একনেকে মেট্রো রেল প্রকল্প অনুমোদন-ব্যয় হবে ২২ হাজার কোটি টাকা

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গতকাল মঙ্গলবার মেট্রো রেল প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে এক হাজার ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) বা আনন্দ স্কুল প্রকল্পও (দ্বিতীয় পর্যায়) অনুমোদিত হয়।
ঢাকার যানজট নিরসনে উত্তরা থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড রেললাইন (এমআরটি) নির্মাণ করা হবে। নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) ঋণ দেবে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আব্দুল মান্নান হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, একনেক সভায় ২৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা ব্যয়সংবলিত আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৪০২ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ থেকে এবং বাকি ছয় হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, উত্তরা থেকে শুরু হয়ে পল্লবী দিয়ে ফার্মগেট হয়ে মতিঝিলে গিয়ে মেট্রো রেলের রুট শেষ হবে। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রো রেলে ১৬টি স্টেশন থাকবে। এগুলো হচ্ছে উত্তরা নর্থ, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা সাউথ, পল্লবী, আইএমটি, মিরপুর ১০, কাজিপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, চন্দ্রিমা উদ্যান, ফার্মগেট, হোটেল সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমী, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। মেট্রো রেললাইন নির্মাণ কার্যক্রম তিন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে পল্লবী-সোনারগাঁও হোটেল অংশ ২০১৯ সালের মধ্যে, সোনারগাঁও হোটেল-মতিঝিল অংশ ২০২০ সালের মধ্যে এবং উত্তরা-পল্লবী অংশ ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করা হবে।
গতকালের একনেক সভায় 'কোস্টাল ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার' শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলবর্তী ১২টি জেলায় জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকার গ্রামীণ দারিদ্র্য দূর করে জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন করা হবে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাজার সুবিধা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৩০ কোটি টাকা। চার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এই প্রকল্পের জন্য মোট ৯৭৪ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে। এডিবি, এসসিএফ, ইফাদ ও কেএফডাবি্লউ এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫৬ কোটি টাকা জোগান দেবে। ১২টি জেলার ৮২টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। আগামী বছর জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলায় এ প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭০০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ২৭০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, ১৮টি বড় গ্রোথ সেন্টার উন্নয়ন, ৭০টি বাজার উন্নয়ন, ১৯৭টি কমিউনিটি বাজার উন্নয়ন, ১৫টি মহিলা মার্কেট স্থাপন, ৩৮টি ঘাট উন্নয়ন, তিনটি নতুন আশ্রয়কেন্দ্র, পাঁচটি কিল্লা নির্মাণ, সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করা হবে।
গতকালের সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে : এক হাজার ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্প, ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রান্সফরমেশন অব এগজিস্টিং নন-গভর্নমেন্ট স্কুলস ইনটু মডেল স্কুলস ইন সিলেক্টেড ৩১০ উপজেলা হেডকোয়ার্টার প্রকল্প, ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উন্নীতকরণ প্রকল্প, ৩০২ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে দপদপিয়া সেতু নির্মাণ প্রকল্প, ৯৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প-২ এবং ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে উল্লাপাড়া-বেলকুচি সড়কের সোনাতলা ঘাটে করতোয়া নদীর ওপর ৩৪৭.২৯৫ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্প।

No comments

Powered by Blogger.