প্রশাসনে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মকর্তাদের তালিকা হচ্ছে- রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন ও কাজের গতি বাড়ানোই লক্ষ্য by তপন বিশ্বাস

সিভিল প্রশাসনে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন গড়া, কাজের গতি বাড়ানো এবং দৰ কর্মকর্তাদের গুরম্নত্বপূর্ণ পদে বসাতে এই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
অতীত ও বর্তমান কাজের দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে এই তালিকা তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক উপদেষ্টা এবং সচিব পর্যায়ে কয়েক কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টিম এই কার্যক্রম তদারকি করছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সরকার সিভিল প্রশাসনের হারানো গৌরব ফিরে পেতে আগ্রহী। অতীতে ব্যাপক দলীকরণের কারণে চেন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ে। অনেক ৰেত্রে মেধা শূন্য হয়ে পড়েছে। দলীয় প্রভাবের কারণে অনেক অযোগ্য কর্মকর্তাকে বসানো হয় বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ পদে। প্রশাসনে এই অভ্যাস এখনও চলছে। এখনও তদ্বিরের জোরে কেউ কেউ অনেক গুরম্নত্বপূর্ণ পদে বসে থাকছেন। অথচ কোণঠাসা বা ওএসডি থাকতে হচ্ছে অনেক দৰ কর্মকর্তাকে। এতে কাজের গতি বাড়ছেই না। ফলে দেশ ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে।
চারদলীয় জোট আমলে প্রশাসনে ব্যাপক দলীয়করণ করতে গিয়ে অনেক অযোগ্য কর্মকর্তার সৃষ্টি হয়েছে। তখন দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি দেয়ার কারণে কোন কোন অযোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি পান। এ জাতীয় অযোগ্য কর্মকর্তা এখন প্রশাসনের বোঝা হয়ে পড়েছে। এমনকি বিদেশের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন চুক্তি সময় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ ৰেত্রে দেশের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তাকে অবশ্যই ইংরেজীতে দৰ হতে হবে। এর পাশাপাশি তাঁকে সংশিস্নষ্ট বিষয়েও দৰতা থাকতে হবে। কিন্তু এই পর্যায়ে বর্তমানে এমন দৰ কর্মকর্তার সংখ্যা খুবই কম। কিছুসংখ্যক যাঁরা রয়েছেন তাঁদের এ জাতীয় কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। এঁদের কেউ কেউ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ডাম্পিং পোস্টিংয়ে রয়েছেন। আবার কেউ কেউ রয়েছেন ওএসডি হিসেবে। এতে দেশ ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে। বর্তমান সরকার এই জাতীয় কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে তাঁদের বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধানত্ম নিয়েছে।
দৰতা যাচাইয়ের ৰেত্রে কর্মকর্তাদের বর্তমান ও অতীতের দায়িত্ব পালনের বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ ৰেত্রে ফাইল নিষ্পত্তি, কত কম সময়কে বেশি ফাইল নিষ্পত্তি করেছে তাও দেখা হবে। এ লৰ্যে বিশেষ টিম গোপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি পর্যবেৰণ করছে। মন্ত্রণালয়গুলোতে কোন সত্মরে কোন ফাইল কতদিন আটকে থাকছে তাও মনিটরিং করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অদৰ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি হয়ে যাবে।
সর্বসত্মরে দৰ কর্মকর্তাদের গুরম্নত্বপূর্ণ পদে বসানো হবে। পদোন্নতির ৰেত্রে তাঁরা পাবেন অগ্রাধিকার। একই সঙ্গে অদৰদের দৰ করে গড়ে তুলতে নেয়া হবে বিশেষ পদৰেপ। সিভিল প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক প্রশিৰণ দেয়া হবে। তবে কাজের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এ জাতীয় প্রশিৰণ দেয়া হবে। এ ছাড়া কাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না থাকলে সে জাতীয় বিষয়ে উচ্চ শিৰার সুযোগ দেয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে সংশিস্নষ্ট এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক কর্মকর্তা পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু তাঁরা এমন কিছু বিষয়ে পড়াশোনা করতে যান, যা তাঁর চাকরি জীবনে কোথাও কোন প্রয়োজন হয় না। এ জাতীয় প্রশিৰণের জন্য বিদেশ পাড়ি জমালে তা রাষ্ট্রের জন্য ৰতির কারণ। ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে দেশ প্রাপ্য সর্ভর্িস পায় না। তাই এ জাতীয় কর্মকা-কে সরকার নিরম্নৎসাহিত করবে।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন গড়র লৰ্যে ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি পৃথক উইিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রানত্ম সচিব কমিটি এর অনুমোদনও দিয়েছে। এটি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার পস্নানিং (সিপিটি) উইংয়ের সহযোগি হিসেবে কাজ করবে। একজন অতিরিক্ত সচিব/যুগ্মসচিবকে প্রধান করে গঠিত এই উইংয়ের জনবল থাকবে মোট ২৩ জন। এতে কমপৰে দু'টি অধিশাখা থাকবে। অধিশাখায় নিযুক্ত থাকবেন উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা। এ ছাড়া প্রতি অধিশাখার অধীনে অনত্মত দু'জন করে সিনিয়র সহকারী/সহকারী সচিব থাকবেন।
সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, এটি কোন অবস্থায় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সিপিটি উইংয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। বরং সিপিটি উইংয়ের সহযোগী হিসেবে এটি কাজ করবে। সিপিটি উইংয়ের পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদের এই উইংটিও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন গড়তে এবং প্রশাসনের দৰতা বাড়াতে বিভিন্ন পরিকল্পনা তৈরি করবে। মন্ত্রিপরিষদ এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এই দু'টি উইং তাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রতি মাসে অনত্মত একটি বৈঠকে মিলিত হবে। এই বৈঠকে দুই উইংয়ের চিনত্মাভাবনা-পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। এতে কারও পরিকল্পনায় কোন ভুলভ্রানত্মি থাকলে তা তারা শুধরে নিতে পারবেন।
সূত্র জানায়, তবে অতীতের কর্মকা-ের জন্য প্রশাসনে দৰ ও চৌকস কর্মকর্তার সংখ্যা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে নতুন এই উইংয়ের জন্য দৰ কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। নিয়োগ-পদোন্নতিতে রাজনৈতিক পৰপাতিত্ব, ওপরে উঠতে রাজনীতিকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা ইত্যাদি করণে প্রশাসনের চেন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ে। সে অবস্থা এখনও বহাল রয়েছে প্রশাসনে। সে কারণে এ জাতীয় কাজে দৰ কর্মকর্তার অভাব দেখা দিতে পারে।
প্রশাসনে এখনও অনেক দৰ কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁরা কেউ কেউ রয়েছেন ওএসডি হিসেবে। আবার কেউবা রয়েছেন ডাম্পিং পোস্টিংয়ে। এরা কেউ কেউ এক বা একাধিক ব্যক্তির রোষানলে পড়ে ওএসডি হয়ে রয়েছেন। অথচ যে কোন আমলে যে কোন পদে বসে তাঁরা দৰতার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। এ জাতীয় কর্মকর্তাদেরও খুঁজে দৰতা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশাসন সংস্কার সক্রানত্ম কাজে দৰ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আটকে রাখা হচ্ছে। এ জাতীয় কর্মকর্তাদের সার্ভিস দেশের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। মন্ত্রিপরিষদের নতুন এই উইংয়ের দায়িত্ব এ জাতীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হলে দেশ প্রকৃতভাবে উপকৃত হবে।
সূত্র জানায়, মহাজোট সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন গড়ার। সে লৰ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি উইং করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। উন্নত ক্যারিয়ার পস্নানিংয়ের মাধ্যমে গোটা প্রশাসন ব্যবস্থাকে বদলে ফেলা হবে। পদোন্নতির বিষয়টি আরও স্বচ্ছ করা হবে। কেউ যাতে পদোন্নতি বঞ্চিত না হয় সে লৰ্যে যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হবে প্রতি পদোন্নতির আগে।
এ ছাড়া প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে তাদের জন্য পৃথক একটি কমিশন গঠন করা হবে। পদোন্নতি বঞ্চিতরা বা যে কোন অভিযোগের বিচার করবে এই কমিশন। কমিশনকেও সম্পূর্ণ নিরপেৰ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.