নতুন বাজেটে কৃষি খাত by মাজহারুল ইসলাম জুয়েল

জাতীয় সংসদে মহাজোট সরকারের চতুর্থ এবং দেশের ৪১তম বাজেট পাস হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায়, 'কৃষি বাংলাদেশের প্রাণ; কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে'_ এ কথা বললেও শেষ পর্যন্ত কৃষি খাতে প্রকৃত বরাদ্দ কমানোর ঘোষণাই দিলেন।


নতুন এ বাজেটে কৃষি খাতে, বিশেষ করে ফসল উপখাতে যে বরাদ্দ ও দিকনির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে, তাতে কৃষকের ফসল উৎপাদনে লোকসানমুখিতা, দুরবস্থা ও ভোগান্তির কতটুকু অবসান হবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
এ দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি এখনও কৃষিনির্ভর এবং জিডিপির প্রায় শতকরা ১৯ ভাগ কৃষি থেকে আসছে। ক্রমহ্রাসমান হলেও এখনও মোট শ্রমশক্তির ৪৬ শতাংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত। অনুমোদিত ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল এক লাখ ৯২ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এ বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে মোট বাজেটের ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ। এখানে বরাদ্দ কমেছে গত বছরের চেয়ে ০.৪০ শতাংশ; কৃষি বাজেটে বরাদ্দ কমাতে গিয়ে সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে এ খাতের উন্নয়নে। নতুন বাজেটে এ খাতে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন কৃষিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভর্তুকি ছয় হাজার কোটি টাকা । গত ২০১১-১২ সালের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, যা এ বাজেটের চেয়ে বেশি।
সামগ্রিক কৃষি বাজেটের মতোই এ খাতে দেওয়া ভর্তুকির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতে গত দেড় দশকে ভর্তুকি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলেও এ দেশে দাতাদের চাপে এর পরিমাণ দিন দিন কমছে। সিপিডির মতে, এ ভর্তুকির অর্থ কৃষি খাতের চেয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকেই বেশি সমর্থ দিচ্ছে; এতে নগর ও গ্রাম, ধনী ও গরিবের আরও অসাম্য সৃষ্টি হবে। ২০১১-১২ অর্থবছরে কৃষি খাতের মূল বাজেটেই ভর্তুকি ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; সংশোধিত বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি পাসকৃত এ বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় যেমন_ রাসায়নিক সার ও অন্যান্য কৃষি কার্যক্রমের জন্য ভর্তুকি রাখা হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ভর্তুকি কমেছে ৫০০ কোটি টাকা।
আশির দশকে মুক্তবাজারের নামে বীজ, সার ও সেচের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত করে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে সারসহ বিভিন্ন উপকরণের ওপর ভর্তুকি তুলে দেওয়া হয়। এসব কারণেই প্রতি বছর বাড়তে থাকে বিভিন্ন কৃষি উপকরণের মূল্য। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে দেশে ব্যাপক সার সংকট সৃষ্টি হওয়ায় ফের ভর্তুকির ব্যবস্থা চালু করা হয়। কৃষি খাতে ভর্তুকির ব্যবস্থা চালু হলেও কেবল রোপা আখচাষ খাতে প্রদত্ত ভর্তুকি ছাড়া এ অর্থ প্রত্যক্ষভাবে কৃষকের কাছে পেঁৗছানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। সার, বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এবং সেচযন্ত্রের মালিকরা ভর্তুকির অর্থ পেলেও প্রকৃত কৃষকের প্রত্যক্ষ তেমন কোনো উপকার হচ্ছে না।
দেশের কৃষক, কৃষিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের ওপর নির্ভর করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা। কৃষিপ্রধান এ দেশে বাজেটে কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সঠিক মূল্যের নিশ্চয়তা বিধানের দিকনির্দেশনা থাকলে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি ও কৃষি ব্যবস্থা, এমনটাই আশা করছেন দেশের কৃষক, কৃষিবিদ ও কৃষি সংশিল্গষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

সপ্রাবন্ধিক, কৃষিবিদ ও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত
কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক
 

No comments

Powered by Blogger.