লুটের কারবার-সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে

যে যেভাবে পারো, লুটেপুটে খাও- বর্তমান বাংলাদেশে এটাই যেন সবচেয়ে বড় সত্য, বড় বাস্তবতা। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ কিংবা জনগণের অর্থ লুটেপুটে খাওয়ার যেন রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে চারদিকে। আর প্রশাসন যেন একচোখা হাতি। তারা লুটেরাদের দেখতে পায় না অথবা দেখেও দেখে না।


আর সৎ কিংবা দুর্বল মানুষের ওপর খৰ চালাতে তারা খুবই সিদ্ধহস্ত। ফলে রাষ্ট্র ও সমাজে ক্রমেই ভারসাম্যের সংকট তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্রও এসব ব্যাপারে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।
দেশে দুই হাজারের বেশি গার্মেন্ট কারখানা শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। কেবল শতভাগ রপ্তানিমুখী কারখানায় ব্যবহারের জন্য আনা এসব কাপড় বা কাঁচামাল বহু কারখানাই অবাধে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে এবং প্রচুর অবৈধ মুনাফা লুটছে। এ ব্যাপারে গতকালের (১ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইসলামপুরসহ দেশের বড় বড় কাপড়ের বাজারে এখন এই অবৈধ ব্যবসারই জয়জয়কার। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন এসব খাতের বৈধ আমদানিকারকরা, যাঁরা শুল্ক দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করছেন। তাঁদের ব্যবসা এখন লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে। প্লাস্টিক শিল্পেরও প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠান একই সুবিধা পাচ্ছে। এখানেও অনেক প্রতিষ্ঠান মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজস্ব প্রয়োজনের বাইরে প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল আমদানি করছে এবং সেগুলো কম দামে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে যাঁরা শুল্ক দিয়ে এসব কাঁচামাল আমদানি করছেন, তাঁরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। এতে যে কেবল সৎ ও বৈধ ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা-ই নয়, বরং সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর দীর্ঘদিন থেকে এ প্রক্রিয়া চলে আসার কারণে এসব খাতে অবৈধ ব্যবসারই সম্প্রসারণ ঘটছে। এই অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে বলেও মনে হয় না। সরকারের রাজস্ব বিভাগ কিংবা বন্ডেড ওয়্যারহাউসের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। অথচ সাধারণ অডিটেও কার কতটুকু প্রয়োজন, কে কত আমদানি করছে এবং বিনিময়ে কতটুকু রপ্তানি করছে- সেগুলো নির্ধারণ করা যেত। অবৈধভাবে বাজারে বিক্রির জন্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও তা কখনো কার্যকর করতে দেখা যায় না। ফলে অবৈধ কর্মকাণ্ড কেবলই উৎসাহিত হচ্ছে।
প্রায় একই অবস্থা দেখা যায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিতরণের ক্ষেত্রে। গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে সরকার নতুন সংযোগ প্রদান বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু এ সময় বৈধভাবে সংযোগ প্রদান বন্ধ থাকলেও অবৈধভাবে কোনো সংযোগ প্রদানই বন্ধ থাকেনি। এ ব্যাপারে পত্রপত্রিকায় অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পেট্রোবাংলার হিসাব উদ্ধৃত করে প্রকাশিত একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের জুলাই মাসে আবাসিক খাতে গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ ঘোষণার সময় দৈনিক গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট। গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি ঘনফুট বেশি এবং এর কোনো মূল্য সরকারি কোষাগারে জমা হয় না। এই বিপুল পরিমাণ গ্যাসের সংযোগ কারা দিয়েছে? বিনিময়ে তারা কত হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে এবং নিচ্ছে? সরকার কি তাদের ধরার বা শাস্তি প্রদানের কোনো উদ্যোগ নিয়েছে? বরং কোষাগারের ঘাটতি মেটাতে গিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষের ঘাড়ে নতুন করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে সমাজে অন্যায় বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.