টেকনাফের ঝাউবাগানে অবাধে গড়ে উঠছে রোহিঙ্গাদের বস্তি- ওদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে মৌলবাদী গোষ্ঠী

টেকনাফের পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় ’৯৪ সালে সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় সৃজিত সৈকতের ঝাউবাগানে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা প্রশাসনের দৃষ্টির অন্তরালে বস্তি নির্মাণ করে নিরাপদে ঘর-সংসার করছে। সামর্থ্যবান পুরুষ রোহিঙ্গারা স্বল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মাঝি-মাল্লা হিসেবে সাগরে মাছ শিকারে সহায়তা


করায় অধিক লাভের আশায় স্থানীয় প্রভাবশালী জেলে, ফিশিং বোটের মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। এ সুযোগে মৌলবাদী গোষ্ঠী নিয়মিত খাদ্য ও অর্থ বিতরণ করে রোহিঙ্গাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। সোমবার ওই রোহিঙ্গা বস্তিতে বিতরণকালে ২ বিদেশীসহ ৫ মৌলবাদীকে পুলিশ আটক করে।
পুলিশ, এলাকাবাসী, স্থানীয় সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এ বছরের জুনের মাঝামাঝি সময় মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে রোহিঙ্গা-রাখাইনদের মাঝে সংঘটিত জাতিগত সহিংসতায় ‘নির্যাতন-নিপীড়নের’ ধুয়া তুলে নাফ নদীর জিরো পয়েন্ট পেরিয়ে টেকনাফের পূর্ব উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ব্যাপক হারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে রোহিঙ্গারা। ওই সময় সাগর-নদীতে কোস্টগার্ড, স্থলে বিজিবি ও লোকালয়ে পুলিশ কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করায় রোহিঙ্গারা ব্যাপক হারে অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। সে সময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মৌলবাদী গোষ্ঠীরা ‘আরকান রাজ্যে জাতিগত সহিংসতায় রাখাইন কর্তৃক নৃশংস নির্যাতনের’ ধুয়া তুলে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে অনুপ্রবেশে সহায়তা করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু সরকার হার্ডলাইনে থাকায় তাদের চেষ্টা সফল হয়নি। পরবর্তীতে মৌলবাদীদের প্রভাবে পরিচালিত ৩ এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা করলে সরকার তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এদিকে মৌলবাদী গোষ্ঠী কোনভাবেও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সক্ষম না হওয়ায় শেষ উপায় হিসেবে বিজিবি-কোস্টগার্ড-পুলিশের সন্দেহমুক্ত নিরাপদ আশ্রয় এলাকা উপজেলার পশ্চিম উপকূলীয় সৈকতের ঝাউবাগান বেছে নেয়।
সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালে উপকূলীয় বন বিভাগ সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় উপজেলার পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা বাহারছড়া, সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের সৈকতে দীর্ঘ ৩৭ কিলোমিটার ঝাউবাগান সৃজন করে। দীর্ঘ ১৮ বছরে ওই বাগান বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়। সাধারণত রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের রুট হিসেবে উপজেলার পূর্ব উপকূলীয় এলাকা সাবরাং, সদর, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকা ব্যবহার করায় বিজিবি-কোস্টগার্ড-পুলিশ ওইসব এলাকা কড়া নজদারিতে রাখে। সে অনুযায়ী পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সন্দেহমুক্ত রুট হিসেবে বিজিবি-কোস্টগার্ড-পুলিশ এদিকে তেমন নজরদারি রাখে না। ঠিক এমন একটি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সন্দেহমুক্ত রুটকে অনুপ্রবেশের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করে মৌলবাদী গোষ্ঠী।
অপরদিকে ওই এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী জেলে, ফিশিং বোটের মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের ‘স্বল্প বিনিয়োগে অধিক লাভের’ ফাঁদে ফেলে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা সৈকতের ঝাউবাগানে রীতিমতো বস্তি গড়ে তুলে নিরাপদে ঘর-সংসার করছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত দেড় মাস ধরে মৌলবাদী গোষ্ঠী অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মাঝে নিয়মিতভাবে মাংস, চাল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, সেমাইসহ নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে।
সর্বশেষ সোমবার দিনভর মৌলবাদীরা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা বস্তিতে খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরণ করে। সন্ধ্যায় খবর পেয়ে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির টু-আইসি এসআই আবদুল মোনাফ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তুরস্কের নাগরিক মোঃ ইসমাইল শরীফ (৫০), কিশোরগঞ্জ জেলার জার্মান প্রবাসী মওলানা আজিজুল হক (৫২), স্থানীয় শামলাপুর গ্রামের গোলাম কবিরের পুত্র মোঃ ইউনুছ (২৯), মুছা আলীর পুত্র মোঃ কবির (৪৫) ও ফজর করিমের পুত্র শফি আলমকে (৪৭) খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থসহ আটক করে।

No comments

Powered by Blogger.