পিপিপি- টক অব দ্য কান্ট্রি

 শেষ পর্যন্ত কি বহুল আলোচিত প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে? অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের রবিবারের বক্তব্যের পর এমনই প্রশ্ন উঠেছে।
বলেছেন, আমলাতন্ত্রের বাধা এবং বেসরকারী উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহে পিপিপির ব্যর্থ হতে চলেছে। আমলাতন্ত্রের প্রধান সমস্যা হচ্ছে তারা পরিবর্তন চায় না। আর বেসরকারী খাতের সমস্যা হচ্ছে তাদের সব হাতে তুলে দিতে হয়। তারা নিজ উদ্যোগে বড় বিনিয়োগে এগিয়ে আসে না।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'দেশের বেসরকারী খাত এতটাই সরকারের ওপর নির্ভরশীল যে, গায়ে ব্যথা শুরম্ন হওয়ার আগেই তারা মালিশ চায়।' তাই এখন প্রশ্ন হলো এই বেসরকারী খাতের ওপর নির্ভর করে তারা কিভাবে এই উদ্যোগ নিতে গেলেন? এটা কি তাদের ব্যর্থতা নাকি সরকারকে ব্যর্থ করে ভেতর থেকে অন্য কেউ কলকাঠি নাড়ছে?
অর্থনৈতিক বিশেস্নষকরা বলছেন, বাংলাদেশের বেসরকারী খাত এখনও পরিণত হয়নি। তারা অতিমাত্রায় সরকারের ওপর নির্ভরশীল। এখনও সরকারের প্রত্য সহায়তা নিয়েই তারা বেড়ে উঠছে। এই অবস্থায় তাদের কাছ থেকে বড় বিনিয়োগ পাওয়া কঠিন হবে। বরং তারা সরকারী অর্থে প্রকল্প বাসত্মবায়ন করে তা থেকে মুনাফা তুলে নিতে বেশি আগ্রহী।
অর্থমন্ত্রী বেসরকারী খাতের পাশাপাশি পিপিপি বাসত্মবায়ন না হওয়ার জন্য আমলাতন্ত্রকেও দোষারোপ করেছেন। বলেছেন, 'আমলাদের কারণে পিপিপি কার্যকর হচ্ছে না। তাদের কারণেই ব্যর্থ হচ্ছে পিপিপির আওতায় বিনিয়োগের উদ্যোগ। কারণ আমলারা পরিবর্তন চান না। ফলে চলতি অর্থবছরে পিপিপি কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী বাজেটে পিপিপি সফল করতে আরও উদ্যোগ নেয়া হবে।'
অর্থমন্ত্রী নিজেও একজন অভিজ্ঞ আমলা। তিনি নিজেই শুধু নন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও প্রায় সবাই আমলা। আর বর্তমান সময়ে যাঁরা সরকারের নীতি নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তাঁদের তিন জনই এদেশের জাঁদরেল আমলা। এঁরা হলেন অর্থমন্ত্রী নিজেই, সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ডক্টর মশিউর রহমান এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। দীর্ঘ দিন তাঁরা সরকারের প্রশাসনিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁরা সকলেই জানেন আমলাতন্ত্রের নাড়িনত্র। তা সত্ত্বেও আমলাতন্ত্র কিভাবে সরকারের ভাল উদ্যোগে বাধা হয়ে দাঁড়ায়? অর্থমন্ত্রী যখন নিজ মুখে এ কথা বলেন তখন কি বুঝতে হবে তাঁদের কথা শুনছে না আমলারা। অথবা তাঁরা পারছেন না। নাকি সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পেছন থেকে অন্য কেউ কলকাঠি নাড়ছে। অর্থমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভারই দায়িত্ব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে সরকারের সিদ্ধানত্ম বাসত্মবায়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমলাতন্ত্রের কারণে সিদ্ধানত্ম বাসত্মবায়নে ব্যর্থ হলে তার দায় দায়িত্ব তাদেরই বহন করতে হবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে পিপিপির আওতায় প্রকল্প গ্রহণ ও বাসত্মবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ জন্য বাজেটে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজেটের আট মাস পেরিয়ে গেছে। অথচ পিপিপি মাঠে গড়ানো দূরের কথা নীতিমালাই অনুমোদিত হয়নি। এরই মধ্যে পিপিপি বাসত্মবায়নের দায়িত্ব হাত বদল হয়ে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিনিয়োগ বোর্ডের কাছে। শুধু আর্থিক বিষয়গুলো দেখভাল করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। যদিও বিনিয়োগ বোর্ডের দতা কতটুকু তা বিবেচনা করা হয়নি। গত কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগ বোর্ডকে সংস্কারের মাধ্যমে দ করে তোলার উদ্যোগ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে এটি মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য ওঠার কথা ছিল। সেই জানুয়ারি মাস পেরিয়ে ফেব্রম্নয়ারি মাসও চলে গেছে। এখন পর্যনত্ম পিপিপি বাসত্মবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালাই অনুমোদিত হয়নি। ফলে চলতি অর্থবছরে পিপিপি বাসত্মবায়ন নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
পিপিপির প্রবক্তা হচ্ছে বিশ্বব্যাংক। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের অংশীদারিত্ব বাড়াতে তারাই বিভিন্ন দেশে এই প্রসত্মাব নিয়ে এগিয়ে আসে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ কয়েকটি দেশ বিশ্বব্যাংকের এই প্রসত্মাব গ্রহণ করে অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। বাংলাদেশেও সীমিত আকারে এ উদ্যোগটি গত কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য পিপিপি উদ্যোগ চালু করে। এ কারণে বিশ্বব্যাংক পিপিপি বাসত্মবায়নের জন্য বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই সহজ শর্তের ঋণ প্রসত্মাব ব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদিত হবে। এর মধ্যে ২৫ কোটি ডলার পাওয়া যাবে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাসত্মবায়নের জন্য। আর ৭০ লাখ ডলার দেবে কারিগরি সহায়তা হিসেবে। বিশ্বব্যাংকের ওই অর্থ ছোট ছোট বিদু্যত কেন্দ্র নির্মাণ, নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল ও মংলা বন্দরের জেটি উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.