১৬ জুলাই মৃত্যুবার্ষিকী ॥ শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যার বিচার হয়নি ১২ বছরেও

যশোর অফিস ॥ আগামী ১৬ জুলাই যশোরের শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে জনকণ্ঠ যশোর অফিসে সাংবাদিক শামছুর রহমান সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। নির্মম এ হত্যাকা-ের ১২ বছর পার হলেও আজও বিচার হয়নি; বরং গত ৭ বছর ধরে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।


এদিকে এ দিবস উপলক্ষে যশোরের সাংবাদিক ইউনিয়ন তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসুচী গ্রহণ করেছে। আজ শনিবার প্রেসক্লাব যশোরে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণসভা। রবিবার সকালে মামলার পুনর্তদন্তের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া হবে স্মারকলিপি। সোমবার সকালে শোকর‌্যালি ও শহীদের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং প্রেসক্লাব যশোরে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এদিন মরহুমের বাসভবনে বিকেলে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। বিগত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার বর্ধিত তদন্ত করে সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়। বাদ দেয়া হয় মামলার গুরুত্বপুর্ণ সাক্ষীকে। নতুন সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের। ২০০৫ সালের জুন মাসে এই মামলার সব আসামির বিরুদ্ধে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে চার্জ গঠন হয়। এরপর ২০০৫ সালের জুলাই মাসে বাদীকে না জানিয়ে মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এই মামলার অন্যতম আসামি খুলনার সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক ঘটনার পর থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছে। খুলনার আদালতে যাওয়ার পর মামলার বাদীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয় কয়েক সাক্ষীর বিরুদ্ধেও। সে সময় আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে পুলিশ মামলার বাদী এবং কয়েক সাক্ষীর বাড়িতে অভিযান চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এ অবস্থায় বাদী শহীদ শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপীল করে বলেন, মামলার অন্যতম আসামি হিরক পলাতক রয়েছে। এই মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে তাঁর পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া সম্ভব নয়। এর প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে তার জন্য সরকারের ওপর রুল জারি করে। সরকার এর কোন জবাব দেননি। ফলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। মামলার এক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে এবং অপরজন কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু ৪ বছর আগে হার্টস্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছে।
মরহুমের পরিবার মনে করে আইনের মারপ্যাঁচে আটকে রাখা হয়েছে এই মামলার বিচার। রাষ্ট্র চাইলে বিচারের কাজটি শেষ করা যেত। প্রধানমন্ত্রী চাইলে এ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে এ ব্যাপারে তাগদা দিতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছেন একাধিকবার।

No comments

Powered by Blogger.