বিশেষ নাগরিক সুবিধার নীতিমালাটি বাস্তবায়ন করুন- অভিবাসীদের অবদান বনাম প্রাপ্তি

দুর্নীতি ও মন্দ শাসনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অব্যাহত উচ্চহার দেখে অনেক অর্থনীতিবিদকে বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা যায়। এই বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধির পেছনে অভিবাসী বাংলাদেশিদের অবদান বিরাট।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য হলো, ২০১১ সালে অভিবাসী বাংলাদেশিরা স্বদেশে পাঠিয়েছেন এক হাজার ১১৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। সরকারি হিসাবে এই অঙ্ক মোট জাতীয় আয়ের ১১ শতাংশ, আর বেসরকারি হিসাবে ১৪ শতাংশ। মোট বিদেশি সাহায্য ও মোট প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের অঙ্কের থেকে অভিবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স যথাক্রমে সাড়ে ছয় গুণ ও ১৩ গুণ বেশি।
কিন্তু বিরাট অবদানের বিপরীতে অভিবাসীদের প্রাপ্তি হতাশাব্যঞ্জক। মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অভিবাসীদের সমস্যা ও অভিযোগগুলো সম্পর্কে কিছু তথ্য রয়েছে। প্রতিবেদনটি সম্পর্কে অনলাইন সংস্করণে অনেক অভিবাসী পাঠক যেসব মন্তব্য-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাতেও অভিযোগ ও হতাশার পাল্লাই ভারী। সাধারণভাবে অভিবাসীদের মনোভঙ্গি এমন: সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয় অনেক, কিন্তু সেসবের বাস্তবায়ন নেই; কিন্তু তাতে তাঁদের বড় আক্ষেপও নেই বরং তাঁরা ভাবেন বিদেশে যেতে-আসতে শুধু বিমানবন্দরেই যে ভোগান্তির শিকার হতে হয়, সরকার তা থেকে নিষ্কৃতির ব্যবস্থা করলেই তাঁরা যেন বর্তে যেতেন। অনেকের অভিযোগ, বিদেশে গিয়ে তাঁরা সেসব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সেবার পরিবর্তে পান অমানবিক ব্যবহার। দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগও কম নয়।
অভিবাসীরা বিদেশে গিয়ে বিরূপ জলবায়ু ও সামাজিক পরিবেশে অমানুষিক পরিশ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে তা দেশে পাঠান। তাঁদের প্রতি রাষ্ট্রের ও আমলাতন্ত্রের অবহেলা দুঃখজনক।
প্রথমত, তাঁদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করতে হবে: বিমানবন্দর থেকে শুরু করে দূতাবাসগুলো পর্যন্ত বিদেশে যাওয়া-আসার প্রতিটি ধাপে। ২০০৮ সালে সরকার রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদানসংক্রান্ত যে নীতিমালা গ্রহণ করেছে, অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.