ভাষাশহীদদের জীবনী গ্রন্থ এখনও আসেনি, পুরস্কার প্রদান আজ

বাঙালীর অহঙ্কার ও ঐশ্বর্যের অমর একুশের বইমেলা শেষ হতে চলল। আজ শনিবার বাদে, আছে আর একদিন। আগামীকাল রবিবারই শেষ হবে প্রাণের এই মেলা। সাঙ্গ হবে মুক্তচিনত্মার মানুষের পদচারণার।
এক বছরের জন্য আবার থেমে যাবে একাডেমীর কলরব। বিরাণ হয়ে যাবে একাডেমী প্রাঙ্গণ। তাই পাঠক ও বইপ্রেমীরা শেষের এই সময়টুকু আর মিস করতে চাচ্ছেন না। সবাই থাকতে চাচ্ছেন বইয়ের সঙ্গে। তার ওপর শুরম্ন হয়ে গেছে সরকারী ছুটি। এ কারণে শুক্রবারও নেমেছিল মানুষের ঢল। আজ শনিবারও সরকারী ছুটি, তার ওপর ঈদে মিলাদুন্নবীরও ছুটি। তাই আজ সরকারী, বেসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত সব প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। ফলে আজও নামবে মানুষের ঢল এবং এবারের মেলার শেষ ঢল। এদিকে মেলা শেষ হয়ে আসল (আজ বাদে রইল আর একদিন), কিন্তু বাংলা একাডেমী তার কথা রাখল না। মেলা শুরম্নর আগের দিন (গত ৩১ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেছিলেন, এবার একাডেমী তিন ভাষাশহীদ বরকত, রফিক ও জব্বারের জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করছে। কিন্তু শুক্রবার (২৬ ফেব্রম্নয়ারি) পর্যনত্ম এই তিন ভাষাশহীদের, একজনেরও জীবনীগ্রন্থ মেলায় আনতে পারেনি একাডেমী। এ প্রসঙ্গে একাডেমীর জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, সব কাজই শেষ। আসবে, এই মেলাতেই আসবে। ছাপা, বাইন্ডিং, সব কাজই শেষ, হয়ত মেলার শেষ দিন আসবে। সব কাজই যদি শেষ হয়ে থাকে, তাহলে 'হয়ত' বলছেন কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, শুধু কর্তৃপৰের ঘোষণা বাকি, এ কারণেই 'হয়ত' কথাটি বলেছি। তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, এ বছর আর সম্ভব না ভাষাশহীদদের জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করা। এদিকে বইমেলার এই শেষ শুক্রবারে নতুন বই এসেছে ১৮০টি। আর নজরম্নল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে অসংখ্য বইয়ের।
বাংলা একাডেমী পুরস্কার ॥ আজ শনিবার ২০০৯ সালের বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রদান করতে যাচ্ছে একাডেমী। গত ১৯ ফেব্রম্নয়ারি এ পুরস্কার ঘোষণা করে একাডেমী। আজ যাঁরা পুরস্কৃত হচ্ছেন, তাঁরা হলেন_ কবিতায় কবি অরম্নণাভ সরকার ও কবি রবিউল হুসাইন, উপন্যাসে আনোয়ারা সৈয়দ হক ও সুশাসত্ম মজুমদার, গবেষণায় ড. আবুল আহসান চৌধুরী এবং শিশুসাহিত্যে ছড়াকার রফিকুল হক দাদু ভাই। পুরস্কার বাবদ বাংলা একাডেমী এবার প্রত্যেককে এক লাখ টাকা, একটি ক্রেস্ট ও একটি সনদপত্র প্রদান করবে। এদিকে একাডেমী শুক্রবার শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতার (আবৃত্তি, সঙ্গীত ও চিত্রা ঙ্কন) বিজয়ী ২৪ শিশুকে পুস্কার প্রদান করে। আগামীকাল রবিবার মেলার শেষ দিন দেয়া হবে সর্বোচ্চ বই ক্রেতাকে 'পলান সরকার' পুরস্কার ও সুন্দর স্টলের জন্য প্রকাশককে স্টল অঙ্গসজ্জা পুরস্কার। তবে স্টল অঙ্গসজ্জা পুরস্কার প্রদানের ৰেত্রেও বাংলা একাডেমীর বিরম্নদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। একাডেমীর অভিযোগকারী বলেছেন, অঙ্গসজ্জার জন্য এবার কথা, মাওলা ও টইটুম্বর এই তিনটি স্টলকে পুরস্কার প্রদান করতে যাচ্ছে একাডেমী। কিন্তু এর চেয়ে সুন্দর সুন্দর স্টল রয়েছে মেলায়। তাদের কেন নির্বাচন করা হলো না তা এক রহস্য। অভিযোগকারী বলেন, স্টল অঙ্গসজ্জা পুরস্কারের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সে কমিটি সরেজমিনে গিয়ে স্টল না দেখেই শুধু স্টলের ছবি দেখে সুন্দর স্টল নির্বাচন করেছে। এতে যারা সুন্দর স্টল নির্মাণ করেছে, তাদের মধ্যে ৰোভও লৰ্য করা গেছে।
সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ॥ এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের ওপর ভিত্তি করে সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে আনন্দ আলো। আর্থিক মানদ-ের ভিত্তিতে দুই ক্যাটাগরির এই পুরস্কারে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের পুরস্কার পেয়েছেন_ কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন (উপন্যাস-হিরন্ময় দুঃখ এবং প্রতিদিন একটি পপি), মফিদুল হক (প্রবন্ধ-লালনকে কে রাচাঁবে), কামাল চৌধুরী (কবিতা-পান্থশালার ঘোড়া), কাইজার চৌধুরী (শিশুসাহিত্য-ছাপাখানার ভূত) ও নাসরীন জাহান (ছোট গল্প- ছেলেটি যে মেয়ে মেয়েটি তা জানতো না)। আর ১০ হাজার টাকা মূল্যমানের পুরস্কার পেয়েছেন_ উপন্যাসে গাজী তানজিয়া (জাতিস্মর), কবিতায় তনুজা ভট্টাচার্য্য (সাময়িক শব্দাবলী), ছোট গল্পে মাহবুব আজাদ (ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প) এবং শিশুসাহিত্যে রিফাত কামাল সাইফ (ভূতের পায়ে বুট)।
নতুন বই ॥ এদিন ছিল মেলার শেষ শুক্রবার। আর এই শেষ দিনে এসেছে ১৮০টি বই। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কবিতার বই, ৪৫টি। এর পরে গল্প ২৭টি, উপন্যাস ২৪টি, শিশুসাহিত্য ৯টি উলেস্নখযোগ্য। এদিনের উলিস্নখিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাইজুস সালেহীনের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস বিরহ বিজয়, এনেছে মেলা প্রকাশনী। আগামী এনেছে সলিমুলস্নাহ খানের আহমদ সফা সঞ্জীবনী ও ফরহাদ মজহারের প্রসত্মাব। প্রিতম এনেছে পপি চৌধুরী সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা। ঐতিহ্য এনেছে সিরাজুর রহমানের এক জীবন এক ইতিহাস। মীরা এনেছে ড. নিতাই দাসের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ। অবসর এনেছে রম্ননা আরেফিনের ছোটদের জন্য রান্না, মা... আমি কী খাব। সাহিত্য এনেছে পরিমল কুমার বিশ্বাসের রাসেলের চিঠি। নালন্দা এনেছে মুহম্মদ আদুল হাই ও আনিসুজ্জামানের দীনবন্ধু রচনা সমগ্র।

No comments

Powered by Blogger.