জনপ্রশাসন- আবারও পদোন্নতির উদ্যোগ by মোশতাক আহমেদ

পর্যাপ্ত পদ না থাকলেও জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আরও কয়েক শ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী মাসে (ফেব্রুয়ারি) এই পদোন্নতি দিতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে সম্ভাব্য এই পদোন্নতি ঘিরে জনপ্রশাসনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, আগের মতো এবারও আস্থাভাজনদের সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব আবদুস সোবহান সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, আগামী মাসে পদোন্নতি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বর্তমানে উপসচিবের পদ আছে ৮৩০টি। এই পদে কর্মরত আছেন এক হাজার ৫৩১ জন। যুগ্ম সচিবের ৪৩০টি পদের বিপরীতে কর্মরত ৬২৩ জন। অতিরিক্ত সচিবের পদ ১০৭টি, কর্মরত ২৪৯ জন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে ৬৪৯ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। ফলে পদোন্নতি পেয়েও অনেক কর্মকর্তা আগের পদেই কাজ করছেন। তবে নিচের দিকের দুই পদ—জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব (মাঠপর্যায়ে সহকারী কমিশনার) পর্যায়ে অনেক পদ শূন্য। জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব আছেন এক হাজার ৫৬৪ জন এবং সহকারী সচিব ৮৩২ জন।
মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এই অবস্থায় উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে আবারও পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে।
গত সোমবার সচিবালয়ে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (পদোন্নতির সুপারিশ করে এই কমিটি) বৈঠকে পদোন্নতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত সচিবদের পূর্ণ সচিব করার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে ১৮ জন ভারপ্রাপ্ত সচিব রয়েছেন। তবে জনপ্রশাসন সচিব বলেছেন, বৈঠকে লাইন পদে অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্যান্য ক্যাডারের বিভিন্ন পদে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, পদোন্নতির জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তাদের নাম সংগ্রহ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক তালিকাও প্রায় প্রস্তুত।
জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মতে, পদ অনুযায়ী পদোন্নতি হওয়া উচিত। তা না হলে সমস্যা বাড়বেই। তা ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের পদোন্নতি দেওয়া ঠিক হবে না।’
জনপ্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের মনে হচ্ছে, নির্বাচন সামনে রেখে নতুন পদোন্নতিতেও অন্যান্য সময়ের মতো মেধা তালিকার পরিবর্তে সরকারের আস্থাভাজনেরাই অগ্রাধিকার পাবেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদোন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় ডিসি (জেলা প্রশাসক) নিয়োগের জন্যও যোগ্যদের তালিকা তৈরি চলছে। শিগগির কিছু জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ করা হবে। উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদেও পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা চলছে।
অভিযোগ আছে, পদোন্নতির জন্য নীতিমালা থাকলেও গত কয়েক বছর অধিকাংশ পদোন্নতি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। যোগ্য ও মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকা অনেক কর্মকর্তাকেও পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশ: জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যাঁদের প্রয়োজনীয় নম্বর রয়েছে; কিন্তু কোনো বিরূপ মন্তব্য বা অন্য কোনো আইনগত বাধা নেই, তাঁদের পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনার জন্য সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির করা একটি উপকমিটি। গত ফেব্রুয়ারিতে পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে করা ওই উপকমিটি তাদের প্রতিবেদন ২০ জানুয়ারি সংসদীয় কমিটিতে জমা দেয়। প্রতিবেদনে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বর্তমানের ৮৫ (১০০ নম্বরের মধ্যে) নম্বরের স্থলে ৮৮ করা, পদোন্নতির বেলায় পর পর দুবার বিবেচিত না হলে তাঁকে আর বিবেচনায় না আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটি গত ফেব্রুয়ারিতে যোগ্য হয়েও বঞ্চিত হওয়া কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করতে সুপারিশ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.