কেলেঙ্কারির নায়ক কে এই তানভীর মাহমুদ by রিয়াজ উদ্দিন জামি

মাত্র চার বছরেই নাটকীয় উত্থান। এ সময়ের মধ্যে ২৬শ’ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ নিয়ে আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন দেশের অর্থ কেলেঙ্কারির নায়ক তানভীর মাহমুদ। সামান্য একজন হাঁড়ি-পাতিল (সিলভার) বিক্রেতা কী করে এত অল্প সময়ে বিশাল সহায়-সম্পত্তির মালিক হলো তা নিয়ে তার নিজ গ্রাম


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তারুয়ায় আলোচনা তুঙ্গে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০ বছর আগে তানভীর মাহমুদ এ্যালুমিনিয়ামের সামগ্রী বিক্রি করত। ’৯৬ সালের দিকে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৬ সালে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড হোটেল শেরাটন কর্পোরেট শাখায় ঋণ গ্রহণ করেন। তারপর থেকেই ক্ষমতাসীন সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে গভীর সখ্য গড়ে ওঠে। সে সুবাদে দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে বলে এলাকায় চাউর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, চলতি বছর ২০ জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে নিয়ে যখন তানভীর গণসংবর্ধনার আয়োজন করে তখনই তার নাম সবখানে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের উত্তরপাড়ায় ২০ কানি জমির ওপর তার বিশাল বাড়ি। বাড়ির সামনে ও পেছনে রয়েছে বিশাল পুকুর। চায়ের দোকান থেকে পড়ার টেবিলে আলোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে হলমার্ক। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তানভীরসংক্রান্ত খবর শুনতে বাড়ির নারীরাও চোখ রাখেন টেলিভিশনের পর্দায়। তবে গ্রামের মানুষজন সাংবাদিক বা অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলতে সতর্ক। গ্রামবাসী জানায়, তার বাবা নুরুল ইসলাম ওরফে কালু মিয়া সাধারণ মানুষ। ১৫-২০ বছর আগেও তিনি ফেরি করে এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিলের ব্যবসা করতেন। দু’ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে তানভীর সবার বড়। আরেক ছেলে মাহবুবুল আলম হলমার্ক গ্রুপের পরিচালক।
ঈদে গ্রামে এসে ৫-৬টি ট্রাক যাকাতের কাপড় গরিবদের মাঝে বিতরণ করেন। বছরে এলাকায় একবার জিয়াফত করে চার-পাঁচ হাজার মানুষ খাওয়ান। এবার রোজায় ১৭টি মসজিদে নগদ ১ লাখ টাকা অনুদান এবং ইফতারের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে দানবীর বনে যান। গ্রামের বিভিন্ন দোকানে এখনও শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তানভীরের গ্রহণ করা ট্রফি, ২০ জানুয়ারির সংবর্ধনার পোস্টার। যেখানে অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদ্দাছের আলী। কলেজছাত্র শিপন বলেন, তাকে ভাল মানুষ হিসেবে জানতাম। এত টাকা জালিয়াতি করেছেন শুনে আমরা হতবাক। সাইদুর রহমান বলেন, ব্যাংকের কর্মকর্তারাই বা কি করল। যুবক রতন শর্মা বলেন, আমরা ব্যাংকে গেলে ৫০ হাজার টাকাই ঋণ দেয় না। কাগজপত্রের নামে হয়রানি করে। কিন্তু এখন দেখছি চেহারা দেখেই ঋণ দেয়া হয়।
তরুণ নেতা আনোয়ার বলেন, ঢাকায় তাদের সম্পদ ঘুরে দেখতে কয়েকদিন লাগবে। স্থানীয় সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে সরাইল-আশুগঞ্জ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তানভীর। এর অংশ হিসেবেই চলতি বছর বিশাল সংবর্ধনা। সংবর্ধনায় খরচ হয়েছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ট্রফি নেন তিনি। এ জন্যই সংবর্ধনার আয়োজন। মূলত এ সংবর্ধনার পর থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ তানভীরকে চেনা শুরু করেন। আর বেশি করে চেনা হতে থাকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর। তানভীরের সুরম্য প্রসাদে তার পিতার ঢুকতে পারেন না। এ বাড়ির কলাপসিবল গেটে সর্বক্ষণিক তালা ঝোলানো থাকে। যখন তানভীর আসে তখন খোলা হয় এ গেট। তার পিতা বসবাস করেন বিশাল বাড়ির পেছনে একচালা ভাঙ্গা টিনের ঘরে। পুত্রের বিলাসী জীবন ছুঁতে পারেননি পিতা নুরুল ইসলাম ওরফে কালু মিয়া। তবে পুত্রস্নেহে দরদি কালু মিয়ার এ বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনিও স্বীকার করেন আমি এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিলের ব্যবসা করতাম। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। এলাকার মানুষ জানায়, এত কম সময়ে একজন ব্যবসায়ীর বিস্ময়কর উত্থান সকলকেই হতবাক করেছে।

No comments

Powered by Blogger.