আবারও বিক্ষোভ, নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে মুরসি

মিসরে খসড়া সংবিধানের বিরোধিতায় আবারও পথে নেমেছে বিরোধীরা। বিচারকদের শীর্ষ স্থানীয় সংগঠন স্টেট কাউন্সিল জাজেস ক্লাবের ডাকে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ার ও প্রেসিডেন্ট ভবনের বাইরে বিক্ষোভ-সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
আগের দিন সোমবার বিচারকদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য হন সরকারি প্রধান কৌঁসুলি (প্রসিকিউটর জেনারেল) তালাত ইব্রাহিম আবদুল্লাহ। আগামী শনিবার বিতর্কিত ওই খসড়া সংবিধানের ওপর অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় দফা গণভোট তত্ত্বাবধান না করারও ঘোষণা দিয়েছেন বিচারকরা।
বিরোধী জোট ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্ট (এনএসএফ) বিচারকদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে দেশবাসীকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি আবারও খারাপের দিকে গড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে।
বিরোধীদের দাবি, গত শনিবার অনুষ্ঠিত প্রথম দফা গণভোটে ব্যাপক 'অনিয়ম ও সহিংসতার' ঘটনা ঘটেছে। ভোট তত্ত্বাবধানে ভুয়া বিচারক নিয়োগসহ নারীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। যদিও আলেকজান্দ্রিয়া ও কায়রো ছাড়াও আটটি প্রদেশে অনুষ্ঠিত ওই ভোটে সংবিধানের পক্ষে প্রায় ৫৭ শতাংশ সমর্থন পড়েছে বলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ও মুসলিম ব্রাদারহুড দাবি করেছে। আগামী শনিবার ১৪টি অঞ্চলে দ্বিতীয় দফা ভোট নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করা হবে।
গত ২২ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট মুরসির জারি করা অধ্যাদেশের প্রতিবাদে প্রথম রাস্তায় নামে বিরোধীরা। তাদের চলমান বিক্ষোভের মুখে একচ্ছত্র ক্ষমতার ওই বিতর্কিত ডিক্রি বাতিলের ঘোষণা দেন মুরসি। তবে খসড়া সংবিধানের ওপর গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড় থাকেন তিনি।
শুরুতে এক দিন (গত শনিবার) ভোট নেওয়ার কথা থাকলেও পর্যাপ্তসংখ্যক বিচারকের অভাবে দুই দিন ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। দেশটির উদার ও বামপন্থী এবং সংখ্যালঘু কপটিক খ্রিস্টানের সঙ্গে বিচারকদেরও একটি বড় অংশ মুরসির অনুমোদিত খসড়া সংবিধানকে 'ইসলামপন্থী' আখ্যা দিয়ে গণভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। এ অবস্থায় দুই দিনে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিরোধীরাও এক পর্যায়ে 'না' ভোট দিয়ে প্রস্তাবিত সংবিধান প্রত্যাখ্যানে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানায়। তবে প্রথম দফা ভোটে 'কারচুপির' অভিযোগে তারা আবারও মাঠে নেমেছে।
সোমবার স্টেট কাউন্সিল জাজেস ক্লাবের পক্ষ থেকে আগামী শনিবারের গণভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকরা যেভাবে সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতকে 'জিম্মি' করেছিল, পুলিশ ও সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এ দিন হাইকোর্টে শত শত বিচারক প্রধান কৌঁসুলি তালাতের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এক পর্যায়ে পদত্যাগে বাধ্য হন তালাত। গত মাসে তাঁকে নিয়োগ দিয়েছিলেন মুরসি। তবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল দ্বিতীয় দফা গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পরের দিন আগামী রবিবার তালাতের পদত্যাগপত্র খতিয়ে দেখবে বলে জানা গেছে। তালাতের পূর্বসূরি আবদেল মেগুইদ মাহমুদকে মুরসি সরিয়ে দেন। এ ঘটনাকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন বিচারকরা।
মিসরে এখন পর্যন্ত মুরসির সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘর্ষে আটজন মারা গেছে। আহত হয়েছে ছয় শতাধিক। দেশটির অর্থনীতিও ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে। সূত্র : এএফপি, নিউ ইয়র্ক টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.