ঢাবিতে ছাত্রলীগের তাণ্ডব- ২ ছাত্র আহত, বাসে আগুন, বোমা বিস্ফোরণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। আগের দুই দিনের মতো গতকালও ক্যাম্পাসে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।
ছাত্রলীগের পিটুনিতে আহত হয়েছেন দুইজন, আটক করা হয়েছে অপর দুইজনকে। ক্যাম্পাসের ভেতরে বিআরটিসির একটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। তবে গতকাল ছাত্রদলকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। এ দিকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তৃতীয় দিনের মতো গতকাল সারা দিন উত্তেজনা বিরাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। খুব প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ক্যাম্পাসে আসছেন না। ছাত্রদল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবেÑ এমন আশঙ্কায় গতকালও সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চৌকি বসায় ছাত্রলীগ। মোতায়েন ছিল বিপুল পুলিশ। ক্যাম্পাসে কেউ ঢুকতে চাইলেই তাকে তল্লাশি করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রছাত্রীরা হয়রানি এবং লাঞ্ছনার শিকার হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে ছাত্রদল সন্দেহে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্র আবুল বাসারকে বেধড়ক পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। তবে সাধারণ শিার্থীদের অনেকেই তাকে লাইব্রেরিতে পড়তে আসার কথা জানিয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলা একাডেমীর সামনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রিপনকে বেদম প্রহার করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে পরিচয় জানতে পেরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের মলচত্বরে কয়েকজন ছাত্র একসাথে গল্প করার সময় শিবির সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র আবদুল্লাহ আল ফারুককে মারধর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে তাকে প্রক্টরের হাতে তুলে দেয় তারা। প্রক্টর তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মো: আমজাদ আলী বলেন, শিবির সন্দেহে তাকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে কিছু তথ্যও পাওয়া গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সে গাজীপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানা গেছে। বেলা ১টার দিকে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে ছাত্রদল সন্দেহে এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটলে তাতে আগুন ধরে যায়। এ সময় আশপাশ এলাকায় আরো দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন রাজু নামে একজনকে আটক করেছে। বাসটি জনতা ব্যাংকের স্টাফ পরিবহনে ব্যবহার করা হতো বলে জানা গেছে। তবে কারা এটি ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে ডিএমপি রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ঢোকার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্নভাবে সহিংসতা সৃষ্টি করে ক্যাম্পাসে আসতে চাচ্ছে। বাসে আগুন দেয়ার ঘটনাটি তাদেরই পরিকল্পিত বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ জনতা ব্যাংকের বাস এখানে নিয়ে আসার অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে না।

এ দিকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ছবি ছাপানো হয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বিষয়টি অস্বীকার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা বলেন, ছাত্রদল বোমা ফাটিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এতে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনেকেই খেলনা পিস্তল নিয়ে ঘুরতে পারে। এতে ভয় পেয়ে অছাত্ররা ক্যাম্পাসে আসার সাহস হারাচ্ছেন।

এর আগে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হল থেকে ছাত্রদল সন্দেহে আট নেতাকর্মীকে বের করে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি স্বীকার করে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আজিজুর রহমান ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এ দিকে হলগুলোতে আরো অনেককে ছাত্রদল সন্দেহে তালিকা করে বের করে দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে সূত্র জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়িতে আগুন দেয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.