একুশ শতক- ডিজিটাল বাংলাদেশের মন্ত্রণালয় এভাবে চলতে পারে না by মোস্তাফা জব্বার

অবশেষে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সৈয়দ আবুল হোসেন সরকারের নবগঠিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নন। পদত্যাগের ৩০ দিন পর তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে এবং আমরা এখন অপেক্ষা করছি কার হাতে এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়টির দায়িত্ব দেয়া হয় সেটি দেখার জন্য।


নিয়মমাফিক এটি এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত রয়েছে। তবে এই মন্ত্রণালয়টির কেবল মন্ত্রীর অভাবই নয়, আরও অনেক অভাব রয়েছে। সরকারকে সেসব বিষয়েও নজর দিতে হবে।
আমরা স্মরণ করতে পারি যে, ছয় মাসের বেশি সময় হলো আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় নামে একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় পেলাম। তারও আগে বহুদিন ধরে এই নামে আলাদা একটি বিভাগ পেয়েছি। বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং তারপর একটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় আমাদের এই খাতের জন্য অবশ্যই একটি বিশেষ উত্তরণ। ২০০৩ সালে বেগম খালেদা জিয়ার হাতে প্রথম যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ শব্দ দুটি যুক্ত হয় তখনও আমরা আশায় বুক বেধেছিলাম। আমাদের ধারণা ছিল তখনকার সরকার কেবল কথায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত করবে না বরং সত্যিকার অর্থেই মন্ত্রণালয়টিকে ঢেলে সাজাবে এবং একটি জাতির ডিজিটাল যুগে উত্তরণের স্বপ্নকে সফল করার সকল উদ্যোগ নেবে। কিন্তু সেই সরকার মন্ত্রণালয়ের নাম বদলের পর তিন বছর সময় কাটানো সত্ত্বেও বস্তুত মন্ত্রণালয়ের কাজের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন করা হয়নি। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করত নতুন নামের মন্ত্রণালয় সেই একই কাজ করতে থাকে। সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. মঈন খান আগের মতোই ধরাবাধা কাজ করতে থাকেন। বলা যায় তার কাজের কোন রকমফের হয়নি। বস্তুত কোন পরিবর্তনই আমরা দেখলাম না, নামের বদলের ফলে কাজের বদলে। এরপর পেলাম দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা রাজনীতি বদলাতে চাইলেও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মের পরিধি বদলাতে চায়নি মোটেই। সেই সময়ে বরং ড. মঈন খানের মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে গবেষণার টাকা বেনামে-স্বনামে মন্ত্রীর আপনজনদের প্রদান করার অভিযোগ ওঠে এবং মন্ত্রণালয়টিও একটি দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত হয়। পুরো পাঁচটি বছরে এই খাতে অগ্রগতির যে নেতৃত্ব সেই সময়কালে ছিল সেটিও এই মন্ত্রণালয় দেয়নি। বরং এই বিষয়ে কাজকর্ম যা করার সেটি করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত এসআইসটি (এ টু আই)-এর মাধ্যমে। বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সাইডলাইনে বসে থেকে খেলা দেখার কাজই করেছে।
২০০৮ সালের বহুল আলোচিত নির্বাচনে মন্ত্রণালয় না বদলালেও সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয় রাজনৈতিক ঘোষণায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে ক্ষমতায় এলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিজ্ঞা করলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। জন্ম থেকে স্বপ্ন দেখা একটি জাতির আকাশে ওড়ার সেই প্রতিজ্ঞা অনিবার্য করে তোলে ডিজিটাল বাংলাদেশ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার কাজকে।
এরই মাঝে এই সরকারের প্রায় পৌনে চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কোন সন্দেহ নেই যে, এই সাড়ে তিন বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য হাসিনা সরকারের প্রতিটি অঙ্গ প্রতিটি মুহূর্তে কাজ করেছে। একটি কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে ডিজিটাল যুগে উত্তরণ ও একটি সামন্ত সমাজকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করার বিরামহীন লড়াইতে আমি কখনও এই সরকারকে নিশ্চুপ দেখিনি। ব্যক্তি জীবন, রাষ্ট্র ও সমাজের নানা সঙ্কটকে কাটিয়ে বিরামহীনভাবে ডিজিটাল রূপান্তরের লড়াই করা হচ্ছে এখনও। যদি অর্জনের কথা বলতে হয় তবে একটি সুদীর্ঘ তালিকা আমি তৈরি করতে পারব। গ্রামের কৃষকের কাছে সরকারের সেবা ও দুনিয়ার সর্বশেষ তথ্য পৌঁছানোর লড়াই থেকে শুরু করে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পেমেন্ট গেটওয়ে ও ন্যাশনাল ডাটা সুইচের কাজ করা কিংবা বাংলাদেশের প্রথম থ্রি টায়ার ডাটা সেন্টার সক্ষমতার সঙ্গে চালু করার বিষয়ে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টাকে অবশ্যই প্রশংসা করতে হবে। এই পৌনে চার বছরে মোবাইলে টাকার লেনদেন থেকে শুরু করে অনলাইনে ভর্তি বা টেন্ডারের ব্যবস্থা করাসহ শত শত কাজের কথা উল্লেখ করা যাবে যা আমাদের ভাবনারও অতীত ছিল। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য করার বিষয় হলো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজটির খাপছাড়া টাইপের নেতৃত্ব ছিল সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংযুক্ত এ টু আই-এর হাতে। এই প্রকল্প থেকেই সরকারের নানা অঙ্গের নানা কর্মকা-ের সমন্বয় করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব¡ বা তাদের প্রচেষ্টার ফলে আমাদের চারপাশে কতটা সফলতা এসেছে বা এর প্রভাব কতটা পড়বে তার বিচার এখনই না করে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করে দেখা যাবে তারা কতটা সঠিক ছিল। বিষয়টি এখনও অনেকের কাছে মিশ্র বিষয় এজন্য যে এ টু আই বা তার পূর্বসূরিরা অতীতেও একই অবস্থানে থেকে দেশটিকে ডিজিটাল করার কর্মপ্রচেষ্টা চালিয়েছিল। সেই ছক ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণাকারী সরকারের হাতে একই রকম থাকতে পারেনি। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার নেতৃত্ব এবং সরকারের সকল কাজের সমন্বয় তাদের হাতে থাকবে কিনা সেটি আবার নতুন করে ভাবা প্রয়োজন।
এই কারণেই আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব যেন ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব এ টু আইকে না দিয়ে এই খাতের যে মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনা তৈরি করেছেন তার হাতে দেয়া হয়। কারণ সরকারের একটি কাজের সমন্বয়কারী ইউএনডিপির সাহায্যপুষ্ট একটি প্রকল্প থেকে করা মোটেই সমীচীন নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা বা এনজিওরা সরকারকে সময়মতো কোথায় ঝুলিয়ে দিতে পারে তার বহু নজির রয়েছে। সম্প্রতি এই বিষয়ে আমরা আরও অনেক নতুন নজির দেখছি। ফলে নেতৃত্ব অবশ্যই সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকতে হবে।
আমি মনে করি, যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় না থাকত তবে সেটি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ন্যস্ত হতে পারত। কিন্তু সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় থাকার পর এই খাতটিকে কোনভাবেই একটি প্রকল্পের অধীনস্থ করা যায় না। ইউএনডিপি বা বিশ্বব্যাঙ্ক কিংবা আইএমএফকে কতটা বিশ্বাস করা যায় সেটি পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। আমি মনে করি, এ টু আইকে তার নির্দিষ্ট কাজ করার দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হোক এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সকল কাজের সমন্বয় করুক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় নেতৃত্ব দিক।
এই প্রসঙ্গটি আলোচনা করার প্রেক্ষিতটি আলোচিত হতে পারে। শুরুতেই বলতে হয় যে, যদি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এ টু আই থেকেই দেশটির ডিজিটাল রূপান্তরের সমন্বয় করা হয় তবে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে ভেঙ্গে আরেকটি নতুন স্বতন্ত্র ও স্বয়ংসম্পূর্ণ মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করার প্রয়োজন ছিল না। বস্তুত ডিজিটাল বাংলাদেশ নামক যে স্বপ্নটি পুরো দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তার জন্য কেবল একটি এ টু আই নামক একটি প্রকল্প যথেষ্ট নয়। এজন্য সরকার তার যথাযথ চিন্তা থেকেই একটি আলাদা মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেই কি তার সফলতা পাওয়া যায়? প্রায় আট মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত হবার পর এ প্রসঙ্গে কিছুটা হতাশার কথাই বলা যাবে। বিশেষ করে সেই মন্ত্রণালয়ের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেনের দায়িত্বপ্রাপ্তিকে অনেকেই একটি সেটব্যাক হিসেবে দেখেছিলেন। পদ্মা সেতুর জটিলতায় সৈয়দ আবুল হোসেন স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ ও হতাশ ছিলেন। তিনি দুর্নীতিবাজ বলে বিশ্বব্যাংকের তারস্বরে চিৎকার তাকে অবশ্যই অস্থির করেছিল। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সেই কারণেই হয়ত সাত মাস যাবত তার নেতৃত্বে এই মন্ত্রণালয়টি প্রায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে।
আমাদের জন্য এটি খুব সুখের ছিল না এটি জেনে যে, মন্ত্রী মহোদয় নিজেও তার ডিমোশনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। অন্যদিকে মন্ত্রণালয়টি সৃষ্টি করার পর তার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে না তোলা কোনভাবেই একটি সুস্থির কাজ ছিল না। মন্ত্রী মহোদয় বা সচিবের যেমন বসার জায়গা নেই তেমনি এখনও নেই জনবল। এই মন্ত্রণালয়ের প্রথম সচিব জনাব রফিকুল ইসলাম বস্তুত তাঁর ব্রিফকেসে অফিস করে গেছেন। ঢাল তলোয়ার ছাড়াই তিনি কোনভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আমরা তাঁকে সক্রিয় দেখলেও মন্ত্রণালয় বলতে বিসিসি ছাড়া আর কিছু চোখে দেখিনি। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে অন্তত একজন দায়িত্বশীল-কর্মঠ মন্ত্রী ও সচিবালয়ে একটি বসার জায়গা পেলেন। এছাড়াও একটি আমলাবাহিনীর সাথে কিছু কাজের কাজও পেয়েছেন।
অন্যদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে এখন নতুন সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন এ টু আই-এর প্রকল্প পরিচালক জনাব নজরুল ইসলাম খান। এই মন্ত্রণালয়ের প্রতি তার সাড়া দেবার প্রবণতা খুব সঙ্গতকারণেই অনেক বেশি হবে। কারণ এ টু আই প্রকল্পে থাকাকালে তিনি এই বিষয় নিয়ে চরকির মতো ঘুরে বেরিয়েছেন। এখনও তিনি সেই কাজটিই করতে থাকবেন। কিন্তু তাকে যদি একটি যথাযথ বসার জায়গা, অবকাঠামো ও জনবল প্রদান করা না হয় তবে তিনিও ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত থাকবেন। অন্যদিকে তার কাজের পরিধি যদি বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাজের কাটাছেড়া অংশই থাকে তবে সেটি কোনভাবেই একটি কার্যকর মন্ত্রণালয় হবে না। আমরা বহুবার বলে আসছি যে, টেলিযোগাযোগ বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে এমনটাই সম্পৃক্ত যে এখন তাকে আর আলাদা করার উপযোগিতা নেই। এই মন্ত্রণালয়টিকে টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু অংশ যুক্ত করা হলে কেবল যে কাজের ধারাবাহিকতা সহজ হবে তাই নয়, কাজের বিন্যাসও সুন্দর হবে। তবে বর্তমান টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজুকে অনুগ্রহ করে তার বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেবেন না। কারণ আমরা বিগত সময়ে এই মন্ত্রণালয়টির অথর্বতা দেখেছি।
যা হোক, প্রধানমন্ত্রী নিজে স্থির করবেন তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়গুলোর কাকে কি কাজ দেবেন। তবে আমি মনে করি কতগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সরকারকে বিবেচনা করতে হবে। ১) নতুন মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন দক্ষ, বিজ্ঞ ও সচল ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হোক। ২) এই মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি কার্যালয় ও তার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো গড়ে তোলা হোক।
আমরা লক্ষ্য করেছি যে, এই মন্ত্রণালয়ের প্রচুর কাজ জমে আছে। সেজন্যই আমি অনুরোধ করব, সেই কাজগুলো সম্পন্ন করা হোক। আমি এখানে কয়েকটি অতি জরুরি কাজের তালিকা পেশ করছি। ক) ডিসেম্বরে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠিত হবার কথা। সেই অর্থে হাতে সময় নেই। এখনই তার কাজ গুছিয়ে নেয়া হোক। খ) বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের একটি মাত্র সভা হয়েছে। এর পরবর্তী সভাটি অনুষ্ঠান করা খুবই জরুরি। এই কাজটিও এই মন্ত্রণালয়ের। একে অগ্রাধিকার দেয়া হোক। গ) ২০০৯ সালের আইসিটি পলিসি পুনর্মূল্যায়ন করে ৪২টি কর্মপরিকল্পনার একটি অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করে তার পর্যালোচনা চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেই বিষয়ে বহুদিন যাবত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অথচ ডিজিটাল বাংলাদেশ নীতিমালার নবায়ন ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ঘ) গত কয়েক মাস যাবত এই মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তোলার যেসব কাজ করছিল তা বন্ধ হয়ে আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মসূচী ও প্রকল্প অনুমোদনবিহীনভাবে পড়ে আছে। অবিলম্বে সেই প্রকল্পগুলো কাজে রূপান্তর করা দরকার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব প্রকল্পের মাঝে তথ্যপ্রযুক্তিকে বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও গবেষণার কাজও আছে। এমনকি বাংলা ইউনিকোডও এখন পর্যন্ত আইএসও/ইউনিকোডে কনেসোর্টিয়ামে পেশ করা হয়নি। ঙ) সবচেয়ে জরুরী যে কাজটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাই সেটি হলো ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠার কাজটি অবিলম্বে সম্পন্ন করা। এই মন্ত্রণালয়ের হাতে সচিবালয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করার একটি প্রকল্প থাকলেও বিগত পৌনে চার বছরে সকল মন্ত্রণালয়ের কাজের ধারাকে ডিজিটাল করার জন্য যত পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেইসব কাজে তেমন কোন পরিকল্পনাও চোখে পড়ে না। চ) সরকারের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ডিজিটাল সরকারের উপযোগী করার জন্য মানব সম্পদ উন্নয়নের কোন পদক্ষেপও আমি দেখছি না। আমি জানি না সরকারের লাখ লাখ কর্মচারী ডিজিটাল সরকারের কেমন জনসম্পদ হবে।
আমরা আমাদের স্বপ্নের স্বদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে দেখতে চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের একুশ শতকের সোনার বাংলা। আমরা চাই শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রণালয় সেই সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব¡ প্রদান করুক। পদ্মা সেতুর ফাকের মাঝে এই মন্ত্রণালয়টিকে ফেলে রাখা ঠিক হবে না।
শেষ টোকা : পাবলিক পরীক্ষার চাইতে বড় মেধা যাচাই আর কিভাবে হতে পারে? সম্প্রতি মেডিক্যালের ভর্তি এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে করার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেবার প্রেক্ষিতে কিছু লোক তার বিরোধিতা করে যাচ্ছে। বিরোধিতাকারীরা বলছে যে, এর ফলে মেধা যাচাই করা হবে না। আমি একটি বিষয় বুঝতে অক্ষম যে, ১২ বছরের শিক্ষাজীবনে দুটি পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় দু’ডজন পেপারে যে মেধা যাচাই করা হয়েছে, দেশব্যাপী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে ফলাফল তৈরি হয়েছে একটি ছোট ভর্তি পরীক্ষায় তার চাইতে ভাল করে মেধা যাচাই করা হবে কেমন করে? আর যদি সেটিই হয় তবে পাবলিক পরীক্ষার প্রয়োজন কি? বরং সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি, প্রকৌশল, মেডিক্যালসহ সকল পরীক্ষায় পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলকেই মেধার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। আগামীতে প্রয়োজনে জুনিয়র ও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাকেও মানদ-ে রাখা যেতে পারে।

ঢাকা, ২৫ আগস্ট ২০১২ ॥ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর প্রণেতা ॥ ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net

No comments

Powered by Blogger.