৫০ বছর পর ক্ষমা প্রার্থনা-ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম

গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ের শারীরিক জটিলতা কাটানোর ওষুধ থালিডোমাইড নিষিদ্ধ হওয়ার ৫০ বছর পর দুঃখ প্রকাশ করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক জার্মান কম্পানি গ্রুনেনথাল। পঞ্চাশের দশকে বাজারে আসা ওষুধটির কারণে ১০ হাজারেরও বেশি শিশু শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়। ১৯৬১ সালে ওষুধটি নিষিদ্ধ করা হয়।


গ্রুনেনথালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেরাল্ড স্টক গত শুক্রবার ওই ওষুধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে সকালের দিকে মায়েদের যে বমি ভাব বা অস্বস্তি তৈরি হয়, এর চিকিৎসায় থালিডোমাইড ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতো। জার্মান ওষুধ কম্পানি গ্রুনেনথাল গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে এটি বাজারে আনে; কিন্তু ওষুধটির মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই ওষুধের কারণে হাত-পা-হীন বা অস্বাভাবিক প্রত্যঙ্গের শিশু জন্ম নেওয়ার ঘটনা ঘটে। গর্ভধারণকালে মা থালিডোমাইড নেওয়ার কারণে অনেক শিশুই অন্ধত্ব, বধিরতা, হৃৎপিণ্ডের ও মস্তিস্কের সমস্যা নিয়ে জন্ম নেয়। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপানে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ওষুধের কারণে জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ এখনো বেঁচে আছে। গ্রুনেনথালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেরাল্ড স্টক গত শুক্রবার থালিডোমাইডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে দুঃখ প্রকাশ করেন। পশ্চিম জার্মানির স্টোলবার্গে জন্মগত ত্রুটিসম্পন্ন একটি শিশুর ভাস্কর্য উন্মোচন করেন তিনি। গ্রুইনেনথাল কম্পানিও ওই শহরে অবস্থিত। স্টক বলেন, 'প্রায় ৫০ বছর পর আমরা আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে ক্ষমা চাওয়ার উপায় খুঁজে না পাওয়ার কারণেই এত দেরি হলো। আমাদের দীর্ঘদিনের নীরবতাকে আপনারা আঘাত-পরবর্তী নিস্তব্ধতা হিসেবে দেখবেন। আপনাদের দুর্ভাগ্য দেখে সেই আঘাত আমরা পেয়েছিলাম। আমরা চাইব, থালিডোমাইডের মতো দুর্ঘটনা আর চাই না। জন্মগত ত্রুটিসম্পন্ন ব্যক্তি, তাদের পরিবার এবং বিশেষ করে তাদের মায়েদের দুর্ভোগ ও মানসিক চাপের বিষয়গুলো অনুধাবন করেছি আমরা।'
তবে থালিডোমাইডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সংগঠনগুলো গ্রুনেনথালের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। থালিডোমাইড ইউকে নামের সংগঠনের পরিচালক মার্টিন জনসন বলেন, 'তারা দুঃখ প্রকাশের জন্য দীর্ঘ সময় লাগিয়েছে। থালিডোমাইডের কারণে বিশ্বের বহু লোককে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা গ্রুনেনথালের দুঃখ প্রকাশকে স্বাগত জানাচ্ছি; কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টিও ভাবা উচিত তাদের।' সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.