সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আজ চিঠি দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়কে- অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সাসপেন্ডের বিষয়টি অবহিত করা হবে

হলমার্ক কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আজ রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে অবহিত করবে। জানা গেছে, ওই চিঠিতে সম্ভাব্য দোষী কর্মকর্তাদের নাম, পদবী এবং বর্তমান কর্মস্থল, দায়িত্বে গাফিলতি ও সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করা হবে।


একই সঙ্গে সম্পূর্ণ বিষয়টির সুষ্ঠু তদারকির স্বার্থে ১৫-২০ দিন সময় চাওয়া হবে। খবর সোনালী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত সোনালী ব্যাংকের ২৯ কর্মকতাকে ৩১ আগস্টের মধ্যে বরখাস্তের নির্দেশ দেয়া হয়। ওদিকে সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে সুপারিশ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া চিঠির কার্যকারিতা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নিয়ে রীতিমতো কর্তৃত্বের লড়াই শুরু হয়েছে।
তবে এতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে, যে সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে সেই চিঠি ইস্যুর যৌক্তিকতা এবং বিবির যে কর্তৃত্ব আছে সে বিষয়ে তারা যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংক কোম্পানি অধ্যাদেশ ১৯৯১ এর ৪৬ (৬) ধারার আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ে ওই প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
আর অধ্যাদেশের ৪৬ (৬) ধারায় বলা আছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কার্যক্রম সম্পর্কে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে পারে এবং সরকার ওই প্রতিবেদনকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র আরও জানিয়েছে, সোনালী ব্যাংকের পর্ষদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত তাঁর পদাধিকার বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়ী ১৭ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। বরখাস্তকৃতদের মধ্যে ৬ জন রূপসী বাংলা শাখার, ৩ জন ঢাকা জিএম অফিসের এবং বাকিরা সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের।
সূত্রমতে, সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হচ্ছেন প্রধান কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন, এজিএম সাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ইজাজ আহমেদ, এসইও মোখলেসুর রহমান, নির্বাহী কর্মকর্তা (ইও) সোহরাব হোসেন, একরামুল হক ম-ল ও শাখা পরিদর্শক কামরুল হোসাইন খান।
রূপসী বাংলা শাখা থেকে বরখাস্ত হয়েছেন সিনিয়র অফিসার (এসও) উজ্জ্বল কিশোর ধর, তুষার কান্তি দাস, জেসমিন নাহার, মিহির চন্দ্র মজুমদার, জুনিয়র অফিসার (জেও) ওয়াকিল উদ্দিন আহমেদ ও অফিসার সাইদুর রহমান। ঢাকা জিএম অফিস থেকে বরখাস্ত হয়েছেন সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) গোলাম নবী, আশরাফ আলী পাটোয়ারী ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা (এসইও) ওয়াহিদ উদ্দিন আহমেদ।
এর আগে রূপসী বাংলা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক এ.কে.এম. আজিজুর রহমান (ডিজিএম) ও উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ সাইফুল হাসানকে (এজিএম) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল (সাবেক শেরাটন হোটেল) শাখা থেকে ২০১০-২০১২ সময়ে মোট ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপ একাই আত্মসাৎ করেছে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এছাড়া এই ব্যাংকের গুলশান ও আগারগাঁও শাখা থেকেও ১৪০ কোটি টাকা করে ঋণ দেয়া হয়েছে, যা তাদের ঋণ সীমার অনেক বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টিতে এই ধরনের দুর্নীতি পরিচালনা পর্ষদের নজরে আসেনি এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এজন্য বিবি কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করার জন্য সুপারিশ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.