আবারও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা-সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন

কিছুকাল আগে এসিড-সন্ত্রাস বা এসিড নিক্ষেপের মাত্রা এতটাই প্রবল ছিল যে শুধু দেশের জনগণ নয়, আন্তর্জাতিক মহল ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন তা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশের সরকার, জনগণ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পাশবিক এই কর্মকে প্রতিরোধের জন্য সচেষ্ট থাকার কারণে এসিড নিক্ষেপ কিছুটা কমেছে বলে মনে হয়েছে।


কিন্তু এই জঘন্য অপরাধ যে বাংলাদেশ থেকে এখনো উঠে যায়নি বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা যায়নি তারই প্রমাণ মিলল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকায় কিশোরীসহ পরিবারের সদস্যদের ওপর এসিড নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, ১৩ বছরের কিশোরী স্কুলছাত্রী শিল্পী আক্তারকে উত্ত্যক্ত করত একই গ্রামের ২৫ বছর বয়সের এক বখাটে যুবক। বিষয়টি শিল্পী তার বাবা মুসলিম উদ্দিনকে জানালে তিনি অভিভাবক হিসেবে আইনের আশ্রয় নেন। তিনি মামলা করলে রনি গ্রেপ্তার হয় এবং ১৮ দিন জেলহাজতে থেকে বের হয়ে এসে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করা অব্যাহত রাখে এবং মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তার পরিবারকে হুমকি প্রদান করে। এরপর ৩১ আগস্ট সহযোগীদের নিয়ে বাড়িতে গিয়ে এসিড ছুড়লে ৫৫ বছর বয়স্ক বাবা মুসলিম উদ্দিন, শিল্পী নিজে এবং তার ছোট দুই ভাই ছয় বছর বয়সের শিশু রানা ও পাঁচ বছর বয়সী মনা আহত হয়। জানা গেছে, পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।
একটি কথা মনে রাখা দরকার, এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে যদি কোনো ধরনের গাফিলতি হয়, তাহলে এসিড নিক্ষেপের মতো জঘন্য অপরাধ সমাজ থেকে দূর হবে না। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এসিড নিক্ষেপের বিরুদ্ধে যাঁরা সোচ্চার, তাঁরা বহুকাল ধরেই এসিডের সহজলভ্যতা রোখার দাবি করে আসছেন। কিন্তু এসিড বিক্রি ও সরবরাহে এখন পর্যন্ত দেশে কোনো কড়া নজরদারির ব্যবস্থা হয়নি। বাজারগুলোতে যত্রতত্র হাতের নাগালেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের এসিড। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, ওষুধ প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আমরা এ দেশে এসিড নিক্ষেপের মতো বর্বরোচিত অপরাধের আর পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। পৃথিবীতে বহু দেশ রয়েছে, যেখানে একটিও এসিড নিক্ষেপের মতো অপরাধের নজির নেই। আমরা জানি, একজন এসিডদগ্ধ মানুষকে সারা জীবন দুঃসহ এক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হয়। যত দিন পর্যন্ত একটিও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটবে, তত দিন পর্যন্ত যেমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যাবে না, তেমনি নিজেদের সভ্য বলেও দাবি করা যাবে না। সুতরাং এ অপরাধ সমূলে বিনাশ করতে সরকারকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.