মৃত্যুর আগে এসআই’র দেওয়া বক্তব্যের উল্টো রিপোর্ট পুলিশি তদন্তে by তানভীর হোসেন

নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার ভেতরে রহস্যজনক বিস্ফোরণে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) শাহজাহান মৃত্যুর আগে যে বক্তব্যে দিয়ে গেছেন তার সঙ্গে পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের কোনো মিল নেই।
গত বৃহস্পতিবার বিস্ফোরণের ওই ঘটনার পর পুলিশের গঠন করা ৩সদস্যের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার বিকেলে দেওয়া প্রদত্ত রিপোর্টে শাহজাহানকে একজন মদ্যপ অফিসার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তদন্ত কমিটি এসআই শাহজাহানের সঙ্গে ওসি নূর মোহাম্মদ ও সেকেন্ড অফিসার বিনয় কৃষ্ণ কর-এর কোনো পূর্ব শত্রুতা বা বিরোধের সত্যতা খুঁজে পায়নি।

এতে আরো বলা হয়েছে, ঘটনার রাতে মদের মধ্যে আগুন ধরার কারণে আগুন থেকে পকেটে থাকা ইনহেলারের বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর পুলিশের কোয়ার্টারে শাহজাহানের বিছানার নিচ থেকে ১২লিটার মদ পাওয়া গেছে বলেও তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সোমবার বন্দর থানার ওসি নূর মোহাম্মদ ঘটনার পর এসআই শাহজাহানের রুম থেকে কোনোকিছু উদ্ধারের কথা জানাননি।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন বাংলানিউজকে বলেছেন, ইনহেলার থেকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের কোনো সম্ভবনা নেই। আর সরকারি তোলারাম কলেজের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক অমল কান্তি পাল বলেছেন, মদ বা অ্যালকোহল থেকে এ ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে না। অ্যালকোহলে জৈব এসিড থাকে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন।

কমিটির প্রধান করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তদন্ত) সাজ্জাদুর রহমানকে। কমিটির অন্য ২জন হলেন সহকারী পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) গোলাম আজাদ খান ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও) আমজাদ হোসেন।

মঙ্গলবার বিকেলে এ রিপোর্ট পুলিশের সদর দফতরে পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনার আগে এসআই শাহজাহান থানার ভেতরে কোয়ার্টারের বারান্দায় গাছের পাতায় আগুন ধরিয়ে মদ পান শুরু করে। মদ্যপ অবস্থায় তার হাতে থাকা মদের বোতল আগুনের উপর পড়ে গেলে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। একই সময় তার পকেটে থাকা দু’টি ইনহেলার (এ্যাজমা আক্রান্ত রোগীদের ঔষধী স্প্রে) বিস্ফোরিত হয়। এসে শাহজাহান দগ্ধ হন এবং তার শরীরের ৮০ ভাগ অংশ পুড়ে যায়। ঘটনার পর থানার কোয়ার্টারে যে কক্ষে শাহাজাহান থাকতেন তার বিছানার নিচে রাখা একটি প্লাস্টিকের বড় কন্টেইনারে এবং বিছানার পাশের টেবিলে বোতলে ভর্তি মোট ১২ লিটার দেশি মদ পাওয়া গেছে।

ঘটনার পর বন্দর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি জিডি করেছে। শাহজাহানের মৃত্যুর জিডি-টি অপমৃত্যু মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকীবুজ্জামান মামলাটির তদন্ত করছেন।

মদ বা অ্যালকোহল থেকে এ ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে কিনা এ বিষয়ে জানতে সরকারী তোলারাম কলেজের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক অমল কান্তি পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মদ বা অ্যালকোহল থেকে এ ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে না। অ্যালকোহলে জৈব এসিড থাকে।

সাধারণত অজৈব এসিড (যেমন সালফিউরিক এসিড, হাইড্রোকোরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড ইত্যাদি) থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও জৈব এসিড থেকে বিস্ফোরণ হতে পারেনা বলেও তিনি জানান।

ইনহেলার থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় ভিন্নমত পোষণ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন দুলাল চন্দ্র চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ইনহেলার আগুনে পড়ে গেলে সেটা বিকট শব্দে বিস্ফোরণের কোনো সম্ভাবনা নেই। খুবই অল্প শব্দ হতে পারে। কারণ এর ভেতরে সাধারণত তরল জাতীয় ওষুধ থাকে। এটা বিকট শব্দে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা নেই।

প্রসঙ্গত, সোমবার ভোর ৪টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এসআই শাহজাহান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় বন্দর থানার ভেতরে রহস্যজনক বিকট বিস্ফোরণে গুরুতর দগ্ধ হন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে রহস্যজনক বিস্ফোরণের পর ওসি নূর মোহাম্মদ বেপারী বলেছিলেন, ঘটনার পরে তিনি বারুদের গন্ধ পেয়েছিলেন। তবে চার দিনের ব্যবধানে নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর ওসি বলছেন, এসআই শাহজাহান ওই সময় মদ পান করছিল। তিনি ঘটনাস্থলে মদের গন্ধ পেয়েছিলেন। তার এহেন বক্তব্যে সর্বত্র গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.