সারাদেশে আইনশৃঙ্খলার হঠাৎ অবনতি_ কোন মহলের ইন্ধন?- আহম্মদ হাজী খুন॥ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা!

 রাজধানী ঢাকাসহ দেশে খুন, সন্ত্রাস, ছিনতাই, গোলাগুলি, চাঁদাবাজির ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। রাজধানীর পুরনোয় ঢাকা ওয়ার্ড কমিশনার হাজী আহম্মদ হোসেনের খুনের ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলার জন্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৰমতায় আসার পর হাজী আহম্মদ আলী দখল, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিতে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে। এককালের ডাকাত শহীদের দৰিণহসত্ম বলে পরিচিত আহম্মদ আলীর অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ডাকাত শহীদের প্রতিপৰ হয়ে যায়। আরেক সন্ত্রাসী শহীদ কমিশনারের প্রতিপৰ হয়ে ওঠে আহাম্মদ হোসেন। তাকে অস্ত্রসহ পুলিশ একাধিকবার গ্রেফতার করেছে। ফুলবাড়িয়া বাসটার্মিনাল দখলের জন্য পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। পুরনো ঢাকার সন্ত্রাসীদের গডফাদার আহম্মদ হোসেন অপর সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে খুন হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভ্রানত্মি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৰমতায় থাকতে পুরনো ঢাকার আরেক সন্ত্রাসী সগীর আহাম্মেদ খুন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া তার মরদেহে পুষ্পসত্মবক দেয়ার ঘটনায় হৈচৈ পড়ে যায়। আবারও বিএনপি নেতৃবৃন্দ আরেক সন্ত্রাসী আহম্মদ হোসেন দখল, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির ঘটনায় খুন হওয়ার ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, খুব শীঘ্রই ওয়ার্ড কমিশনার হাজী আহম্মদ হোসেন ও পুরনো ঢাকার চাল ব্যবসায়ী আফিলউদ্দিন খুনের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটিত হচ্ছে। পুরনো ঢাকায় চাঁদাবাজির জন্য সন্ত্রাসীদের হাতে চাল ব্যবসায়ী আফিলউদ্দিন ছাড়াও ইতোমধ্যেই একাধিক ব্যবসায়ী খুন ও সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত হয়েছে। পুরনো ঢাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের বিরম্নদ্ধে কঠোর হসত্মে দমন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সামসুল হক টুকু ও পুলিশের আইজিপি রাজশাহীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীদের কঠোরহসত্মে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য পুলিশ কর্মকর্তা দায়ী থাকলে তাদের বিরম্নদ্ধেও তদনত্ম করে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হক জানিয়েছেন, অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী, অপরাধীদের গ্রেফতার করার জন্য অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে মাসিক অপরাধ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার আরও বলেছেন, অপরাধী, সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক না কেন, এমনকি সরকারী দলের হলেও তাকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।
আহম্মদ হাজীর মৃতু্য নিয়ে নানা কথা দু'বছর আগে তাবলীগ থেকে ফিরে পুরো অন্য মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন আহম্মদ হোসেন। লোকজনকে দান-খয়রাত করায় তার আগেও সুখ্যাতি থাকলেও এরপর তার পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায়। এবারেও এজতেমায় গিয়েছিলেন অনেককে সঙ্গে নিয়ে। সবসময় দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করায় এই প্রতাপশালী কমিশনারের মৃতু্য ভয় উবে গিয়েছিল। বড় ভাই মোহাম্মদ হোসেন জানান, আহম্মদ তার নিজের লাইসেন্স করা দু'টি রিভলবার পর্যনত্ম থানায় জমা দিয়েছিল। যদিও এ বিষয়ে থানা কর্তৃপৰ বিসত্মারিত কিছু জানাতে পারেনি।
পুরনো ঢাকার আলুুবাজার বড় মসজিদের বাইরে রাসত্মার পাশে দু'দিন ধরে ইটের ঘেরা দেয়া জায়গাটি পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। পিভিসি পস্নাস্টিক পাইপের দোকান রাশেদ এন্টারপ্রাইজসহ আশপাশের এলাকার সকল দোকারপাট দুপুর ১২টার পর খুলে যাওয়ায় এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। ৩৬ হাজী ওসমান গনি রোডের এই রাশেদ এন্টারপ্রাইজের সামনেই কয়েকজন সন্ত্রাসী ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার হাজী আহম্মদ হোসেনকে (৫০) গুলি করে হত্যা করা হয়। মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টায় এই হত্যাকা- সংঘটিত হবার পর থেকে এলাকার সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। হত্যাকা-ের প্রতিবাদে দোকান মালিক সমিতি বুধবার পূর্ণ দিবস এবং বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস দোকানপাট বন্ধ রাখে। এছাড়া এদিনও যুবলীগ দৰিণের সভাপতি এবং ৭০নং ওয়ার্ড কমিশনার আহম্মদ হোসেন হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি এবং যুবদল পুরনো ঢাকা, কাকরাইল এবং পল্টন পার্টি অফিস এলাকায় পৃথক পৃথক বিৰোভ মিছিল ও সমাবেশ করে হত্যাকা-ে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার দাবি করেছে।
বুধবার রাতে ওয়ার্ড কমিশনার খুনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ভাগ্নে এবং সব সময়ের সহযোগী তানভীর আহম্মদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং-২৩। মামলায় কারও নাম উলেস্নখ করা না হলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ওয়ার্ড কমিশনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে উলেস্নখ করা হয়। 'মামা একজন রাজনীতিক এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। দলের কোন্দল না জমিজমার বিরোধে এমন ঘটনা এর কোন কু পাচ্ছি না বলে তানভীর জনকণ্ঠের কাছে মনত্মব্য করেন। তবে তাকে হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে একটি জিডি করেছিলেন বলে তিনি স্বীকার করলেও সেটি অনেক আগের ঘটনা এবং কার বিরম্নদ্ধে জিডি সেটি তার মনে নেই বলে মনত্মব্য করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির দ্বন্দ্ব রয়েছে কি না জানতে চাইলে নিহতের স্বজনরা বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা থাকলেও পুরনো ঢাকার অন্যান্য এলাকার মতোই এখানে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ততটা প্রকট নয়। অনত্মত দৃশ্যমান নয় বলে আহম্মদ হাজীর চাচা রেজাউর রহমান রিজু এবং আরেক আত্মীয় রনিসহ অন্যরা দাবি করেন।

No comments

Powered by Blogger.