রাজশাহীতে জামায়াত নেতা গ্রেফতার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে তা-ব ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও হাত-পায়ের রগ কাটার ঘটনায় বৃহস্পতিবার নগরীর মতিহার থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে।
অন্যদিকে ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নক হোসেন হত্যাকা- এবং আবাসিক হলগুলোতে তা-ব ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় চিরম্ননি অভিযানে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির আতাউর রহমানসহ আরও ৭ শিবির ক্যাডারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জামায়াত নেতা আতাউর রহমান ছাড়া অপর ৬ শিবির ক্যাডারকে আদালতের মাধ্যমে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার ভোরে ও সকাল ১০টার দিকে মতিহার থানা পুলিশ নগরীর কাজলা ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে একটি ধারালো হাঁসুয়া ও ৩টি চাপাতিসহ ৪টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে। ঘটনার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ্ মখদুম হলে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থতা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় পুলিশের ১ এসআই, ১ এএসআই, ১ নায়েক ও ৬ কনস্টেবলসহ ৯ জনকে সাময়িকভাবে বরখাসত্ম (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। এছাড়া জিয়াউর রহমান হলের শিবির সভাপতি মাইনুল ইসলামের ২০৩ নম্বর ক বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের বিুব্ধ নেতাকমর্ীরা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত সোমবার রাতে শিবিরের হামলায় গুরম্নতর আহত ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ও সৈয়দ আমীর আলী হলের আবাসিক ছাত্র রম্নহুল আমিন নিজে বাদী হয়ে ৩১ জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলো রায়হান, ইকরামুল, রানা, শামীম, শাহীন, সাঈদ, বাহার, মুন্না, মামুন, ফিরোজ, কাজল, তরিকুল ইসলাম, সালমান, মিজান, ওমর ফারম্নক, লতিফ, তারেক, তারা, রাজু, টাকু শাহীন, চঞ্চল, এনামুল, বাবু, রাকিব, সাকির, মামুন, খাদেমুল, শহীদ, আলমগীর, জসীম উদ্দিন। আসামিদের সকলেই শিবিরের নেতাকর্মী ও ক্যাডার। এদের অধিকাংশ সৈয়দ আমীর আলী হলের ছাত্র ও বাকিরা বহিরাগত।
মতিহার থানার ডিউটি অফিসার এএসআই বশির আহমদ জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নক হোসেন হত্যাকা- এবং আবাসিক হলগুলোতে তা-ব ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মোঃ রাসেল, মোঃ রফিক, এনামুল হক, আরশেদ বিলস্নাহ রায়হান, জিলস্নুর রহমান ও মোকাদ্দেস আলীকে বিকেলে রাজশাহীর অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রম্নহুল আমিনের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের প্রত্যেকের ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর আগে বুধবার গ্রেফতারকৃত ৩৪ শিবির ক্যাডারের মধ্যে ২৮ জনকে একই আদালতের মাধ্যমে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়।
এদিকে বোয়ালিয়া থানার ডিউটি অফিসার এএসআই শাম মোহাম্মদ জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নক হোসেন হত্যাকা- এবং আবাসিক হলগুলোতে তা-ব ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মদদের অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায় নগরীর লোকনাথ স্কুলের সামনের রাসত্মা থেকে মহানগর জামায়াতের আমির আতাউর রহমানকে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে তাকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যনত্ম আদালতে হাজির করা হয়নি। বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, আতাউর রহমানকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ আজ শুক্রবার আদালতে হাজির করা হবে। এদিকে আতাউর রহমানের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবিতে বিকেল ৪টার দিকে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা নগরীর গৌরহাঙ্গা রেলগেট এলাকায় সংপ্তি বিােভ করেছে। নগরীর রেলগেট সংলগ্ন গোরসত্মান মসজিদ থেকে জামায়াতের বিােভ মিছিলটি নগর ভবনের সামনে দিয়ে পুনরায় রেলগেট হয়ে সপুরার পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে গ্রেফতার এড়াতে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা কোন রকম সমাবেশ না করেই দ্রম্নত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের খোঁজাখুঁজি করে বলে প্রত্যদর্শীরা জানায়।
মতিহার থানা পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীর কাজলা কেডি কাবের সামনের ড্রেন পরিষ্কারের সময় সুইপার একটি ধারালো হাঁসুয়া দেখতে পায়। বিষয়টি মতিহার থানায় জানানো হলে পুুলিশ সেটি উদ্ধার করে। এরপর খবর পেয়ে মতিহার থানা পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু হলের উত্তর-পশ্চিম পাশে সিলসিলা রেসত্মরাঁর সামনের পুকুরের ধার থেকে ৩টি ধারালো চাপাতি উদ্ধার করেছে। পুলিশ ধারণা করছে, গত সোমবার রাতের অপারেশন শেষে শিবির ক্যাডাররা চাপাতিগুলো সেখানে ফেলে দিয়েছিল। সেগুলো দায়েরকৃত মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহ মখদুম হলে শিবির ক্যাডারদের হাতে ছাত্রলীগ কর্মী খুনের ঘটনায় ওই হলে দায়িত্বরত পুলিশের ৯ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাসত্ম (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে আরএমপির উপ-কমিশনার সরদার নুরম্নল আমিন সাংবাদিকদের জানান। সাসপেন্ডকৃতরা হলো-এসআই আনোয়ার হোসেন, এএসআই মহসিন আলম, নায়েক আল মামুন, কনস্টেবল নাইমুল ইসলাম, আরিফুর রহমান, ইসহাক আলী, মনোয়ারম্নল ইসলাম, আব্বাস আলী ও খায়রম্নল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.