দু’টি বুক রিভিউ

অনন্যসাধারণ প্রেমের কাব্যগ্রন্থ ‘এসো তুমি পুরাণের পাখি’

এসো তুমি পুরাণের পাখি

মহাদেব সাহা
প্রচ্ছদ আহমেদ ফারুক

প্রিয়মুখ প্রকাশনী (স্টল-১১৬)

মূল্য ১০০ টাকা

বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার গণ্ডি থেকে উত্তরণের জন্য নতুন কোনো কবির আগমন প্রত্যাশায় ‘ঐকতান’-এ বলেছেন, ‘যে আছে মাটির কাছাকাছি সে কবির লাগিয়া আমি কান পেতে আছি।’ বিশ্বকবির মতো বলতে পারা না গেলেও অন্যভাবে বলতে পারবÑ ‘যদি প্রেমের কবিতা চাও, তবে মহাদেব দাদার কাছে যাও।’ কবিতায় প্রেম কিংবা প্রেমের কবিতা যাই বলি না কেন, প্রেমের কবিতা বলতে যা বোঝায় তার অসামান্য দখল কিন্তু মহাদেব সাহার হাতে। তার কবিতায় প্রেম যে কতভাবে ধরা দেয় এবং কত মোহনীয় ভঙ্গিতে অথচ খুব সাধারণভাবে তিনি তা তুলে ধরেন তার কবিতায়, তা গ্রন্থটিতে ফুটে উঠেছে অবলীলায়। কয়েকটি উদাহরণÑ

অন্তরে প্রিয়ার উপস্থিতি নিয়ে তার কবিতায়Ñ আমার অন্তরে অনুক্ষণ গুণগুণ করে/ কেবল তোমার নাম,/ আমি তোমার ডাকনাম ধরে ডাকি স্বর্ণচাঁপাকে;/…আমার সত্তায় খেলে যায়/ তোমার দেহের আলো-/ সেই স্বর্গীয় আলোতে দেখি তোমার কোমল/ বাহু ধরে দু’জনে বেড়াচ্ছি ঘুরে/ চিরবসন্তের দেশে (তোমার নাম)।

প্রেমের পরিণয়ে প্রেমিক হৃদয় পুলকিত হলে মনের ঘোরে কতটা আবোল তাবোল বলতে থাকে তা কবির এ কবিতায় ফুটে ওঠে… একবার তুমি এলে এক লক্ষ বার/ আসে বসন্তের ঋতু/…তুমি এলে এই কবিতার ধূসর খাতায় নেমে আসে/ শব্দের রূপালি ঝর্ণা/ ভরে ওঠে অজস্র সোনালি শস্যে শূন্য খামার… (তুমি এলে)।

প্রকৃতির প্রেমেও তিনি থাকেন স্বপ্নে বিভোর। এসব যান্ত্রিকতার ভিড়ে ¯িœগ্ধ কোমল লাবণ্যময় প্রকৃতির প্রেমানুভূতির মূর্ছনায় তিনি থাকেন স্মৃতির মন্থনে বিভোর- ‘…বার্চবন, স্লেজগাড়ি, দূরের ঘণ্টাধ্বনি/ আমার স্মৃতির মধ্যে তোলপাড় করে ওঠে/ সূদুর বাতাস, ধু ধু ঝাউবীথি-/ …. আলোছায়ার ভেতর ক্রমাগত ডুব সাঁতার/ দিতে দিতে / এই অপরাহ্ণে খুব কান্ত একা একটু বসতি চাই/ স্থিতি চাই আমি;/ আমি চাই আমার ভেতর অপরূপ ম্লান কুয়াশায়/ যেন ফুটে উঠি’ (আমার ভেতর যেন ফুটে উঠি)।

প্রিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হলে রাগ অভিমান ও বিচ্ছেদের বেদনায় বিমর্ষিত প্রেমিকের হৃদয়পাঠ বর্ণনা করতে গিয়ে কবি বলেছেন- তুমি আমার সাথে সম্বন্ধ পাল্টালে/ নদীর গতিপথ পাল্টে যায়/ একদিন দেখি গ্রাম উঠে গেছে;/ তুমি আমার সাথে সম্বন্ধ অস্বীকার করলে/ সব সদ্য স্বাধীন দেশ জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃতি হারায়,/ সমস্ত যুদ্ধবিরোধী চুক্তি ভেঙে যায়।/ তুমি আমার সাথে সম্বন্ধ পাল্টালে/নৌপথ উঠে যায়,/ আকাশ আরো দূরে যেতে থাকে, দূরে/ যেতে থাকে (তুমি ছিন্ন করার অর্থ)।

ভালোবাসার জন্য মানুষের হাহাকার আজন্মকালের। কেন এই ভালোবাসার আকাক্সা মানুষকে জীবন দেয়, কেন পথ চলতে শেখায়। কবির ভাষায়Ñ ভালো না বাসতে বাসতেই মানুষ একদিন/ ভালোবাসেÑ/ হয়তো ভালোবাসতে বাসতেও মানুষ একদিন/ ঘৃণা করে;/ ঘৃণা করলেও মানুষ আসলে/ ভালো না বেসে পারে না।/ ভালোবাসার জন্য মানুষের এই জীবন খুবই ছোট/ কিন্তু এই ছোট জীবন বলেই মানুষ ভালোবাসতে/ পারে, জীবন আরো দীর্ঘ হতো এমন নয়;/ মানুষ বেশিদিন ভালোবাসতে পারে না বলেই/ ভালোবাসার জন্য মানুষের এত হাহাকার (ভালোবাসা)।

ভালোবাসার উপায়-উপকরণ পরিণয়ে যে মধু বসন্ত এনে দেয় তা বলতে গিয়ে কবি বলেনÑ একটি চুম্বন আমাকে বাঁচাতে পারে/ /একশো বছর,/ সুস্থ করে এখনই তুলতে পারে এই/ জরাব্যাধি থেকে;/ তোমার ওষ্ঠ যদি একবার স্পর্শ করে/ কেবল আমাকে/ আমি ফিরে পাই অনন্ত জীবনÑ/ … একটি চুম্বন যদি আমাকে বাঁচাতে পারে/ একশো বছর,/ কেন তার জন্যে অপেক্ষা করবো না তবে/ কোটি মনন্তর! (একটি চুম্বন)।

‘এসো তুমি পুরাণের পাখি’ গ্রন্থটি তার অন্যতম প্রেমের কাব্যগ্রন্থ। কবি মহাদেব সাহার কবিতায় রয়েছে প্রেমের অতুলনীয় সমাহার। তাই তিনি তরুণদের কাছে প্রেমের কবি হিসেবে পরিচিত। যত দিন এ বাংলায় এ বিশ্বে মানুষের মনে প্রেম থাকবে তত দিন কবি মহাদেব সাহা তার অনন্যসাধারণ সৃষ্টি প্রেমের কবিতার মাধ্যমেই অনন্তকাল জেগে থাকবেন তার ভক্তদের মাঝে। প্রতিটি প্রেমিক হৃদয়ের কাছে।

 বইমেলায় নারী লেখক

 শূন্যতা

(অসাধারণ সব ছোটগল্পের সমাহার)

লেখক- রেহানা রিমি

প্রিয়মুখ প্রকাশনী (স্টল নং-১১৬)

প্রচ্ছদ- আহমেদ ফারুক

পৃষ্ঠা ৬৪, দাম-১০৫ টাকা

রেহানা রিমি একজন তরুণ লেখক। কিন্তু গল্প লেখায় তার ম্যাচুরিটি রয়েছে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম দেখা’ (২০১১ জাগৃতি)। ‘শূন্যতা’ তার দ্বিতীয় গ্রন্থ। বইটিতে মোট ১৫টি গল্প রয়েছে। প্রত্যেকটি গল্পেরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিটি গল্পেই সামাজিক সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার সাথে একান্তভাবে জড়িত প্রেম ধরা দিয়েছে নানাভাবে। একটা গল্প কখন গল্প হয়ে ওঠে। যখন সেই গল্পে পাঠককে আটকে দেয়া যায়। গল্পের একটা পর্যায়ে গিয়ে কিভাবে সেখান থেকে ব্যাক করতে হবে তা অনেক ভালো লেখকেরও হিমশিম খেতে দেখা যায়। রেহানা রিমি সে বিষয়গুলোতে ভালো পারদর্শী। গল্পগুলোতে লেখকের শব্দগাঁথুনি দেখলে প্রত্যেক পাঠকই বলতে বাধ্য হবেন যে লেখক গল্প লেখায় কতটা শিল্প দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

রাজু ইসলাম

জয়পাড়া, দোহার, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.