ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়, নজর কাড়া দেশীয় পণ্য- পাট ও পাটজাত পণ্য প্রদর্শনী আলিয়ঁসে by মোরসালিন মিজান

সোনালী আঁশ পাটের আলোচনায় প্রথমে যে কথাটি আসে সেটি হলো এর দিন ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু আসলে কি তাই? একদম না। বরং অনেকেই এখন এ নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। কাজ করছেন। বিশেষ করে সৃষ্টিশীল তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগ দেখে আশাবাদী না হয়ে পারা যায় না।


সে রকম একটি উদ্যোগ সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়েছে ধানমণ্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ। এখানে এখন চলছে পাটের তৈরি বাহারি সব পণ্যের প্রদর্শনী। আয়োজক ডালসানিয়া নামের একটি ফ্যাশন হাউস। না, প্রদর্শনীতে অত লোক সমাগম নেই। তবে যাঁরা একটুখানি শৌখিন, রুচির দিক থেকে উন্নত, সর্বোপরি দেশীয় পণ্য ভালবাসেন তাঁরা ঠিকই আসছেন। খুঁটিয়ে দেখছেন বিভিন্ন পণ্য।
প্রদর্শনীতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে পাটের তৈরি চমৎকার সব বেডকভার। তিনটি আলাদা বিছানায় এগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে। তবে প্রথম দেখায় অত কিছু অনুমান করা কঠিন। এ জন্য হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখা চাই। আর তখনই আবিষ্কৃত হবে, এগুলো পাটের তৈরি। মিষ্টি রং। একটু মোটা আর ভারি ফেব্রিক হলেও ওয়াশ করার সহজ ব্যবস্থা আছে।
বেডকভারের পাশাপাশি আছে সোফা কভারও। তবে বিশেষ দৃষ্টি কাড়ে কুশন কভারগুলো। পাটের ক্যানভাসে হাত দিয়ে গড়া হয়েছে বিভিন্ন শিল্পকর্ম। তবে হাতের কাজ বলতে সাধারণত যা বোঝায়, ঠিক তা নয়। চীন থেকে আনা বিভিন্ন পুঁতি, পাথর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। পাটের তৈরি টেবিল ম্যাটগুলোও চমৎকার এবং ব্যবহার উপযোগী। প্রদর্শনী কক্ষের একটি অংশ সাজানো হয়েছে শুধু মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ দিয়ে। পাটে বোনা ব্যাগের গায়ে করা হয়েছে নানা নকশা। কোনটিতে চামড়া কেটে ফুলের নকশা করা হয়েছে। কোনটিতে লতা পাতা। জামার সঙ্গে ম্যাচিং করে ভ্যানিটি ব্যাগ ব্যবহারের ফ্যাশন চালু থাকায় এখানে দেখা গেল বিভিন্ন রঙের ব্যবহার। তবে ঝুড়ির বেলায় দারুণ ফিউশন। এর একটি অংশ পাটের, অপর অংশ গড়া হয়েছে হোগলা পাতা দিয়ে। ব্যাপারটা মুন্সিয়ানার সঙ্গে করেছেন উদ্যোক্তারা। বিভিন্ন মাপের এসব ঝুড়ি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সেট তৈরি করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে আরও আছে টিস্যু বক্স, সিøপার, হ্যাটসহ বিভিন্ন নিত্যব্যবহার্য পণ্য। সবই বলে দেয়, পাট দিয়ে আসলে কত কি সম্ভব!
চমৎকার এ উদ্যোগটি যিনি গ্রহণ করেছেন তাঁর নাম আফসানা আসিফ। ডালসানিয়ার সিইও। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, পাট আমাদের একেবারেই নিজস্ব সম্পদ। এ নিয়ে কাজ করার আলাদা একটা প্রশান্তি আছে। তবে অনেকে পাটের তৈরি পণ্য বলতেই মনে করেন খুব সস্তা কিছু। ছালা টালা ধরনের। আমি সে ধারণা ভুল প্রমাণের চেষ্টা করছি। পাটের তৈরি সামগ্রীকে দামী লুক দিতে কাজ করছি। এক সুতোয় গাঁথছি ঐতিহ্য এবং আধুনিকতাকে। এর পর কিছুটা যেন আক্ষেপ ঝরে পড়ে তাঁর কণ্ঠে। বলেন, ভারতীয় পোশাক কেনার জন্য আমাদের দেশের লোকজন হন্যে হয়ে ছুটেন। বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছেন কলকাতায়। অথচ, আমরা একটু সচেতন হলে কত ভাল কিছু যে করা সম্ভব! তিনি জানান, তাঁর মতো বহু ছোট ছোট উদ্যোক্তা সারা দেশে কাজ করছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমরা যে মেটেরিয়ালটা ব্যবহার করছি সেটির দাম অনেক বেশি। সামান্য ভর্তুকি দিয়ে এটি সরকার কমাতে পারে। আর তা হলে কাজ করা আমাদের জন্য সহজ হয়। সারা বিশ্বের কাছে নিজেদের গৌরব তুলে ধরতে আগ্রহীদের পাশে সরকারকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। আলিয়ঁসে এই প্রদর্শনী চলবে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

No comments

Powered by Blogger.