টেলিভিশন ক্যারাভানে by আলতাফ শাহনেওয়াজ

গাড়ি চলছে—টেলিভিশন চলচ্চিত্রের ক্যারাভান। হঠাৎ থামল গাড়িটি। মুহূর্তেই জড় হলো একদল মানুষ। ‘টিভিতে এই তিনডারে দেখছি। রবিন, দেখ দেখ টিভিতে এগো দেখা যায়!’ ধুলো-ময়লা মাখা কিশোরী শাহানার কণ্ঠে প্রিয় তারকাদের হঠাৎ দেখতে পাওয়ার উচ্ছ্বাস।
খাপ খোলা তলোয়ারের মতো সেই উচ্ছ্বাসের আতিশয্যে ১০-১১ বছরের মেয়েটি যখন তার সমবয়সী কিশোর রবিনকে বিস্ময়জাগা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিল, তখনো ওর চোখ বারবার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে—অপলক চোখে সে দেখছে প্রিয় তারকাদের।
গত সোমবার বিকেলের এ ঘটনা সংসদ ভবন এলাকার। তখন টেলিভিশন চলচ্চিত্রের ক্যারাভানের ভেতর আরও অনেকের সঙ্গে বসে আছেন মোশাররফ করিম, তিশা ও চঞ্চল চৌধুরী। আছেন ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও অভিনেত্রী জুঁই করিম। মুক্তির দিন থেকেই বিভিন্ন হলে গিয়ে ছবিটি দেখছেন এর অভিনেতা ও কুশলীরা। তাই টেলিভিশন-এর পোস্টারে ঢাকা ক্যারাভানে সে সময় অভিনেতা-কলাকুশলী ছাড়াও রয়েছে ফারুকীর ভাই-বেরাদারদের বিশাল লটবহর। গাড়িতে বাজছে ‘সামনে গর্ত পেছনে শেয়াল, বাঁয়ে নিষেধ ডানে দেয়াল...’ টেলিভিশন-এর গান। এর মধ্যেই আড্ডায় মশগুল সবাই।
চঞ্চল চৌধুরী বললেন, ‘দারুণ লাগছে! ঘুরছি-ফিরছি। সব সময় যদি এভাবে কাটাতে পারতাম!’ চঞ্চলের উচ্ছ্বাস মোশাররফকেও ছুঁয়ে গেল, ‘কেমন যেন পিকনিক পিকনিক আমেজ মনে হচ্ছে। দর্শকের এত ভালোবাসা...।’ মোশাররফ করিম বাক্যটি শেষ করলেন না। তাকালেন সামনের আসনে বসা সরয়ার ফারুকীর দিকে। এবার ফারুকী বললেন, ‘গতকাল (রোববার) ময়মনসিংহের পূরবী সিনেমা হলে গিয়েছিলাম। সেখানে দর্শকের এত উচ্ছ্বাস—কেউ তিশার সঙ্গে কথা বলতে চায়, চঞ্চলকে ছুঁয়ে দেখতে চায়, কখনো আবার হামলে পড়ে মোশাররফের ওপর। শেষমেশ পুলিশের সহয়তায় ঢাকায় ফিরেছি আমরা। আসলে দর্শকের এত ভালোবাসার প্রতিদান আমরা কীভাবে দেব?’
এবার ক্যারাভানের গন্তব্য বলাকা সিনেমা হল। যে যাঁর মতো কথা বলছেন টেলিভিশন তারকারা। কিন্তু সেখানে কি দর্শক অনুপস্থিত? তিশা বললেন, ‘ছবি মুক্তির দিন বলাকায় গিয়েছি। দেখলাম, হাসির দৃশ্যে দর্শক হাসছেন, কান্নার দৃশ্যে তাঁদের চোখে টলমল করছে পানি।’ তিশার কথায় ততক্ষণে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানালেন চঞ্চল ও মোশাররফ। ফারুকী তো ঢুকেই পড়লেন ওই কথায়। ‘গাজীপুরের চম্পাকলি সিনেমা হলে কলেজপড়ুয়া এক তরুণ আমাকে বললেন, “টেলিভিশন-এ আপনি দেখিয়েছেন আর্টিস্টের সামনের চেহারা। আর হিউমার ও স্যাটায়ারের মধ্য দিয়ে আমি দেখেছি তাঁদের মাথার পেছনের প্যাঁচগোচ।” দুবাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক লি চ্যান ডংও একই কথা বলেছেন। তাহলে লি চ্যান ডংয়ের কথা এবং এই তরুণের কথা হুবহু মিলে গেল কীভাবে?’ বেশ একটা ধাঁধা দিয়েছেন—এমনভাবে হাসলেন ফারুকী।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে । বলাকায় দর্শকের উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে এর মধ্যে গাড়ি পৌঁছাল স্টার সিনেপ্লেক্সে। এখানেও দর্শকেরা বললেন তাঁদের ভালো লাগার কথা। সেসব কথা ভালো লাগা ছাপিয়ে ফুল-পাপড়িসহ আরও অনেক পথে যায়। সেদিকে না গিয়ে ১০ বছর বয়সী সপ্তর্ষীর মন্তব্যটিই শুধু জানিয়ে রাখছি—‘টেলিভিশন আমার অ-নে-ক ভালো লেগেছে!’

No comments

Powered by Blogger.