মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ব্যতিক্রমী, মডেল বিবেচিত হবে- আইনে মানবিক দিক রয়েছে by বিকাশ দত্ত

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে সব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেখানে বিচারের আগে আসামিদের ৬ থেকে প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত আটক রাখা হয়েছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশে যে মানবতাবিরোধীদের বিচার হচ্ছে তা থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।


দীর্ঘ সময় ধরে কম্বোডিয়ার সাবেক সোশ্যাল এফেয়ার্সমন্ত্রী লেং থিরিক একজন মহিলা ও অসুস্থ সত্ত্বেও জামিন বিবেচনা করা হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আদেশে আটক আছেন। সে ক্ষেত্রে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন রিপোর্ট দায়ের না করা পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। ট্রাইব্যুনালের আদেশে বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম মুক্ত আছেন (শর্তসাপেক্ষে জামিন)। প্রসিকিউটর ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অনেক দেশের আইনের চেয়ে আমাদের দেশের আইনটিতে মনিবিক দিক রয়েছে। যাদের আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে অন্য মামলা ছিল। পরে শোনএ্যারেস্টে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল অন্যান্য দেশের ট্রাইব্যুনালের কাছে মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কঙ্গোর রাজনৈতিক নেতা থমাস লুবাংগা, সার্বিয়ান রেডিক্যাল পার্টির নেতা বজিসøাভ সেসেলি, লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টেইলরের, এক্সট্রা অর্ডিনারি চেম্বার্স অব দ্য কোর্ট অব কম্বোডিয়া) জাতিসংঘ সমর্থিত আরেকটি হাইব্রিড কোর্টে প্রথম মামলায় অভিযুক্ত ডাচ, ডেমোক্র্যাটিক কম্পুচিয়ার সাবেক সোশ্যাল এফেয়ার্সমন্ত্রী লেং থিরিসকে বিচারের আগে দীর্ঘদিন ধরে আটক রাখা হয়। সেখানে মানবাধিকার নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেনি। বিচারে তাদের অনেকের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। আবার অনেকের বিচার চলছে।
নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আই.সি.সি’র (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) প্রথম অভিযুক্ত কঙ্গোর রাজনৈতিক নেতা থমাস লুবাঙ্গা প্রাকবিচারপর্ব থেকে বিচার চলাকালে প্রায় ৬ বছর আটক ছিলেন। ১৬ মার্চ ২০০৬ থেকে তিনি আইসিসি’র ডিটেনশন সেলে আটক ছিলেন। ২৬ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে তার বিচার শুরু হয় এবং মৌখিক সমাপনী বক্তব্য শেষ হয় ২৫ ও ২৬ আগস্ট ২০১১ সালে। অবশেষে ১৪ মার্চ ২০১২ তারিখে রায় প্রদান করা হয়। বিচারে তার ৩০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে।
সার্বিয়ান রেডিক্যাল পার্টির নেতা বজিসøাভ সেসেলি বসনিয়া হার্জেগোভিনায় ১৯৯১-৯৪ সালে নন-সার্ব জনগোষ্ঠীর প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে এখন আইসিসিতে বিচারের সম্মুখীন। বিচারের জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ সালে তাকে ট্রাইব্যুনালের কাস্টোডিতে নেয়া হয়। বিচার শুরু হয় ৭ নবেম্বর ২০০৭ তারিখে । অর্থাৎ আটক করার সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পরে বিচার শুরু হয়। ১৩ জানুয়ারি ২০১০ থেকে মোট ৭২ সাক্ষী প্রসিকিউশন পরীক্ষা করে। অভিযুক্ত কোন সাক্ষী পরীক্ষা করেনি। এখানে স্পষ্ট দেখা যায়, অভিযুক্ত বজিসøাভ সেসেলি দীর্ঘ ৯ বছর আটক ছিলেন।
লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টেইলরের বিচার হয় জাতিসংঘ সমর্থিত এস.সি.এস.এল (স্পেশাল কোর্ট ফর সিয়েরা লিয়ন)। গ্রেফতারের পর তাকে ২৯ মার্চ ২০০৬ সালে সিয়েরা লিয়নের স্পেশাল কোর্টে হস্তান্তর করা হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে তার বিচার অনুষ্ঠিত হয় নেদারল্যান্ডসের হেগে এবং এ কারণে ৩০ জুন ২০০৬ সালে তাকে হেগে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে ৭ জানুয়ারি ২০০৮ সালে তাকে প্রথম প্রসিকিউশন পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এর পর ডিফেন্সের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় ১২ নবেম্বর ২০১০ তারিখে। উভয় পক্ষের সমাপনী বক্তব্য শেষে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। চার্লুস টেলর প্রাকবিচার পর্ব থেকে দীর্ঘ ৬ বছর আটকাবস্থা ছিলেন।
ই.সি.সি.সি (এক্সট্রা অর্ডিনারি চেম্বার্স অব দ্য কোর্ট অব কম্বোডিয়া) জাতিসংঘ সমর্থিত আরেকটি হাইব্রিড কোর্ট। এখানে দেখা যায়, প্রথম মামলায় অভিযুক্ত ডাচকে ই.সি.সি.সিতে হস্তান্তরের তারিখ থেকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ১০ বছর আটক রাখা হয়। বিচারিক চেম্বার কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত করে ৩৫ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে সুপ্রীমকোর্ট চেম্বার আপীল শুনানি করে ঐ সাজা রদ করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেন।
ই.সি.সি.সিতে দেখা যায় যে, ডেমোক্র্যাটিক কম্পুচিয়ার সাবেক স্যোশাল এফেয়ার্স মন্ত্রী লেং থিরিস (৮৬) চার বছর হলো আটক আছেন গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে। নবেম্বর ২০১১ সালে তাকে বিচারের জন্য অনুপযুক্ত ঘোষণা করা হলে আপীল চেম্বার এই আদেশ করে। এবং অভিমত দেন যে, বিচার কার্যক্রম চলাকালেও তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে। এই অভিযুক্ত একজন নারী এবং ৮৬ বছর বয়স্ক যার বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু সেটিকেও ই.সি.সি.সি এর আপীল চেম্বার আমলে নেননি। বা তাকে সাময়িক মুক্তিও দেয়া হয়নি। তার বিচার চলছে। ১২ নবেম্বর ২০০৭ সাল থেকে দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময় ধরে আটক রয়েছেন ৮৬ বছর বয়স্কা লেং থিরিস।
বিদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ট্রাইব্যুনালগুলোতে এতদিন আটক থাকার পরও বিশ্বের কোন সংস্থার উদ্বিগ্ন ও অবস্থান লক্ষ্য করা যায় না। সেখানে বলা হয়নি, নারী অভিযুক্ত লেং থিরিথকে আই.সি.সি.পি আর লঙ্ঘন করে ‘স্বেচ্ছাচারমূলকভাবে’ আটক করে রাখা হয়েছে। আই.সি.টি.ওয়াইসহ অন্যান্য ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন অনুশীলনসহ সিদ্ধান্ত হতে এটি পরিষ্কার যে, বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা প্রদানের আগে কোন অভিযুক্তকে আটক না রাখা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদ- আদৌ কঠোরভাবে অনুসৃত ও অনুশীলিত হয় না। বরং এই অনুশীলনে দেখা যায় যে, অভিযুক্তকেই এটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে, তার আটক অনাবশ্যক।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক এ্যাম্বাসেডর-এ্যাট-লার্জ স্টিফেন জে. রেপ ২০১১-এর প্রথমভাগে ঢাকা সফরে এসে এই মন্তব্য করেছিলেন যে, প্রাকবিচার পর্যায়ে অভিযুক্তের আটক আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত বা স্বীকৃত, তবে পিরিওডিক্যালি তা রিভিউড হওয়ার বিধান থাকা উচিত। এ বিষয়টি সম্পর্কে একেকটি দেশে একেক রকম বিধি বিধান। কম্বোডিয়াতে ৩ বছর পর্যন্ত প্রাকবিচার পর্যায়ে আটক রাখার বিধি রয়েছে। প্রাকবিচার পর্যায়ে আটক রাখাটাকে তাই সরাসরি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলা যাবে না। (প্রেস কনফারেন্স ১৩ জানুয়ারি, ২০১১, ঢাকা)।
সেদিক দিয়ে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে অনির্দিষ্টকালের জন্য কোন অভিযুক্ত আটক রয়েছে তা বলারও কোন সুযোগ নেই । যদি সামগ্রিকভাবে তাদের আটক হওয়ার তারিখ, তদন্ত শেষে ফরমাল চার্জ দাখিল এবং মামলাগুলো কি পর্যায়ে রয়েছে তা কার্যকরভাবে বিবেচনা নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করাটাও ‘ফেয়ার ট্রায়াল’-এর একটি অন্যতম শর্ত। এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এখানে আলোচনার শুরুতে যে সব ‘এ্যাডহক’ ও ‘হাইব্রিড’ ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ দেয়া হয়েছে তা থেকে এটি দেখা যায় যে, সেখানে আদৌ এত স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শুরুই হয়নি। কিন্ত বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালে ২০১১ নবেম্বর হতে এ পর্যন্ত ৮টি মামলারই বিচার কাজ শুরু হয়েছে। একটি মামলার প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষী আজ (২ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হবে। আরও কয়েকটি মামলার প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষ্য অগ্রগতি রয়েছে। এ সব মামলা সূত্রে চারজন সর্বোচ্চ ২ বছর হলো। ট্রাইব্যুনাল যথাযথ কারণ উল্লেখ অপরাধের প্রকৃতি, অভিযুক্তের প্রাইমাফেসি সম্পৃক্ততাসহ সার্বিক বিবেচনায় বিচারিক আদেশ প্রদানের মাধ্যমে তাদের অনুরূপ আটক রাখা সমীচীন মর্মে আদেশ দেন। এ রূপ আদেশ কোন বিবেচনাতেই ‘আর্বিট্রারি’ নয়।
প্রসিকিউশন সূত্র থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোন অভিযুক্তকে অগ্রহণযোগ্য কোন অজুহাতে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ আটক রাখা হয়েছে এমন দাবি করা একেবারেই অযৌক্তিক এবং চরমভাবে তা বিভ্রান্তিকরও বটে। জাতিসংঘের অধীনে গঠিত আই.সি.টি.ওয়াই, আইসিটিআর, এস.সিএস.এল, ই.সি.সি.সিতে কি এই নীতি আক্ষরিক অর্থেই অনুশীলন করা হয় যে, প্রাকবিচার পর্বে ও বিচার শুরুর পরে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোন অভিযুক্তকে আটক রাখাটা ‘ব্যতিক্রম’ কোন ‘নিয়ম বা বিধি’নয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, এটা আইনের গ্রেফতার সম্পর্কে সব কিছু বলা আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাজিদের ক্ষেত্রে এটা করা হয়েছিল। কারণ তারা দ্রুত পালাচ্ছিল। তাদের গ্রেফতার করা উচিত ছিল। আমি মনে করি অনেক দেশের আইনের চেয়ে আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে মানবিক রয়েছে। যদি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযুক্তরা বাইরে থাকে এরা বিভিন্ন ধরনের অপকৌশল চালাবে। পালিয়ে যাবে। সুতরাং তাদের কাস্টডিতে নেয়া উচিত, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল, তাদের অনেককেই অন্য মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর শোনএ্যারেস্ট করা হয়েছে। একজন যুদ্ধাপরাধী অবশ্যই অন্য অপরাধ করতে পারে। চার্জ ফ্রেম করার পর পরই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত বলেছেন, আইসিটি আইনে আছে তদন্তকালে যার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তাকে আটক রাখার ক্ষমতা আছে। এ ক্ষেত্রে দেখবেন গোলাম আযমকে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন রিপোর্ট দায়ের না করা পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। যেখানে দীর্ঘসময় ধরে লেং থিরিক একজন মহিলা ও অসুস্থ সত্ত্বে¡ও সেখানে জামিনের কনসিডার করা হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আদেশে আটক আছেন। ট্রাইব্যুনালের আদেশে বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম মুক্ত আছেন (শর্তসাপেক্ষে জামিন)।
সেদিক থেকে যাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলছেন তা আসলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য অপকৌশল ও অপপ্রচার। আন্তর্জাতিক অপরাধের মামলা হচ্ছে, সেখানে তিন মাস ধরে তদন্ত কর্মকর্তাকে নানান কার্যদিবসে জেরার ইতিহাস আদৌ আছে কিনা তা দেখার বিষয় আছে। ট্রাইব্যুনাল সুষ্ঠু বিচারের জন্যই এটা করেছে। আসামি যাতে ন্যায়বিচার পায় ইতোমধ্যে তার স্বাক্ষর রেখেছে।
যদিও প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে বলছি এটা বিচার বিলম্বের বিষয়। এই মামলার সঙ্গে সঙ্গতি নয়। এমন সুযোগ ট্রাইব্যুনাল দিয়েছে। প্রসিকিউশনের কাছে মনে হয়েছে বিচার বিলম্বিত করার কৌশল হিসেবে এমন অনেক অবাস্তব জেরা ডিফেন্স করেছে। ট্রাইব্যুনালও সুযোগ দিয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে মামলার অভিযোগের বর্ণনার সঙ্গতিপূর্ণ নয়। দ্বিতীয়ত হলো, যেখানে বিদেশে ট্রাইব্যুনালগুলোতে ৬ বছর থেকে ১০ বছর ধরে বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৫ মার্চ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এর পর ২০১১ সালের অক্টোবরের দিকে এক বছরের তদন্ত কর্মকর্তারা ১ বছর ৪ মাসে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এবং দাখিল করার কম সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হলো। এর পর এক বছর যাইনি, এই স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সাক্ষ্যপ্রমাণ শুরু হয়েছে। কয়েকটি শেষ পর্যায়ে, আবার কয়েকটি মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। তাহলে আমাদের আইনে একটি কথা বলা আছে আসামি যাতে স্বল্পতম সময়ে ন্যায়বিচার পায় তা নিশ্চিত করা।
প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত আরও বলেছেন, এ ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব বিচার নিষ্পন্ন করা এবং অধিকতর মামলা নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে অধিকতর বিলম্ব যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা এবং ট্রাইব্যুনালের নজর রাখার ব্যবস্থা করা। লক্ষ্য করা যায় আইন ও বিধি প্রচলিত আইন ও বিধির সাথে সাজস্য রেখেই বিচার কার্যক্রম চলছে। এই বিচার কার্যক্রম চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ থেকেই কোন রকমের বিচার চলমান কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোন আপত্তি উত্থাপন করা হয়নি। তারা মাঝামাঝি কিছু আবেদন জানাচ্ছে আর সেগুলোর মধ্যে দেখা গেল যে, কোন রাজনৈতিক জনসভায় কোন নেতা কি বললেন সেটা নিয়ে আবেদন দায়ের করা অথবা কোন নাগরিক সমাজের কোন প্রতিনিধি যদি ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সাক্ষাত করে ট্রাইব্যুনালের ভৌত অবকাঠামো এবং সবার জন্য আসামিসহ অধিকতর সুবিধা দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সাক্ষাত করে ট্রাইব্যুনালকে আবেদন জানায়, সেখানে দেখা যায় সেগুলোকে নিয়ে তারা নানা সময়ে আবেদন দায়ের করে এবং অগ্রহণযোগ্য আবেদনগুলো নিয়েও তারা বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে। ট্রাইব্যুনাল শুনানি গ্রহণ করে এবং আদেশ দেয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এর মধ্যে ২টি কাজ করছে। প্রথমত, মামলা বিলম্বিত করার কৌশল অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী বিচারটি বিলম্ব করার জন্য ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালায় সেই অপপ্রচারে একটি আইনগত রং দেয়ার অপপ্রয়াস।

No comments

Powered by Blogger.