ছাত্ররাজনীতির ক্ষত-এ অসুস্থ প্রবণতা রোধ করতে হবে

সমাজের শরীরে এক দগদগে ক্ষত তথাকথিত ছাত্ররাজনীতি। সেই ক্ষত দিনে দিনে আরো বড় হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনকে দমিয়ে রাখার মধ্যে কৃতিত্বের কিছু না থাকলেও পেশিশক্তি প্রয়োগ করাই যেন এখন ছাত্ররাজনীতিতে প্রাধান্য পাচ্ছে। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দুই দিনের ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনুমান করা যায়,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখাটাই এখন ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় নানা সাংগঠনিক কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরত। আদর্শগতভাবে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট হতেন- সংগঠনের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতেন। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির সেই সোনালি অতীত এখন বলতে গেলে পুরোপুরিই বিবর্ণ।
বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ছাত্ররাজনীতির এক সুবর্ণ সময় ছিল। দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ দেশের ছাত্ররা পালন করেছেন ঐতিহাসিক ও বিপ্লবী ভূমিকা। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম- এরপর নানা আন্দোলনে দেশের ছাত্রসমাজের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ও দায়িত্বশীল ভূমিকা। কিন্তু অতীতের সেই সোনালি ইতিহাস আজ যেন লুপ্তপ্রায়। ছাত্ররাজনীতিকে একসময় সমাজে সমীহ করা হতো। দেখা হতো শ্রদ্ধার চোখে। সে অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছে দেশের ছাত্ররাজনীতির প্রধান ধারা। এমনকি সাধারণ ছাত্রদের মধ্যেও রয়েছে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে প্রচণ্ড অনীহা। গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের অবস্থানও ঠিক সে রকম। প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনগুলো ভাগাভাগি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ নেয়- এমন কথাও এখন উচ্চারিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংগঠনগুলো যা কিছু করেছে বা করছে, এর কতটুকু সমর্থনযোগ্য; ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলার খবরে কেউ কেউ বলতে পারেন, বিগত সরকারের আমলেও তো ছাত্রদল দখল করে রেখেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে রাখার সংস্কৃতি যখন থেকে শুরু হয়েছে, তখন থেকেই ছাত্ররাজনীতির নিম্নমুখী যাত্রা শুরু।
কয়েক দশক ধরে দেশের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যেসব নেতিবাচক বিশেষণ যুক্ত হয়েছে, তাতে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আশান্বিত হওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। কারণ আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের কাণ্ডারি। আজকের ছাত্রনেতারাই আগামী দিনের কর্ণধার। ভবিষ্যৎ রাজনীতির নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁদের। দেশের ভবিষ্যৎ এভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। কাজেই ছাত্ররাজনীতির সোনালি দিন আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। সুস্থ ছাত্ররাজনীতি নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে। মূল সংগঠনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। দখলবাজি, টেন্ডারবাজির সংস্কৃতি থেকে ছাত্ররাজনীতিকে উদ্ধার করতে হবে। ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে, অন্যথায় নষ্ট রাজনীতি সমাজকে গ্রাস করবে। সমাজের শরীরে ছড়িয়ে পড়বে এই দগদগে ঘা। অসুস্থ ধারা থেকে উদ্ধার করতে হবে ছাত্ররাজনীতিকে।

No comments

Powered by Blogger.