প্রজন্ম ভাবনা ॥ সামাজিক অবক্ষয় এবং গণমাধ্যম by লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

অবক্ষয় শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ক্ষয়প্রাপ্তি’, সামাজিক মূল্যবোধ তথা সততা, কর্তব্য নিষ্ঠা, ধৈর্য, উদারতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃজনশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলী লোপ পাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়াকে বলে সামাজিক অবক্ষয়।


এর কারণগুলো নিম্নরূপÑ
১। সহনশীলতার অভাব : সমাজে পারস্পরিক সহনশীলতার অভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। যেমন-স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সহনশীলতার অভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
২। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অভাব : রাষ্ট্র ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে ও আইনের শাসন না থাকলে সামাজিক অবক্ষয় ঘটে।
৩। সামাজিক ভারসাম্যহীনতা : আমাদের সমাজে এক ভয়াবহ ভারসাম্যহীনতা বিরাজ করছে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাস্পরিক সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে।
৪। নগরায়ণ ও শিল্পায়ন : নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে গ্রামীণ সমাজে ভাঙ্গন ধরে। এ জন্যও মূল্যবোধের অবনতি ঘটে। বর্তমানে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের প্রসারে বস্তি জীবনের বিকাশ ঘটছে। পরিবেশেগত কারণে বস্তির শিশু-কিশোররা অনেক সময় অনৈতিক কাজ করে।
৫। দরিদ্রতা : অর্থনৈতিক বিপর্যয় বা দরিদ্রতার কারণেও সামাজিক মূল্যবোধ লোপ পাচ্ছে।
৬। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তথা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-কলহের কারণেও সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে।
৭। বেকারত্ব : বেকারত্বের কারণে অনেক সময় যুব সমাজ অন্যায় পথে ধাবিত হয়, লিপ্ত হয় চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই ইত্যাদি জঘন্য কাজে। ফলে সমাজে যুব সমাজের চরিত্রের অবক্ষয় ঘটে।
৮। দুর্নীতি : অপসংস্কৃতি ও দুর্নীতি সামাজিক অবক্ষয় ঘটাচ্ছে।
৯। অশ্লীলতা : অশ্লীলতা ও কুরুচিপূর্ণ চলচ্চিত্র ও নাটক সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য অনেকাংশে দায়ী।
১০। পেশী শক্তির প্রভাব : সমাজে পেশী শক্তির জয়জয়কার বা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্বৃত্তায়নের কারণেও সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে।
১৩। সুশাসনের অভাব : সুশাসনের অভাবেও সামাজিক অবক্ষয় ঘটে থাকে।
১৪। মাদকের আগ্রাসন : বর্তমানে আমাদের দেশে মাদকের আগ্রাসন এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, যুবক-বয়স্ক থেকে শুরু করে এখন শিশুরাও পর্যন্ত এর ছোবলে আক্রান্ত। ফলে সামাজিক অবক্ষয় দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সামাজিক অবক্ষয় রোধে গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তি জীবনে কতিপয় গুণাবলী অর্জন করা প্রয়োজন, সেগুলো হচ্ছে উদ্যোগ, উদ্যম, নিয়মানুবর্তিতা, আগ্রহ, নিষ্ঠা, অধ্যবসায়, শিষ্টাচার, সততা ও পরিশ্রম। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই উপরে উল্লেখিত গুণাবলী সুপ্তাবস্থায় থাকে। এই সুপ্ত গুণাবলী জাগ্রত করতে সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস দমন, কর্মসংস্থান তৈরি, কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন, সাহিত্য সাংস্কৃতিক উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবদান রেখে গণমাধ্যম সামাজিক অবক্ষয় রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সমাজের চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। কোথাও গণস্বার্থ পদদলিত হয়ে মুষ্টিমেয় মানুষের স্বার্থ স্বীকৃত হলে গণমাধ্যমের নির্ভীক কণ্ঠ সোচ্চার হয়ে ওঠে। গ্রামীণ জনগণের নানা সমস্যা গণমাধ্যমে প্রচারের ফলে সরকার ঐ বিষয়ে সঠিক সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে এমনকি যে কোন বিষয়ে জনগণের মতামত তৈরিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সমাজে প্রত্যেককে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে হলে তাদের মধ্যে নীতিজ্ঞান ও সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে। তারা সচেতন হলে কোনো রকম অন্যায়, কুমন্ত্রণা তাদেরকে বশীভূত করতে পারবে না। ফলে উক্ত সচেতনতা তৈরিসহ সামাজিক অবক্ষয় রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম।

ষরড়হমধহরনধনঁষ@মসধরষ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.