চিকিৎসক নিতাইয়ের প্রধান খুনী মিন্টু গ্রেফতার- সাত দিনের রিমান্ডে

চিকিৎসক নেতা ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যাকান্ডে জড়িত প্রধান খুনী মিন্টুকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ নিয়ে ডা. নিতাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ৬ জন গ্রেফতার হলো। সদ্য গ্রেফতারকৃত মিন্টু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ডা. নিতাইয়ের গাড়িচালক জড়িত বলে দাবি করেছে।


মিন্টুকে ৭ দিনের এবং ইতোপূর্বে ডিবির হাতে গ্রেফতারকৃত ৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মামলাটির তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ২২ আগস্ট বুধবার রাত সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ওয়াই/২ নম্বর শিক্ষক কোয়ার্টারের ডুপ্লেক্স সরকারী বাসভবনে নির্মমভাবে খুন হন ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই (৪৭)। পরদিনই প্রথমে ৩ জনকে এবং পরে একজনকে আটক করে বনানী থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এরপর গত ২৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মাসুদ ওরফে পেদা (২৮), সাইদুল (৩৮), পিচ্চি কালাম (৩৫) ও ফয়সালকে (৩২) সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ২টি স্টিলের রক্তমাখা ছোরা, ১টি লোহার চাপাতি, গ্রীল ভাঙ্গার ২টি শাবল, হত্যাকারীদের দুই জোড়া স্যান্ডেল, ডা. নিতাইয়ের ১টি রক্তমাখা লুঙ্গি, ১টি রক্তমাখা তোয়ালে, ১টি রক্তমাখা সেন্ডো গেঞ্জি ও লুণ্ঠিত ৪ জোড়া হাতের চুড়ি। এদিকে র‌্যাবও ডা. নিতাই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত কামালকে (৩০) গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নেয় মামলাটির তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
রিমান্ডে দেয়া তথ্যমতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শহীদুল্লাহর তদারকিতে সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল শুক্রবার রাতে সিলেটে অভিযান চালায়। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে সিলেটের বাদাম বাগিচার ৩৮/৪ নম্বর সেতুবন্ধন নামক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় প্রধান খুনী মিন্টুকে। রাতেই মিন্টুকে ঢাকায় আনা হয়।
শনিবার দুপুর ১২টায় মিন্টুকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ বিভাগে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। ডিসি ডিবি মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে, মিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিন্টু ডা. নারায়ণ হত্যার প্রধান আসামি। মিন্টু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ঘটনায় অংশ নেয় ৭ জন। এর মধ্যে ৪ জন দু’তলার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে। কিন্তু ডাক্তার নারায়ণ চন্দ্র টের পেয়ে যাওয়ায় ডাকাতরা ডাক্তারকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করে। এতে ডাক্তার তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় এই সঙ্গে ডাকাতদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে মিন্টু ডাক্তারকে কয়েকটি ছুরিকাঘাত করে। এই ছুরিকাঘাতেই ডা. নারায়ণ চন্দ্রের মৃত্যু হয়।
এদিকে গ্রেফতারকৃত মাসুম মিন্টুর দাবি, ডা. নিতাইয়ের গাড়িচালক কামরুল হাসান অরুণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। গাড়িচালক তাদের জানায়, ডা. নারায়ণের বাসায় জমি বিক্রির ২০ লাখ টাকা ও ১শ’ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার আছে। এ তথ্যের ভিত্তিতেই তারা ডা. নারায়ণের বাসায় ডাকাতি করতে যায়।
নারায়ণ চন্দ্রের পরিবার জানায়, ২০১১ সালের ১১ নবেম্বর অরুণ ডা. নারায়ণের গাড়িচালক হিসেবে কাজ শুরু করে। ঈদের আগে অরুণ বাড়ি যাওয়ার কথা বলে ছুটি নেয়। তবে হত্যাকা-ের দিন অরুণ ঢাকায় ছিল। লাশের সঙ্গে গাড়ি চালিয়ে অরুণ চট্টগ্রাম যায়। চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শ্মশানে ডা. নিতাইয়ের মরদেহ রেখে ঢাকায় আসার কথা বলে অরুণ ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর থেকেই অরুণ লাপাত্তা বলে জানিয়েছেন ডা. নিতাইয়ের স্ত্রী মহাখালী জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ডা. লাকী দত্ত।
মিন্টু নিজেকে পেশাদার চোর দাবি করে সাংবাদিকদের আরও জানায়, সে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বসবাস করে। সাইদ ও বকুল নামে দু’জন পেশাদার চোরের সঙ্গে সেও ডা. নারায়ণের বাড়িতে চুরি করতে যায়। ঘরে ঢোকার পর ডা. নারায়ণ ঘুম থেকে জেগে উঠেই চিৎকার দেয়। তখন প্রথমে এস ডা. নারায়ণের বুকে ছুরিকাঘাত করে। এতে ডা. নারায়ণ আরও চিৎকার করা শুরু করলে বকুলও ডাক্তারকে ছুরিকাঘাত করে। ইতোপূর্বে কয়েকবার চুরি করার দায়ে সে গ্রেফতার হয়েছিল। চুরি করার উদ্দেশ্যেই সে রাজধানীর নীলক্ষেত চাঁদনীচক মার্কেটে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন দোকানে চাকরি নিত। সর্বশেষ সে চাঁদনীচকের ওড়না হাউস নামের একটি দোকানে চাকরি করে। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে।
কোর্ট রিপোর্টার জানান, ডা. নিতাই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গাজী আতাউর রহমান মিন্টুকে সিএমএম আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। বিচারক হাসিবুল হক শুনানী শেষে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই আদালতে একই মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত মাসুদ ওরফে পেদা, সাইদুল, পিচ্চি কালাম ও ফয়সালকে সোপর্দ করে ফের ৭ দিনের করে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত শুনানি শেষে এ চারজনকে দ্বিতীয় দফায় ৪ দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। ইতোপূর্বে এ চারজনকে ৫ দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুুর করেছিলেন বিচারক।
ডিসি ডিবি মোল্যা নজরুল আরও জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যমতেই ডা. নিতাই চন্দ্রের গাড়িচালক অরুণকে গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে। অরুণকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে ডা. নিতাই খুনের আরও রহস্য জানা যাবে। হত্যাকা-ের পেছনে চুরি বা ডাকাতি ছাড়াও আরও কোন কারণ বা উদ্দেশ্য আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.