দুই শিশুকে অপহরণ চেষ্টার গুজব!

সাংসদের গাড়িচালককে মারধর করেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। পরে ওই গাড়িচালক বিষয়টিকে সাংসদের দুই শিশুসন্তানকে ‘অপহরণ চেষ্টা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে এ ঘটনা ঘটে। নেত্রকোনা-১ আসনের সাংসদ মোশতাক আহমেদ বলেন, তাঁর ছেলে জিনান আহমেদ (৬) ও মেয়ে জারা আহমেদ (৫) ইকবাল রোডের সেইন্ট প্যাট্রিক স্কুলে পড়ে। আসলে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে তিনিও কোনো ধারণা করতে পারছেন না বলে জানান।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংসদের গাড়িচালককে মারধর করে শিশুদের অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ পাইনি।’
গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংসদ, পুলিশের কর্মকর্তা ও তাঁর গাড়িচালককে পাওয়া যায়। সেখানে গাড়িচালক শাফায়েত বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাংসদের শিশুকন্যা জারাকে নিয়ে তিনি গাড়িতে বসে ছিলেন। তাঁর বড় ভাই (সাংসদের ব্যক্তিগত কর্মী) আল আমিন ছেলে জিনানকে নিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। দুটি মোটরসাইকেলে আগত দুর্বৃত্তরা প্রথমেই ঘুষি মেরে তাঁর নাক ফাটিয়ে দেয়। এরপর পাঁচ-ছয় মিনিট ধরে মারধর করে। তারা গাড়িসহ শিশু দুটিকে অপহরণের চেষ্টা চালায়।
আসল ঘটনা: ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চা-বিক্রেতা ও একাধিক বাসার নিরাপত্তাকর্মী জানান, সেখানে অপহরণ চেষ্টার কোনো ঘটনা ঘটেনি। আল্লাহর দান চা-দোকানের মালিক ফজল আলী বলেন, সাংসদের গাড়িটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। এই অবস্থা দেখে ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্য গাড়ির সামনে এসে জানালার কাচে টোকা দেন। কেউ সাড়া না দিলে তিনি গাড়ির দরজা খুললে ভেতর থেকে বের হয়ে আসে ছোট্ট মেয়েটি (সাংসদের কন্যা)। এ সময় চালক দৌড়ে আসেন। শিশুটিকে একা ফেলে যাওয়ার জন্য সবাই তাঁকে গালমন্দ করেন। ট্রাফিক পুলিশও সাংসদের স্টিকার দেখে চালককে কিছু না বলে চলে যান। একটু পরই আরেকজন লোক আরেকটি শিশুকে (সাংসদের ছেলে) নিয়ে গাড়িতে উঠছিলেন। এ সময় যানজটে আটকে পড়া ভুক্তভোগীরা গাড়িচালককে গালমন্দ শুরু করলে চালক বলেন, ‘জানেন, এইডা কার গাড়ি?’ এক কথা দুই কথায় চালক এক মোটরসাইকেল আরোহীর কলার চেপে ধরেন। এ সময় ঠিক গাড়ির পেছনে আটকে পড়া আরেকটি মোটরসাইকেল থেকে এক লোক নেমে চালককে মারতে শুরু করেন। পরে চালক দৌড়ে রক্ষা পান। মারধরকারী মোটরসাইকেল আরোহীর পেছনেও ছিল স্কুলের পোশাক পরা একটি শিশু। পরে চালক ঘটনাটিকে অপহরণের চেষ্টা বলে প্রচার করেন।

No comments

Powered by Blogger.