মিশরের শেষ ফারাও খুন হয়েছিলেন

মিশরের শেষ ফারাও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে প্রাণ হারিয়েছিলেন। ফারাও তৃতীয় রামসেসকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন তারই ক্ষমতালোভী পুত্র। আর এতে মৌন সম্মতি ছিল রামসেসের স্ত্রীর।
‘গ্রেড গড’ নামে পরিচিত রামসেসের মারা যাওয়ার তিন হাজার বছর পর মিশরের ঐতিহাসিক রাজপরিবার হত্যাকাণ্ডের এসব রহস্যজনক তথ্য বেরিয়ে আসছে।

আধুনিক ফরেনসিক প্রযুক্তির কল্যাণে এসব না জানা কথা জানা গেছে। রামসেস এক বা একাধিক ব্যক্তির হাতে নিহত হয়েছিলেন। তার গলায় খুনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

তৃতীয় রামেসের মমির কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (সিটি) চিত্রে দেখা গেছে, তার শ্বাসনালী ও গুরুত্বপূর্ণ ধমনী কেটে ফেলা হয়েছিল। ২ দশমিক ৭৫ ইঞ্চি প্রশস্তের ক্ষতচিহ্ন মেরদণ্ড পর্যন্ত পাওয়া গেছে। ঘাড়ের সামনের সব নরম টিস্যুগুলো কেটে-ছিড়ে গেছে।

প্যালিওপ্যাথোলোজিস্ট আলবার্ট জিঙ্ক বলেন, “আমার কোন সন্দেহ নেই যে গলা কেটে রামেসকে হত্যা করা হয়েছিল। ইতালির ইইউআরএসি ইন্সটিটিউট ফর মমিস এ্যান্ড দ্য আইসম্যানের এ গবেষক আরও বলেন, “খুব গভীর ও বড় ‍অংশ জুড়ে কাটা হয়েছিল যা প্রায় মেরদণ্ড পর্যন্ত গিয়েছিল।”

এক বছরব্যাপী গবেষণা চালিয়েছে মিশর, ইতালি ও জার্মানির অন্যান্য গবেষকদের সঙ্গে জিঙ্ক উদ্ঘাটন করেছেন, তৃতীয় রামেসের ঘাড়ের ক্ষত ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। রাজার আসলে কি হয়েছিল তা অন্ধকারে ছিল। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে তাদের গবেষণাকর্মটি প্রকাশিত হয়েছে।

১১৮৮ থেকে ১১৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্ধ শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন তৃতীয় রামেস। বিদেশিদের বারবার আগ্রাসন থেকে ভূমধ্যসাগরের সেই সময়ের সমৃদ্ধশালী মিশরকে রক্ষা করেছিলেন প্রভাবশালী এ সামরিক নেতা।

গবেষকরা বলেন, “আমরা খুবই আশ্চর্য এবং খুশি কেননা আমরা আসলে এ ধরনের কিছু (রামসেসের হত্যাকাণ্ড উদ্ঘাটন) আসা করিনি। আগেও অন্যান্যরা মমি পর্যবেক্ষণ করেছেন কিন্তু বলা হয়েছিল, (মমিতে) আঘাত বা কোন ক্ষতের চিহ্ন নেই।”

রাজপরিবারের কবর কক্ষে তৃতীয় রামসেসের সঙেগ ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী অজ্ঞাত কয়েকজনের মমিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। এদের মধ্যে রামসেসের ছেলে প্রিন্স পেন্টাওয়েরে মমিও রয়েছে।

জিঙ্ক বলেন, “পেন্টাওয়েরের মরদেহকে সবার থেকে আলাদা করে মমি করে রাখা হয়েছে।... জিহ্বা, দাত, মস্তিস্ক কিছুই সরানো হয়নি।” ইতালির এ গবেষকর আরও বলেন, “পেন্টাওয়েরের মমি খুবই অদ্ভুদ, লালচে রংয়ের ও খুবই অদ্ভুদ গন্ধযুক্ত। ছাগলের চামড়া দিয়ে তাকে ঢেকে রাখা হয়েছিল যা প্রাচীন মিশরে অপবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো। খুব সম্ভবত এটি তার মৃত্যু পরবর্তী শাস্তি ছিল।”

গবেষকদের অনুমান, পেন্টাওয়েরে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিলেন। যে সিংহাসনের আশায় বাবাকে হত্যা করেছিলেন পেন্টাওয়েরে তা আর পূর্ণ হয়নি। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন রামসেসের প্রিয় সন্তান আমোনহিরখোপশেফ।

No comments

Powered by Blogger.