বিশ্বকাপের জন্য মেসির আকুতি

কোনো দিন যদি সত্যি সত্যি আলাদিনের সেই দৈত্যের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, লিওনেল মেসি একটা জিনিসই চাইবেন, বিশ্বকাপ! তাঁর দুঃখটা তাঁর চেয়ে ভালো আর কেউ বুঝবে না।
প্রশ্নাতীতভাবে এই সময়ের সেরা খেলোয়াড়। একাই ফুটবল মাঠে জাদুমন্ত্রের সম্মোহনে বশ করতে পারেন প্রতিপক্ষকে। টানা চার-চারবার জিতলেন বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার। কিন্তু মেসি বলছেন, চাই না তাঁর ব্যালন ডি’অর। একটা বিশ্বকাপ শিরোপার বদলে তিনি দিয়ে দিতে রাজি আছেন সবগুলো ব্যক্তিগত পুরস্কার!
‘বিশ্বকাপ জেতাটাই এখন বাকি। সত্যি বলতে কি, হ্যাঁ, বিশ্বকাপের বদলে আমি ব্যালন ডি’অর দিয়ে দিতে রাজি আছি। আমি সব সময়ই তা বলে এসেছি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো গৌরবের তুলনা আর কিছুতেই হয় না। আমি বার্সেলোনার পাশাপাশি নিজের দেশের হয়েও কিছু জিততে চাই, সব সময়ই বলে এসেছি এটা আমার স্বপ্ন’—বলেছেন মেসি।
একবারের বেশি ফিফা বর্ষসেরা হয়েছে এমন চার খেলোয়াড়ের মধ্যে একমাত্র তাঁর হাতেই এখনো বিশ্বকাপ ট্রফিটা ওঠেনি। জিনেদিন জিদান, রোনালদো, রোনালদিনহো—প্রত্যেকে বিশ্বকাপ জিতেছেন। মেসি আশাবাদী, তাঁরও অপেক্ষার পালা ফুরোবে। আর্জেন্টিনার সমর্থকেরাও সেই আশায় বসতি গড়ছে। মেসি যে এখন আর্জেন্টিনার হয়েও খেলছেন দুর্দান্ত।
গত বছর তাঁর ৯১ গোলের ১২টি ছিল আর্জেন্টিনার হয়ে। আকাশি-সাদা জার্সিতে এক বছরে এক ডজন গোল এর আগে করেছিলেন শুধু ‘বাতিগোল’ সার্জিও বাতিস্তুতা। গত বছর দুটি হ্যাটট্রিকও করেছেন মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের কনমেবল অঞ্চলের সর্বোচ্চ গোলদাতাও মেসি। যোগ্য অধিনায়কের মতোই নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। এই পরিবর্তনে মেসি নিজেও তৃপ্ত, ‘গত বছর দেশে আমাকে দারুণভাবে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। দেশের মানুষও এখন জাতীয় দলকে দারুণ সমর্থন দিচ্ছে। অনেক দিন হয়ে গেল এই রসায়নটা হারিয়ে গিয়েছিল। বছরটা ভালোভাবে শেষ করতে পারায় আমি খুশি। চারদিক থেকে সমালোচনা ধেয়ে আসা আর জাতীয় দল নিয়ে সবার ভালো ভালো কথা বলা আলাদা ব্যাপার। সমালোচনা হলে খারাপ তো লাগেই।’
দেশের সাধারণ মানুষের দুঃখটা মেসি বোঝেন। ১৯৯৩ সালে কোপা আমেরিকার পর আর্জেন্টিনা যে আর বড় কিছু জেতেনি। গত দুই বিশ্বকাপেই কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়েছে জার্মানি। ২০১১ কোপা নিজেদের দেশে আয়োজন করেও কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে হেরেছে মেসির দল। তবে ওই ব্যর্থতা মুছে ফেলতে যে সবাই ঐক্যবদ্ধ, মেসি জানিয়েছেন সেটাই, ‘আর্জেন্টিনার মানুষকে সেরাটা দিতে, আনন্দের উপলক্ষ এনে দিতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এখন আপনারা দলের সেই একতা দেখতেই পারছেন। এটাই আর্জেন্টিনাকে আরও শক্তিশালী বানিয়েছে। আমরা জানি, আমরা ঠিক পথেই আছি। কিন্তু আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে আরও পরিশ্রম করে যেতে হবে।’
আরও পরিশ্রম করার প্রেরণা সতীর্থরা মেসির কাছ থেকেই নিতে পারেন। টানা চার বছর বর্ষসেরা হয়েও মেসি বলছেন, নিজেকে আরও ভালো ফুটবলার হিসেবেই গড়ে তুলতে চান, ‘এই পুরস্কার জিতলে এত গুরুত্বপূর্ণ সব মানুষ আমাকে নিয়ে কথা বলে, সত্যি ভালোই লাগে। কিন্তু প্রতিবছরই আমার লক্ষ্য থাকে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়া।’
এবার ফিফা ব্যালন ডি’অরটি মেসি বিশেষভাবে উৎসর্গ করেছেন এরিক আবিদাল ও টিটো ভিলানোভাকে। বার্সায় তাঁর এই দুই সহযোদ্ধাই লড়ছেন ঘাতক ক্যানসারের বিরুদ্ধে। মেসি এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা খুঁজে পান এঁদের কাছ থেকেও। ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.