তাঁদের দেখানো পথে by মনিরুল ইসলাম ও শাহানারা জেসমিন

১৪ ডিসেম্বর সকাল নয়টা। রাজশাহী বন্ধুসভার ৪১ জন বন্ধু উপস্থিত। প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয়ের সামনে দাঁড়ানো একটি বড় বাস। কথা ছিল রাজশাহী নগরের সব গণকবর পরিদর্শন, শ্রদ্ধা নিবেদন আর মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে গণহত্যার গল্প শোনা।
গল্প শোনাবেন কবি ও গবেষক মুক্তিযোদ্ধা মাহাতাব উদ্দিন। সঙ্গে থাকবেন বীর প্রতীক নুর হামিম রিজভী। শুরু হলো যাত্রা। আমরা প্রথমেই গেলাম রাজশাহী নগরের পদ্মা মঞ্চের পেছনে। মাহাতাব উদ্দিন দুটি নারকেলগাছের গোড়া দেখিয়ে বলেন, এখানে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমানে রুয়েট) পাঁচজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। এটা ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের ঘটনা। তবে আজ মাহাতাব উদ্দিন অথবা নুর হামিম রিজভী ছাড়া আমাদের কারও ওই জায়গাটা দেখে বোঝার ক্ষমতা নেই যে এটা সেই জায়গা। শ্রদ্ধাভরে সবাই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম।
নগরের শ্রীরামপুর বাবলা বন বধ্যভূমি। নুর হামিম রিজভী জানান, এখানে রাজশাহীর বিভিন্ন পেশার ১৭ জন মানুষকে এক দড়িতে বেঁধে জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হয়। শহীদদের স্মরণে এখানে ১৯৯৫ সালে একটি নামফলক স্থাপিত হয়েছে।
পুলিশ লাইনের বধ্যভূমির ফলকে মোট ৫৬ জন শহীদের নাম রয়েছে, যাঁদের মধ্যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে শহীদ হন তৎকালীন পুলিশের ডিআইজি মামুন মাহমুদ। সর্বশেষে ২১ নভেম্বর শহীদ হন হাবিলদার মোসলেম উদ্দিন।
সবশেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে অবস্থিত শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার প্রতিটি গ্যালারি ঘুরে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সংগ্রহগুলো দেখেন বন্ধুরা। সেখান থেকে আমরা জোহা হলের পেছনে অবস্থিত বধ্যভূমিতে যাই। রাজশাহী নগরের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি।
নুর হামিম রিজভী আঙুল উঁচিয়ে শহীদ শামসুজ্জোহা হল দেখিয়ে বলেন, ওই থেকে এ পর্যন্ত সবই শহীদদের কবর। নীরব-নিথর চোখে আমরা দেখছি। দুজন মুক্তিযোদ্ধার দেখানো পথ। এখানে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে বন্ধুরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা। মুক্তিযোদ্ধা মাহাতাব উদ্দিন গল্প শোনান। দুপুরে বন্ধু আরাফাত রুবেলের রান্না করা খাবার খাওয়া শেষে শুরু হয় কবিতা পাঠের আসর। মুক্তিযুদ্ধের স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনান আমিনা আনসারী।

No comments

Powered by Blogger.