কানাডীয় পুলিশের কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছে না দুদক- পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি by মহিউদ্দিন আহমেদ

রহস্যময় কারণে পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রাক যাচাইয়ে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের সহায়তা পাচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক এ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যম তথ্য চেয়ে কানাডিয়ান পুলিশের কাছে থাকা নথিপত্র পেতে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে জুন মাসের দিকে কানাডিয়ান পুলিশ বাংলাদেশে এসে দুদকের কাছে তথ্য-উপাত্ত হস্তান্তর করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে করে তদন্ত কাজ বিঘœ হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রাক যাচাইতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ১১ অক্টোবর তাদের অর্থায়ন স্থগিত করে। এরপর পদ্মা সেতুর সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের কানাডায় অবস্থিত হেড অফিসে অভিযান চালায় কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ। তাদের চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে লাভালিনের অফিস থেকে গ্রেফতার করে দেশটির পুলিশ। এই দুই কর্মকর্তাকে কানাডার ‘করাপশন অব ফরেন পাবলিক অফিসিয়াল’ আইনের আওতায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এখন তারা জামিনে রয়েছেন। গত কয়েক মাস তারা টরন্টোর আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়েছেন। জুন মাসের শেষর দিকে লাভালিনের সাবেক এ দুই কর্মকর্তার আদালতে হাজির করে প্রাথমিক শুনানির সময় ধার্য করা হয়েছে আগামী বছরের ১৮ ও ১৯ এপ্রিল। এ সময় রমেশের কাছ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার এবং ইসমাইলের ল্যাপটপ জব্দ করে পুলিশ। পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রাক যাচাইতে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের গঠিত তদন্ত কমিটি সুষ্ঠ তদন্তের স্বর্থে কানাডিয়ান মাউন্ডেট পুলিশের কাছে থাকা ওইসব তথ্য হাতে পাওয়ার জন্য এ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আবেদন করে। বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দিয়ে কানাডিয়ান পুলিশ তথ্য দিতে রাজি হন। এ বিষয়ে দুদক কর্মকর্তারা কানাডিয়ান পুলিশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর জুন মাসের ২৫ অথবা জুলাই মাসের ৩ তারিখে কানাডিয়ান পুলিশের একটি দল ঢাকায় এসে দুদক কর্মকর্তাদের কাছে নথিপত্র হস্তান্তরের তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কানাডিয়ান পুলিশ আর বাংলাদেশে আসেনি। এরই মধ্যে ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিল করে। তারপরও দুদক কর্মকর্তারা কানাডিয়ান পুলিশের কাছে এ সংক্রান্ত নথিপত্র চান। কিন্তু কানাডিয়ান পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন আশাব্যঞ্জক সাড়া পাচ্ছে না। এতে করে অভিযোগের অনুসন্ধান বিঘœ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান বিশ্বব্যাংক থেকে যাদের তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসবাদ প্রায় শেষ। আগামী ৩ সেপ্টম্বর সৈয়দ আবুল হোসেনের বক্তব্য নেয়া শেষ হলে উল্লেখযোগ্য আর কোন ব্যক্তি বাদ থাকবে না। তারপর বসে থাকতে হবে কানাডিয়ান পুলিশের কাছে থাকা তথ্যের জন্য। আর কানাডিয়ান পুলিশের ওই তথ্য ছাড়া পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রাক যাচাইয়ে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধনের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে স্বচ্ছ তদন্তের স্বর্থে দুর্নীতি দমন কমিশনের এ সংক্রান্ত তদন্ত কর্মকর্তারা কাডিয়ান পুলিশের কাছে থাকা দলিল-দস্তাবেজ হাতে পেতে দুদকের এ সংক্রান্ত তদন্ত কর্মকর্তা মীর জয়নুল আবদিন শিবলী তাঁর টিম নিয়ে কানাডায় যাওয়ার জন্য চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে জানা গেছে। কানাডায় যাওয়ার আগে যদি বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণ ঋণ দিতে পুনরায় চুক্তি করে সে ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে কানাডিয়ান পুলিশ থেকে তথ্য পেতে পারে এমন আশা নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তাদের। কারণ পুনরায় চুক্তি হলে বিশ্বব্যাংকের শর্তানুযায়ী দুদকের তদন্ত টিমের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের একটি প্যানেল কাজ করবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। এর মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৪৭ মিলিয়ন ডলার। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি মূল্যায়ন কমিটি পরামর্শক হিসেবে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করেছিল বিশ্বব্যাংকের কাছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কানাডা ও যুক্তরাজ্যের যৌথ অংশীদারিত্বের প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিন। অন্যগুলো হলোÑ যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান হালক্রো গ্রুপ ইউকে, নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান একম অ্যান্ড এজেডএল, জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি হাই পয়েন্ট রেলেন্ড। এ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের তালিকা বিশ্বব্যাংকের কাছে পৌঁছার পর তারা অভিযোগ করেন সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন পরামর্শক নিয়োগ পেতে অনিয়ম, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.