৃত্রিম বিধ্বস্ত ভবনে উদ্ধার অভিযান চালাতে হবে । একটি গ্রুপে ছিল সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত, পুলিশ, এলাকাবাসী, সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যান। চোর-ডাকাতেরা জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ তাদের তাড়া করছে। সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত। উদ্ধারকর্মীরা ভিকটিমকে উদ্ধার করছে। ডাক্তার চিকিৎসা দিচ্ছেন। সেখানে একটি বাস্তব অবস্থা তুলে ধরা হলো। সবার অভিনয় ছিল খুবই প্রাণবন্ত। সবশেষে এক্সটিংগুইসারের মাধ্যমে একে একে সবাই আগুন নেভানোর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত মহড়া শেষ হয়। আমাদেরকে শেখানোর জন্য সব স্যারকে আন্তরিক চেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো। আমার মতে যেকোনো দুর্যোগে নিজেকে, নিজ পরিবারকে ও দেশের জনগণকে বাঁচানোর জন্য এই কোর্সটি সবারই করা উচিত।

zrparvez@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.