অগ্নিঝরা মার্চ

হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালী তার আত্মপরিচয়ের সন্ধান পেল যে মাসে তার নাম মার্চ। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ। কয়েক শতাব্দীর ঔপনিবেশিক দুঃশাসনের পাথার পেরিয়ে ১৯৪৭ সালে 'পাকিস্তান' নামে বাঙালীর ভাগ্যে যা জুটেছে,
তা ভিন্নরূপে আরেক অপশাসন, নির্যাতন আর বঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়। বাঙালী জাতি ওই শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি পেতে নেমে পড়ে রাজপথে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সীমাহীন দেশপ্রেম, তুলনাহীন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অসীম সাহস, দূরদর্শিতা আর দৃঢ় নেতৃত্বে এই পলল ভূখ- একাত্তরের মার্চে এসে অগি্নগর্ভ হয়ে ওঠে।
অগি্নঝরা মার্চের দ্বিতীয় দিন আজ। একাত্তরের এই দিনে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ পরণিত হয়েছিল এক বিৰুব্ধ জনপদে। এদিন ওড়ানো হয়েছিল মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। এর আগের দিন ১ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক ইয়াহিয়া খান এক ফরমানের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। তাঁর সেই অবৈধ এবং স্বৈরাচারী ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালী জাতির কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধি ৰমতায় যেতে পারবে না। স্বাধীনতার আন্দোলন শুরম্ন করা ছাড়া অধিকার আদায়ের আর কোন বিকল্প নেই। পাকিসত্মানী শাসকদের এই মনোভাবের বিস্ফোরণ ঘটেছিল ২ মার্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্র এদিন বটতলায় এসে জমায়েত হন। বটতলার সমাবেশে ইয়াহিয়ার স্বৈরাচারী ঘোষণার ধিক্কার জানানো হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বটতলার ঐতিহাসিক সমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাটি উত্তোলন করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস এই পতাকাই বিবেচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে। এদিকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহ্রাওয়াদর্ী উদ্যান) আহূত ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভা সর্বাত্মকভাবে সফল করার প্রস্তুতি চালায় আওয়ামী লীগ। আর এই জনসভাকে কেন্দ্র করে মুক্তিপাগল বাঙালীর মধ্যে এক অন্য ধরনের গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। পাক হানাদার বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের ললাটেও তখন চিনত্মার বলিরেখা। ওই জনসভায় বঙ্গবন্ধু কী স্বাধীনতার ডাক দেবেন? দিলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে- এ নিয়ে পুরো পাকিসত্মানেই তোলপাড় চলছিল। একদিকে জনসভার প্রস্তুতি, অন্যদিকে গোটা বাংলাদেশেই উত্তাল আন্দোলন-বিৰোভে রীতিমতো অগি্নগর্ভ অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতিটি বাঙালীর চোখেমুখে একই প্রত্যাশা_ পাকিসত্মানী দখলদারদের হটিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ছিনিয়ে আনা। আর সেই লৰ্য পূরণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালীর দামাল ছেলেরা সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে শুরম্ন করে। ২ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস উপলৰে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। এতে স্মৃতিচারণ করবেন প্রথম পতাকা উত্তোলন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব।

No comments

Powered by Blogger.