পবিত্র কোরআনের আলো-কেউ বিভ্রান্ত হয় আবার অনেকে হয় সুপথগামী

২৫। ওয়া বাশ্শিরিল্লাযিনা আমানু ওয়া আমিলুছ্ ছ্বালিহাতি আন্না লাহুম জান্নাতিন তাজরি মিন তাহতিহাল আনহারু; কুল্লামা রুজিকু মিনহা মিন ছামারাতির্ রিজকান; ক্বালু হা-যাল্লাযি রুজিক্না মিন ক্বাবলু; ওয়াঊতু বিহি মুতাশা-বিহা; ওয়ালাহুম ফি-হা-আযওয়াজুম্ মুতাহ্হারাতুন; ওয়া হুম ফি-হা খালিদুন।


২৬। ইন্নাল্লাহা লাইয়াছতাহ্য়ি আইয়াঁদ্বরিবা মাসালাম্ মা বাউদ্বাতান ফামা ফাওক্বাহা; ফাআম্মাল্লাযিনা আমানু ফাইয়া'লামুনা আন্নাহুল হাক্কু মির রবি্বহিম; ওয়া আম্মাল্লাযিনা কাফারু ফাইয়াকলূনা মা-যা আরাদাল্লাহু বিহাযা মাসালান; ইউদিল্লু বিহি কাছিরাওঁ ওয়াইয়াদি বিহি কাছিরান; ওয়ামা ইউদিল্লু বিহি ইল্লাল ফাসিকি-ন।
[সুরা বাকারা, আয়াত-২৫-২৬]

অনুবাদ
২৫। অতঃপর যারা ইমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে, তাদের আপনি সুসংবাদ দিন এমন এক জান্নাতের, যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত হতে থাকবে; যখনই তাদের (এ জান্নাতের) কোনো একটি ফল দেওয়া হবে তখনই তারা বলবে, এ ধরনের (ফল) তো ইতিপূর্বেও আমাদের দেওয়া হয়েছিল, তাদের এ ধরনের পরিচিত জিনিসই সেখানে দেওয়া হবে; তাদের জন্য আরো সেখানে থাকবে পবিত্র সহধর্মী ও সহধর্মিণী এবং তারা সেখানে অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে।
২৬। (সত্য প্রমাণের জন্য) আল্লাহ তায়ালা মশা কিংবা তার চেয়ে বেশি তুচ্ছ যা কিছু আছে তার উদাহরণ দিতেও লজ্জাবোধ করেন না; যারা আল্লাহর বাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা জানে, এ সত্য আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে, আর যারা সত্য অস্বীকার করেছে তারা (একে না মানার অজুহাত দিতে গিয়ে) বলে, আল্লাহ তায়ালা এ উদাহরণ দ্বারা কি বোঝাতে চান? (আসলে) একই ঘটনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা অনেক লোককে গোমরাহিতে নিমজ্জিত করলেও বহু লোককে তিনি আবার এ দিয়ে হেদায়েতের পথও দেখান, আর কিছু পাপাচারী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে তিনি তা দিয়ে গোমরাহিতে নিমজ্জিত করেন না।

ব্যাখ্যা
২৫ নম্বর আয়াতে যারা ইমান আনে এবং সৎ কাজ করে তাদের জন্য সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। আর সে সুসংবাদ হচ্ছে বেহেশতের সুসংবাদ। এ আয়াতে বেহেশতের প্রতীকী বিবরণ দেওয়া হয়েছে। বেহেশতের বিবরণ বেশ প্রতীকী এবং উপলব্ধির মাধ্যমে হৃদয়ঙ্গম করার বিষয়। আর এখানে 'ওয়াঊতু বিহি মুতাশা-বিহা' কথাটি আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থাৎ বেহেশত দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এটা পরজন্ম নয় বা জগতের চলমান গতি-প্রকৃতি থেকে ভিন্ন গতি-প্রকৃতিরও নয়। 'বেহেশত চিরন্তন'- এ কথার দ্বারা বোঝা যায়, বেহেশত আত্মিক।
২৬ নম্বর আয়াতে বিভ্রান্ত হওয়া এবং সুপথগামী হওয়ার মূল সূত্রটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মূল সূত্রটি হলো, যারা আত্মঅহমিকা বর্জন করে সত্যকে গ্রহণ করার জন্য মনেপ্রাণে প্রস্তুত হবে সে সত্যপথ পাবেই, আর যারা তা না করে নানা কুযুক্তি ও অজুহাত দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে তারা সুপথগামী হতে পারবে না। মশার চেয়ে তুচ্ছ বস্তুও আল্লাহর কাছে তুচ্ছ নয়। মানুষকে সুপথগামী করার জন্য সে বস্তুর উদাহরণও ব্যবহৃত হতে পারে, তবে তা নির্ভর করবে কে সুপথগামী হতে চায় আর কে চায় না এর ওপর। যাদের অন্তরে পাপ রয়েছে এবং তারা এতে লিপ্ত থাকতে চায়, তারা সুপথগামী হতে পারে না। অনেক যুক্তি-প্রমাণ ও ভালো উদাহরণ তাদের সামনে তুলে ধরার পরও তারা বিপথগামী হয়। আল্লাহ তায়ালা ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ছাড়া অন্য কাউকে বিপথগামী করেন না।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.