রাবির কিলিং মিশনে নেতৃত্বে ছিল by শাহীন

৮ ফেব্রম্নয়ারি গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে তা ব ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত শিবির ক্যাডারদের ৩টি গ্রম্নপের একাই নেতৃত্ব দিয়েছিল দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পাশর্্ব সংলগ্ন মেহেরচ-ী পূর্বপাড়ার হাফিজুর রহমান ওরফে শাহীন।
নিহত শাহীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কমর্ী ফারম্নক হোসেন হত্যা মামলার আসামি। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু ৯ ফেব্রম্নয়ারি রাতে নগরীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মতিহার থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন ও বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নক হোসেনকে নৃশংসভাবে হত্যা, চার ছাত্রলীগ নেতার হাত-পায়ের রগ কর্তন ও অর্ধশত নেতাকর্মীকে পিটিয়ে জখমের পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শেষে শিবির ক্যাডার শাহীন সহযোগী ক্যাডারদের নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামের শিবির নেতার বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল। সেখান থেকে বুধবার রাতে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন উত্তর পাশের মেহেরচ-ী উত্তরপাড়া গ্রামে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত শাহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হলেও গত কয়েক বছর থেকে শিবিরের মেস পরিচালনা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরে শিবিরের প্রভাবশালী ক্যাডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পাশর্্ববর্তী এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব ছিল। শাহীনের মৃতু্যর খবর পাবার পরও এলাকার লোকজন তার বিষয়ে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলতে সাহস করেনি । তবে নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন জানান, শাহীনের বাবা আব্দুল মান্নান জামায়াতের সমর্থক। এই সুবাদে কয়েক বছর আগেই শাহীন শিবিরে যোগ দেয়। সে প্রথমে রাজশাহী কলেজে পড়ত। তখন সে রাজশাহী কলেজ শাখা শিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিল। রাজশাহী কলেজ থেকে ড্রপ আউট হয়ে শাহীন ২০০৮ সালে বেসরকারী এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। নিজ এলাকা মেহেরচ-ীতে সে একজন দুর্ধর্ষ শিবিরের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৭ পর্যনত্ম সে রাজশাহী মহানগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড শিবিরের সভাপতি ছিল।
এলাকাবাসী আরও জানান, মেহেরচ-ীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর ও পূর্ব দিকের গ্রামগুলোতে শিবিরের নেতাকর্মীদের দেখভালের দায়িত্বে ছিল এই শাহীন। এলাকার গোধূলী, নূর হামিম, সেতু, ফাল্গুনী ও আবদুল মান্নান এই ৫টি ছাত্রাবাসের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। ছাত্রাবাসগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় ও বহিরাগত শিবির ক্যাডাররা অবস্থান করত বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষেও নিহত শাহীন সামনের সারিতে ছিল বলে প্রত্যদর্শীদের নিকট থেকে জানা যায়।
মেহেরচ-ীর এক ব্যবসায়ী জানান, ৮ ফেব্রম্নয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিহত শাহীনের নেতৃত্বে শিবির ক্যাডারদের তিনটি গ্রম্নপ মেহেরচ-ীর পূর্ব পাড়ার একটি আমবাগানে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘটনার রাতে অস্ত্র সরবরাহের পর শিবিরের দুই গ্রম্নপকে যথাক্রমে মধ্য মেহেরচ-ীর চারম্নকলার গেট এবং বুধপাড়া হয়ে জোহা হল সংলগ্ন বধ্যভূমির নিকট দিয়ে সৈয়দ আমির আলী ও নবাব আব্দুল লতিফ হলের মাঝ দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছিল শাহীন। আর সে নিজে পূর্ব মেহেরচ-ীর রেলওয়ে স্টেশন বাজার গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিল। আর তার দলের ক্যাডারা জিয়া হল ও সোহরাওয়ার্দী হলের নিকটবর্তী এলাকায় পুলিশের ওপর গুলি ও বোমা নিপে করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তা-বের পর শাহীনসহ ক্যাডারদের কাউকে মেসে দেখা যায়নি। শাহীনের বাবা আব্দুল মান্নানের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল বলে জানা যায়।
এদিকে নিহত শাহীনের পিতা আব্দুল মান্নান বৃহস্পতিবার জানান, তার ছেলে শিবির করত। এ কথা ঠিক। তবে ৮ ফেব্রম্নয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে তা-ব ও খুনের ঘটনায় অংশ নিয়েছিল কি-না, তিনি তা জানেন না বলে দাবি করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার কিছুণ আগে শাহীনের লাশ তার মেহেরচ-ী পূর্বপাড়া গ্রামে নিয়ে আসা হয়। সারাদিন এলাকার পরিস্থিতি থমথমে ছিল।

No comments

Powered by Blogger.